বান্দরবান-থানচি সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও রাস্তার পাশ ভেঙে যাওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে বান্দরবানের সঙ্গে থানচি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছরে টানা বৃষ্টিপাতে সড়কটির বেশ কয়েকটি স্থানের মাটি সরে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সড়কটি সংস্কার না করলে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এলাকাবাসী জানান, গত বছরে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বান্দরবান-থানচি সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে মাটি সরে যায়। সংস্কারের জন্য গত নভেম্বরে কাজটি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্থানান্তর করা হয়। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখনও সংস্কারের পদক্ষেপ না নেয়ায় বান্দরবান সদরের সঙ্গে যেকোনো মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে এই সড়কটি। সেনাবাহিনী এবং সড়ক বিভাগের টানাপোড়েনের কারণে সড়কটি মেরামতের জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান থেকে থানছি পর্যন্ত আঁকাবাঁকা সড়কটির ১৮টি স্থানে প্রায় ৮-১০ ফুট পর্যন্ত দেবে গেছে। এর মধ্যে সতেরো মাইল, পুড়াবাংলা, গ্যালেঙ্গা রাস্তার মাথা, কার্পোপাড়া, নীলগিরি,জীবন নগর থেকে বলিপাড়া যাওয়ার পথে কলাই পাড়া নামক স্থানে ও বলিপাড়া হয়ে সাখয়পাড়া পর্যন্ত সড়কের পাশ থেকে মাটি সরে ওয়াল ও রাস্তা ভাঙার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক অনুপম মারমা জানান, এই সড়কে বর্তমানে স্থানীয় ও দেশি বিদেশি পর্যটকসহ দৈনিক পাঁচ শতাধিক লোক যাতায়াত করে। কিন্তু বর্তমানে সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় পর্যটদের সংখ্যা কমে গেছে। পর্যটকদের কেন্দ্র করে যে বাণিজ্য হতো তা এখন একেবারে নাজুক।
থানছি বাজার পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, বান্দরবান থেকে থানচি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ভেঙে যানবাহন চলাচলে খুবই সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের যাতায়াত ছাড়াও খাদ্য সামগ্রী, জুমিয়াদের উৎপাদিত ফসল, কৃষিপণ্য, মালামাল ট্রাকযোগে আনতে হয়। সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ট্রাক ও জিপের ভাড়া দ্ধিগুন হয়ে গেছে। ফলে ক্রেতারা নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আগামী বর্ষায় আগে সড়কটি মেরামত করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
বলিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যসাউ মারমা জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সম্বনয়হীনতার কারণে সড়কটি ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্য হ্লা চিং মারমা জানান, মাসিক সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক, পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারে অনেকবার বলেছেন তিনি। কিন্তু এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আগামী বর্ষার আগে যদি পুনরায় সড়ক মেরামতের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তানান্তর করা না হয় তাহলে সড়কটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ফলে বাদ্নরবান সদরের সঙ্গে থানচি উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন জানান, গত জুন-জুলাই মাসে ভারী বৃষ্টির কারণে সড়কটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় এক মাস ধরে বান্দরবানের সঙ্গে থানচির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি প্রয়োজনীয় প্রদেক্ষেপ গ্রহণ করায় সড়কটি চালু হয়। তবে স্থায়ীভাবে যদি সড়কটি সংস্কার করা না হয় তাহলে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।
তিনি আরও জানান, তবে এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আগামী বর্ষা মওসুমের আগেই সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তারা জানিয়েছে।
থানচি ১৬ ইসিবির মেজর হুমায়ুন কবির জানান, সড়কটি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ জানান, গত বছরের নভেম্বরে সড়কটি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। তবে সড়কটি মেরামতের জন্য পুনরায় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন তাই সংস্কারের ব্যপারে কিছুই বলতে পারছেন না তিনি।
সূত্র: দেশেবিদেশেডটকম,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.