উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায় বিরামহীন বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে ফের ভয়াবহ বন্যার হাতছানি। ইতোমধ্যে বানের পানিতে ফের ১৮ গ্রাম প্লাবিত হয়ে কমপক্ষে ত্রিশ হাজার লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গতবারের বন্যা আক্রান্ত এলাকার লোকজন পূর্বমেহেরনামা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৈরভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাবেকগুল্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পেকুয়া আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসায় গবাদী পশু ও মালামাল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে অশ্রয় নিতে দেখাগেছে। সরেজমিনে গিয়ে ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জানা যায়, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্বমেহেরনামা রাবারড্যাম সংলগ্ন এলাকায় পাউবোর ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মিত না হওয়ায় ও টানা বৃষ্টিতে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্বমেহেরনামা, সৈকতপাড়া, নতুনপাড়া, নন্দীরপাড়া, হরিণাফাড়ি, সিরাদিয়া, জালিয়াখালী, পূর্বমেহেরনামা, বিলহাচুড়া, বলিরপাড়া, মোরারপাড়া, উত্তরমেহেরনামা, ছৈরভাঙ্গা, লীজপাড়া, চড়াপাড়া, আলেকদিয়া, বাজারপাড়ায় বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.বাহাদুর শাহ জানিয়েছেন, তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান রাজু সমন্বয় করে হাজীর ঘোনা ব্রীজের পাশে নমীউদ্দিনের বাপের বাড়ীর পাশের ভাঙ্গা থেকে মাতামুহুরী নদীর বেড়িবাধের কাটাফাড়ি ব্রীজের দক্ষিণাংশ ও ভোলার খালের বেড়িবাধের ওপর ৫টি ভাঙ্গা সহ প্রায় ২২টি ছোট বড় ভাঙ্গা অংশ নির্মাণ করেছি। রাবারড্যামের ব্লক করা বৃহৎ অংশের মাতামুহুরীর মূল স্রোতের ভাঙ্গাটি ছাড়া এখন আর ভাঙ্গা নেই। এভাঙ্গা দিয়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে মাতামুহুরীরর পানি সরাসরি পেকুয়ায় প্রবেশ করায় ভয়াবহ বন্যার শংকায় আমরা আতংকিত উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সিরাদিয়া ও মগকাটার এদিকে বানের পানি নেমে যাওয়ার জন্যে ৩টি অংশ কেটে দেয়া হয়েছে। শিলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন জানান, তার ইউনিয়নের দোকানপাড়া, পেঠানমাতবরপাড়া, আলীচানমাতবরপাড়া, হাজিরঘোনা, সবুজপাড়া, হেদায়াতাবাদ ইতিমধ্যে পানির নীচে তলিয়ে গেছে। সহ দুই ইউনিয়নে মোট ১৮ গ্রাম প্লাবিত হয়ে কমপক্ষে ত্রিশ হাজার লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ সব এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুকুর, বসতবাড়ি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। অপরদিকে পেকুয়ার প্রধান সড়ক বানিয়ারছড়া-মগনামা সড়কে ও নদীর পানি বিপদসীমায় অবস্থান করছে। এদিকে খোজ নিয়ে জানাগেছে বানের পানির স্রোত না আসলেও পেকুয়া সদর, শিলখালী,বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের প্রায় বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া ওই গ্রামের কমপক্ষে দশ হাজার লোকজন গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে হরিণাফাড়ি গ্রামের পানিবন্ধী আমির হোছন জানান, গতবার ও বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে মওজুদ খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে গেছে। এবার ও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে এলাকাবাসীকে প্রাণে বাচানোর জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান। পেকুয়া আনোয়ারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও.আমিনুর রশিদ জানিয়েছেন, গত বন্যায় মাদ্রাসার একাডেমিক ভবণ ও প্রশাসনিক ভবণের নীচতলায় ৪ফুট পানি ওঠে প্রয়োজনীয় অনেক কাগজপত্র নষ্ট হয়েগেছে ভবনের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে ক্ষত এখনো কাটিয়ে ওঠতে পারিনি এখন আবারো বন্যার পদধ্বনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন দুশতাধিক মানুষ ও শতাধিক গরু ছাগল নিয়ে মাদ্রাসায় লোকজন আশ্রয় নিয়েছে মানবিক কারণে মাদ্রায় তাদের আশ্রয় দিতে আমরা বাধ্য। পেকুয়া মাতবরপাড়া এলাকার রহিম জানান, আগামী আমন মৌসুমে বীজতলা তৈরী করে আমন ধানের চারা রোপনের জন্য বীজ বপন করা হয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় সেই বীজ বপনের চারা পাব কিনা সন্দেহ পোষণ করছি। ২৫ জুলাই পানিবন্দী ও বন্যায় প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়াত আজিজ রাজু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফুর রশিদ খান, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ।
You must be logged in to post a comment.