সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / বেড়িবাঁধ বিলীন আশ্রয়হীন ধলঘাটাবাসি

বেড়িবাঁধ বিলীন আশ্রয়হীন ধলঘাটাবাসি

kazal 20.06.16 news 2pic (1)

শহীদুল ইসলাম কাজল; মহেশখালী :

বেড়িবাঁধ বিলীন হওয়ায় বিগত চার বছর থেকে অরক্ষিত মহেশখালীর উপদ্বীপ ধলঘাটা। সর্বশেষ রোয়ানোর আঘাতে লন্ডভন্ড হওয়ায় বেড়িবাঁধের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া দায়। বসতবাড়ি আর বঙ্গোপসাগর একাকার হয়ে গেছে ধলঘাটায়। তাই এ মুহূর্তে গৃহহীন ধলঘাটাবাসি তাদের আশ্রয়ের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছেনা। এতোদিন বেড়িবাঁধ না থাকলেও প্রধান সড়কটি কোন রকমভাবে রক্ষা করেছিল কয়েক হাজার পরিবার। ৯১ সালের প্রলয়ংখরী ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে টেকঁসই বেড়িবাঁধ না হওয়ায় ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে দ্বীপের আয়াতন। বিগত কয়েক বছর থেকে বর্ষাকালে প্রতি মুহূর্ত অজানা আতংকে ঝুঁকির মধ্যে দিনাতিপাত করে আসা বঞ্চিত ধলঘাটাবাসির শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানো। গৃহহীন হয়ে পড়েন বৃহত্ জনগোষ্ঠি। সব হারানো ধলঘাটার অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিলেও মানবেতর জীবন যাপন করে যাচ্ছেন। এখনো সহায় সম্বলহীন কিছু পরিবার জীবনের মায়া ছেড়ে ধলঘাটায় যাযাবরের মতো স্থান পরিবর্তন করে অবস্থান করলেও খাদ্য ও পানীয় সংকট প্রকট আকার ধারন করায় অনাহারে দিনাতিপাত করে যাচ্ছেন। রোয়ানোর আঘাতে প্রাণহানী না ঘটলেও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ধলঘাটাবাসির।

জীবিকার প্রধান উত্স লবণ চাষ শেষ হলেও সংরক্ষনের আগমুহূর্তে রোয়ানোর তান্ডবে পানি হয়ে যায় উত্পাদিত লবণ। এছড়া চিংড়ি চাষে কয়েক কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ভেস্তে যায় রোয়ানোর তান্ডব লীলায়। স্থানীয়দের অভিযোগ-অরক্ষিত ধলঘাটায় দীর্ঘদিন জানমালের ঝুঁকিতে দিনাতিপাত করলেও টেকঁসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা। অবস্থা দেখলে মনে হয় যেন অভিভাবক বঞ্চিত ধলঘাটাবাসি।

অনেকেই জানান, জন প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হওয়ার পর ভূলে যায় অবহেলিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা। উল্টো নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের অন্যতম ঝুকিপূর্ণ উপদ্বীপ ধলঘাটার প্রায় পচিশ হাজার মানুষ দীর্ঘদিন থেকে ধুকে ধুকে মরছে একটি মানসম্মত বেড়িবাঁধের জন্য। টেকঁসই বেড়িবাঁধ না থাকায় ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল হানা দেয়া স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে মূহূর্তেই লন্ডভন্ড করে দেয় উপকূলবাসির সাজাঁনো সংসার। কোটি কোটি টাকার সস্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। এখনো টেকঁসই বেড়িবাঁধ নির্মিত না হওয়ায় চৌদ্দ পূরুষের বসত ভিটার মায়া ছেড়ে দিয়েছেন ধলঘাটাবাসি।

প্রতি বছরই ২৯ এপ্রিলের পূর্বে সংবাদকর্মীরা গেলে আক্ষেপের সাথে কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে থাকেন আর কত ছবি উঠাবেন? বলেন অনেক দুঃক্ষ কষ্ট ও অসহায়ত্বের কথা। কিন্তু কে শুনে কার কথা, এদের শান্তনা দেবে কে? একের পর এক সরকার পরিবর্তন হয়। হয়নি উপকূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সরজমিনে না গেলে বুঝার কোন উপায় নেই, আশ্রয়হীন দ্বীপবাসি কতটা ব্যাথিত। তাদের চেহেরায় ভর করে আছে সহায় সম্বল, ভিটে মাটি ও স্বজন হারানোর চিত্র। ১৯৯১ সালের পর লন্ডভন্ড বেড়িবাঁধের সংস্কার, পূণঃনির্মাণের জন্য দফায় দফায় কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারী আমলা, ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিদের লুটপাটের ফলে নির্মিত হয়নি উপকূলবাসির প্রাণের দাবী টেকঁসই বেড়িবাঁধ। তাই এখনো উদ্বাস্তুর মত ঝুপড়ি বেঁধে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে শত শত জেলে পরিবার। কয়েক বার দায়সারা ভাবে বেড়িবাঁধ নির্মিত হওয়ায় ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মূহূর্তেই বিলীন হয়ে পড়েন। বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট করে নামমাত্র বেড়িবাঁধ নির্মিত হওয়ায় একদিকে ঝুকিতে ধলঘাটাবাসি অন্যদিকে বেড়িঁবাধ নির্মাণের নামে অপচয় হয়েছে কোটি কোটি টাকা।

সরজমিনে দেখা যায়, ধলঘাটা দ্বীপের পশ্চিমাংশের নির্মিত বেড়িবাঁধের প্রায় ৩ কিলোমিটার সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও দক্ষিন পূর্বাংশের বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকায় বর্ষা মৌসুমে জনবসতি ও চিংড়িঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে বর্তমানে অনেকটা ঝুকিতে লবণ চাষ শেষ হলেও বেড়িঁবাধ না হওয়ায় মারাত্মক ঝুকিতে কয়েক কোটি টাকার চিংড়ি চাষ। সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন কিনা জানাতে চাইলে পাউবো (কক্সবাজার)‘র নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সবিবুর রহমান প্রতিবারের মতো আশার বাণী শুনান। তিনি জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ৫০ কোটি টাকার প্রাথমিক পরিকল্পনা পাঠানো প্রেক্ষিতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে। যা দিয়ে এক কিলোমিটার মত বেড়িবাঁধের কাজ করা যাবে। ধলঘাটার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ চেয়ে কর্তৃপক্ষকে চাহিদা পত্র প্রেরণ করেছি। কিন্তু প্র্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাচ্ছিনা। যার কারণে অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়ে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা।

ধলঘাটার চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান-দীর্ঘদিন থেকে অরক্ষিত ধলঘাটার বেড়িঁবাধ নির্মানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। শিক্ষা, চিকিত্সা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সর্বোপরি আধুনিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত ধলঘাটাবাসি। তবু দ্বীপবাসির কোন দুঃখ নেই, নেই কোন উচ্চ বিলাসি আকাঙ্খা। তাদের চাওয়া পাওয়া, দাবী শুধু একটাই বাঁচার জন্য চাই টেকঁসই বেড়িবাঁধ।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁও বাজারে প্রতিপক্ষের হামলায় এবার মাথা ফাটলো যুবকের

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও বাজারে এবার প্রতিপক্ষের হামলায় এক যুবকের মাথা ফাটল। তাকে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/