সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / অপরাধ ও আইন / পোয়ামুহুরি সড়ক দিয়ে আসছে থাইল্যান্ডি গরু

পোয়ামুহুরি সড়ক দিয়ে আসছে থাইল্যান্ডি গরু

https://i0.wp.com/coxview.com/wp-content/uploads/2022/05/Cow-Rafiq-18-5-22.jpg?resize=620%2C360&ssl=1

নিজস্ব প্রতিনিধি; লামা :
পার্বত্য এলাকা আলীকদমের দুর্গম পথ অতিক্রম করে প্রচুর বিদেশি গরু আসছে দেশে। স্থানীয় গরু বাজার ইজারাদারদের রিসিটে এসব গরু বিক্রি দেখানো হয়। ১৭ মে বুধবার একদিনে ৫-৬ ট্রাক ভর্তি করে গরু পাচারের দৃশ্য চোখে পড়ে। বিক্রির রিসিটে গরুগুলো স্থানীয় উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে সে গুলো উন্নত ব্রাহামা জাতের। যা বাংলাদেশের খামারি বা কৃষক লালন পালন করেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে প্রচুর পরিমান গরু আমদানি করছে একটি চক্র। এ থাইল্যান্ডের ব্রাহামা জাতের গরু মায়ানমার হয়ে আসছে বাংলাদেশে। অবৈধ আমদানিকারকরা নিরাপদ রোড হিসেবে সীমান্তবর্তী আলীকদমকে বেছে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক গরু পাচারকারী এই সিন্ডিকেটে যুক্ত আছে কক্সবাজার-টেকনাফের একটি চক্র। বিগত দিনে শুল্ক আদায় কর্তৃপক্ষ ও সীমান্তরক্ষীদের চাপে পড়ে চোরা সিন্ডিকেটটি এখন পার্বত্য আলীকদম-পোয়ামুহুরি সড়ক পথ বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি গরু নিয়ে ওই সড়ক দিয়ে লামা-আলীকদম ফাঁসিয়াখালী রাস্তা বেয়ে মহাসড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে পৌঁছে যায় থাইল্যান্ডি গরু।

জানা যায়, এ সব গরু উজ্জ্বল সুন্দর রঙ, আকৃতিতে অনেক বড় হওয়ায় সবার নজর কাটে। ব্রাহামা জাতের গরু ১ বছরের কম সময়ে অনেক বড় আকার ধারণ করে। প্রতিটি গরু বিক্রি হয়, দুই থেকে তিন, সাড়ে তিন লাখ টাকায়। এর ফলে চোরা কারবারি মরিয়া হয়ে এই জাতের গরু আমদানি করছে। এতে প্রচুর পরিমান সরকারের শুল্ক ফাঁকিসহ দেশিয় মুদ্রা পাচার হচ্ছে বিদেশে।

অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের খামারিরা। জানা যায়, ইতিপূর্বে সরকার দেশীয় খামারিদের কথা ভেবে মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু “চোরে শুনে কি ধর্মের বাণী”। একটি চক্র সীমান্ত রক্ষী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে, অবৈধভাবে গরু আমদানি করে চলছে। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষ্যে এসব গরু দেশীয় বাজারে সরবরাহের টার্গেটে ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডের ব্রাহামা জাতের বিপুল গরু আমদানী করতেছে চোরা কারবারিরা।

পশুসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে সরকারের কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার অধীনে বেসরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে ব্রাহামা গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র মতে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অসাধু সদস্য, বাংলাদেশ ও মায়ানমার দালালদের সহযোগিতায় নদী ও পাহাড়ি পথে গরু গুলো নিয়ে আসা হচ্ছে। গত কিছু দিন ধরে লামা-আলীকদম সড়কে ট্রাকে ট্রাকে ব্রাহামা জাতের থাইল্যান্ডি গরুর বহর সবার নজরে আসে।

গত দু’দিন ধরে অনুসন্ধানে চালিয়ে জানা গেছে, মায়নমার সীমান্তের দূর্গম পাহাড় আর আলীকদম পোয়ামুহুরি সড়ক এর আশপাশ এলাকাটি গরু পাচারকারী দেশি-বিদেশি চোরাচালান কারবারীদের নিরাপদ অভয়ারণ্য। সেখানকার জনমানবহীন গহীন অরণ্যে দু’দেশের উপজাতিদের ব্যবহার করে এই চক্রটি তাদের নির্ঝঞ্ঝাট কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, প্রতিদিন পোয়ামুহুরি সড়কের ১০ কি: পয়েন্টে রীতিমত বিদেশি গরুর হাট বসে। প্রতেক্ষদর্শীরা জানায়, গত চার দিন আগে ৯০ টি ব্রাহামা জাতের গরু বিক্রি হয়েছে মাত্র এক কোটি টাকায়। যার স্থানীয় বাজার মূল্য আড়াই থেকে তিন কোটি হতে পারে। স্থানীয়দের সন্দেহ, এইসব গরু ক্রয় করতে বিগত এক বছরে নিশ্চয় কয়েক’শ কোটি টাকা অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে একটি চক্র।

লামা-আলীকদমের কয়েকজন খামারি, ডেইরি খাতে তাদের বিনিয়োগ ও বাস্তবতা দেখে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, অবৈধ পশু আমদানিকারীদের কারণে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তারা। এসব খামারিদের সারা বছরের স্বপ্ন কোরবানির হাট। কিন্তু গরু চোরা কারবারিরা বিদেশী গরু এনে দেশীয় মার্কেট সয়লাব করে দিয়ে খামারীদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। এর ফলে নিরুৎসাহিত হয়ে ক্রমেই দেশের ডেইরি শিল্প ধ্বংস হয়ে, পথে বসার অবস্থা এখন খামারিদের। কি করে এইসব গরু বাংলাদেশে আসছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান খামারিরা। মায়ানমার সীমান্তের আলীকদম সড়ক হয়ে অবৈধভাবে দেশে আসা গরুর পরিসংখ্যান জানা যায়নি কোনো মহল থেকে। তবে স্থানীয়রা অনুমান ভিত্তিক জানান, ইতিমধ্যে কয়েক হাজার গরু এই পথ দিয়ে এসেছে।

স্থানীয় এক নেতা জানান, এলাকার ৮০% মানুষ এখন গরু ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে। যারা এর আগে গাছ বাঁশের ব্যবসা করতেন, তারা সবাই এখন বিদেশি গরু কিনছেন ও বিক্রি করছেন।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি সাংবাদিককে জানান, এই বিষয়টি তিনি জানেন না। আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুবা ইসলাম সাংবাদিককে জানান, এ ব্যপারে তিনি সপ্তাহ খানেক আগে থেকে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে জেনেছে, কিন্তু চক্রটিকে ধরা যাচ্ছেনা। তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে ধরার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু পাহাড়ি এলাকা হেতু পাচারকারীরা ইউএনওর উপস্থিতি জেনে জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে। তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে সংশ্লীষ্টদের নিয়ে আজই জরুরী সভায় বসা হবে। পরের পর্বে থাকবে স্থানীয় কারা এই সব গরু পাচারে জড়িত, সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁও যুব ঐক্য পরিবারের সাথে পোকখালী যুব উন্নয়ন সংগঠনের মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও : কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার অনন্য সামাজিক সংগঠন ঈদগাঁও যুব ঐক্য পরিবারের ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/