
প্রতিকী ফটো
মুফতি সাইফুল ইসলাম
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। জীবনের প্রতিটি ধাপেই ইসলাম তার সুমহান সৌন্দর্য নিয়ে বিস্তৃত। শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সম্পাদনের নামই ইসলাম নয়। ইসলামকে ইসলামের মানদণ্ডে মেনে চললে ব্যক্তি, পরিবার আর সমাজের সর্বত্র তৈরি হবে এক প্রশান্তিময় আবহ। কিন্তু ইসলামের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য সম্পর্কে আমরা সঠিকভাবে অবহিত নই বলে প্রাত্যহিক জীবনে এমন কিছু কাজ করে ফেলি যেগুলো অনেক বড় অপরাধ। যেগুলোর কারণে সৃষ্টি হয় সামাজিক কলহ-বিবাদ। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো পরনিন্দা তথা গিবত করা। এটি একটি মারাত্মক নিন্দনীয় কাজ ও কবিরা গুনাহ।
‘কারো কোনো ত্রুটি সম্পর্কে তার অগোচরে সমালোচনা করার নাম গিবত। প্রকৃত অর্থে সমালোচিত ব্যক্তির মধ্যে সেই ত্রুটি যদি না থাকে তাহলে সেটি তোহমত বা অপবাদ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা কি জানো গিবত কাকে বলে? লোকেরা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অধিক জ্ঞাত। তিনি বলেন, তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তা-ই তার পশ্চাতে আলোচনা করা। বলা হলো, আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কী? তিনি বলেন, তুমি যা বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তার গিবত করলে। আর তুমি যা বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৯)
আমরা জিহ্বাকে সংযত করতে পারি না বলে ক্রমাগত গুনাহের বোঝা ভারী করি। এই বাকশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই আমরা পরনিন্দা ও গিবত থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারব।
মানুষের পেছনে বিন্দু পরিমাণ নিন্দা করার কোনো অবকাশ ইসলামে নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা একে অন্যের পশ্চাতে নিন্দা (গিবত) কোরো না।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে, নয়তো চুপ থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)
আবু মুসা আশাআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! সর্বোত্তম মুসলিম কে? তিনি বলেন, ‘যার জিহ্বা এবং হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ১১)
কয়েকজন মানুষ একত্র হলেই আমরা বেশির ভাগ সময় অন্যের দোষ-ক্রটি চর্চা করতে থাকি, অথচ ক্ষেত্রবিশেষে আলোচ্য সেই দোষটা অন্যের চেয়ে নিজের মধ্যেই অধিকতর বিদ্যমান, যার প্রতি আমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।
আমরা যা বলি, যা করি, যা লিখি সবই আল্লাহ দেখেন এবং শোনেন, তাই অযথা অন্যের কর্ম নিয়ে সমালোচনা করে পরকালীন জীবনে নিজেকে জবাবদিহির সম্মুখীন কেন করব?
অতএব নিজ জবানকে নিয়ন্ত্রণ করে কারো আড়ালে তার মন্দ দিক নিয়ে সমালোচনা করা থেকে আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও মুহাদ্দিস
সূত্র: deshebideshe.com – ডেস্ক।