মহেশখালীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ গোলাগুলি ও চকরিয়ায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন :
গুলিবিদ্ধসহ আহত-৪০ আশংকাজনক -১০
মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
ত্রিমুখী সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভার নির্বাচন শেষ হয়েছে। পৃথক এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ ৪০জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশংকাজনক। চকরিয়ায় ৪২ হাজার ৩০৬ ও মহেশখালীতে ১৭ হাজার ৯৬০ ভোটারের মধ্যে নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৫ শতাংশ।
এদিকে, রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভোট গণনা শেষে বেসরকারী ফলাফলে দেখা যায়- চকরিয়ায় আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে আলমগীর চৌধুরী ২৩ হাজার ৩৫২ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নুরুল ইসলাম হায়দার পেয়েছেন ৮ হাজার ৮৪৫ ভোট। ভোটের ব্যবধান ১৪হাজার ৫০৭।
এছাড়া এসময় পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১, ২, ৩নং ওয়ার্ড থেকে রাশেদা বেগম ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড থেকে রাজিয়া সুলতানা খুকুমনি এবং ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড থেকে কামরুন্নাহার বুলু।
সাধারণ ওয়ার্ডে বেসরকারীভাবে ১নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি’র মকছুদুল হক মধু, ২নং ওয়ার্ড থেকে আওয়ামীলীগের রেজাউল করিম, ৩নং ওয়ার্ড থেকে আওয়ামীলীগের বশিরুল আইয়ুব, ৪নং ওয়ার্ড থেকে বিএনপি’র জাফর আলম কালু, ৫নং ওয়ার্ড থেকে ফোরকানুল ইসলাম তিতু, ৬নং ওয়ার্ড থেকে আওয়ামীলীগের জিয়াবুল হক, ৭নং ওয়ার্ড থেকে জামাল উদ্দিন, ৮নং ওয়ার্ড থেকে যুবলীগ নেতা মুজিবুল হক ও ৯নং ওয়ার্ড থেকে আওয়ামীলীগের নজরুল ইসলাম।
দেশের ১০টি পৌরসভার মধ্যে রবিবার কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। যথা নিয়মে সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চকরিয়া ও মহেশখালীর সব ক’টি কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মহেশখালী পৌরসভার ঘোনারপাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে আওয়ামীলীগ প্রার্থী মকছুদ মিয়া, একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সরওয়ার আজমের সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। তার জের পড়ে চারটি কেন্দ্রে। ফলে, ভোটের শেষ পর্যায়ে নয়টি কেন্দ্রের মধ্যে চারটি কেন্দ্রে ত্রিমুখী গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধসহ ৩৫জন আহত হয়। তন্মধ্যে ১০জনের অবস্থা আশংকাজনক।
আহতদের উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন আব্দু শুক্কুর (৩০), রাসেল (২০),আবদুল গফুর (৩৫), নুর হোসেন (৪০), নেছার (১৮), মাহমুদুল করিম (২২), আবু ছিদ্দিক (৩৫) ও নুরুল কবির (৪২)।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান-‘দিনের শেষ ভাগে এসে একটি কেন্দ্রের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি পুরো দিনের স্বচ্ছ নির্বাচনকেই যেন ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর পরই নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধকল্পে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত মহেশখালী পৌরসভার ৯টি ভোট কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ১৭ হাজার ৯৬০। তন্মধ্যে পুরুষ ৯৪১৭ এবং নারী ৮৫৪৩ জন।
এদিকে, চকরিয়া পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়। কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। ৬নং ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্র কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয় ও আদর্শ শিক্ষা নিকতনে দুই নারী ও দুই পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কাউন্সিলর প্রার্থী জালাল উদ্দিন ও জয়নাল আবেদীনসহ পাঁচজন আহত হয়। তাদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সকাল ১১টার ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের বাইরে এসে তিনজন কাউন্সিলর প্রার্থী যথাক্রমে- সিব্বির আহমদ, জালাল উদ্দিন ও জয়নাল আবেদীন নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন। এছাড়া ভোট গ্রহণ শেষে বিকাল ৪টার পর আমাইন্যার চর এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমাইন্যারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে একটি ব্যালেট বাক্স ছিনতাই হয়। তবে অল্পক্ষণ পর ওই বাক্স উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কেন্দ্রেটি সাতটি বুথের মধ্যে একটি বুথে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন প্রিসাইডিং অফিসার মুছলেহ উদ্দিন সিরাজি। এই কেন্দ্রে অবিশ্বাস্য ভোট প্রয়োগ হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ১নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রটিতে ভোটার রয়েছে ২২৯০ জন। বেলা দেড়টায় ভোট প্রয়োগ দেখানো হয় ২১১৫টি। অথচ পাশাপাশি ২নং ওয়ার্ডে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটেও ভোট প্রয়োগ হয় ৬০ শতাংশ।
সরজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, প্রতিটি কেন্দ্রে নজর কাড়ার মতো উপস্থিতি ছিল নারী ভোটারদের। সকাল ১০টা ২০মিনিটে চকরিয়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছলে দীর্ঘলাইন ধরে ভোট দিতে দেখা যায় নারী-পুরুষদের। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার জুয়েল দাশ বলেন, ওই সময় পর্যন্ত ২৮৬০ ভোটারের মধ্যে প্রয়োগ হয় ৮৩২ ভোট। দুপুর ১২টায় চকরিয়ার পৌর আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রিসাইডিং অফিসার কামাল হোসেন জানান, শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে।
১৯৭৭ ভোটারের মধ্যে ১০৫৭জন ভোট প্রয়োগ করেছেন ওই সময় পর্যন্ত। তবে, হুরে জন্নাত রিনা নামের এক ভোটার অভিযোগ করে বলেন, আমার দেবর জালাল উদ্দিন কাউন্সিলর প্রার্থী তাকে অপর একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা পিটিয়ে আহত করেছে।
অন্যদিকে, ভোট গণনার পর রাত পৌনে ৮টার দিকে ৮নং ওয়ার্ডের মডেল প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্র থেকে ভোট বাক্স নির্বাচন অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা বাধা সৃষ্টি করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ভোট বাক্স নিয়ে যান। এছাড়া একই সময় ২নং ওয়ার্ডে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা হয়। প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে কাউন্সিলর প্রার্থী রেজাউল করিমের দুই কর্মী নবাব মিয়া ও মোস্তাক আহমদ গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার অবনিত হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী নুরুল ইসলাম হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ভোট হয়েছে একপেশে। ধানের শীষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। এটি প্রহসনের নির্বাচন।
আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী মো.আলমগীর চৌধুরী বলেন, পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে বিএনপি’র প্রার্থী পাগলের প্রলাপ বকছেন। এবারের মতো শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমলে হয়নি। আশা করছি আমি জনগণের বিপুল ভোটের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত হবো।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও চকরিয়া পৌরসভার রিটার্ণিং অফিসার মেছবাহ উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন দুটি ঘটনার কথা শুনেছি। ভোট হয়েছে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো: মাসুদ আলম।
You must be logged in to post a comment.