সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / আজ শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুই বছর : চোখে ভাসে শুধু ফেলে আসা দিনগুলি

আজ শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুই বছর : চোখে ভাসে শুধু ফেলে আসা দিনগুলি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ছোট্ট ঘরে দশ-বারো জনের বসবাস।

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাচাঁতে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। আজ রোহিঙ্গাদের দুই বছর পূর্ণ হলো। দুই বছর ধরে জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোর সীমিত পরিসর আর অস্থায়ী তাঁবুতে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। সেই সময়ে হেলিকপ্টার থেকে দাহ্য পদার্থ ফেলেছে মিয়ানমার সেনারা। মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে অনেকে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশে।

রোহিঙ্গা নারী হাসিনা বেগম বয়স ৩০। বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মিয়ানমারের বুরাঙ্গাপাড়া থেকে। লম্বা বিল পাড়ি দিয়ে খেয়ে না খেয়ে বৃষ্টিতে ভেজা কর্দমাক্ত শরীর নিয়ে পাঁচ দিন হেঁটে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ২০১৭ সালে। পড়শি একজনের সহায়তায় অনেক কস্টে আসেন। নিজের চোখের সামনে বার্মিজ আর্মিদের গুলিতে স্বামী রহমত উল্লাহর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। স্বামী হারা পাঁচ শিশু সন্তানের মধ্যে সায়মাকে মিয়ানমারের মিলিটারি আছড়ে মেরে হত্যা করতে দেখেন চোখের সামনে। কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আঁর আদরের মাইয়া-জামাই মারি ফেলাইয়ে। এ হতা মনত পইল্লে মনরে বুঝাই ন পারির।

হাসিনা বেগম জানান, তার চোখের সামনে স্বামীসহ অনেককে গুলি করে হত্যা করতে দেখেছেন। আদরের মেয়ে সায়মাকেও মেরে ফেলেছে। বুরাইঙ্গা গ্রাম জ্বালানোর পর কোনোমতে পালিয়ে আসেন তিনি।

শুধু হাসিনা বেগমই নন, তার মতো আরও অনেকেই হারিয়েছেন স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের। বার্মিজ আর্মি ছাড়াও বিজিপি, নাসাকা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সেই সময়ে প্রাণভয়ে টেকনাফের লম্বা বিল, উখিয়ার আন্জুমানপাড়াসহ অনেকেই সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে যারা ফিরছেন, তাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ, ক্ষুধার্ত ও জীর্ণশীর্ণ চেহারায় বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলিতে অবস্থান নিয়েছেন। গত দুই বছরে তাদের সেই অবস্থা এখন আর নেই।

বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর মধ্যে জনবহুল অংশগুলোর জনপ্রতি ১০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকরা বসবাস করছে। যদিও আন্তর্জাতিক আদর্শ অনুসারে জনপ্রতি ন্যুনতম ৩০ বর্গফুট জায়গার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি , ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস আ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ অন্যান্য সহযোগীর সঙ্গে সমন্বয় করে রোহিঙ্গাদের আবাসনের মানোন্নয়ন এবং দুর্যোগ ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ বাসস্থান তৈরির লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে তাঁবুতে বসবাসকারীরা ঐচ্ছিকভাবে এসব উন্নত এবং নিরাপদ বাসস্থানে বসবাস করার সুযোগ পাবেন।

এদিকে গত দুই বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করাতে না পারায় এবং রোহিঙ্গাদের সহিংস আচরণে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ব্যাপক আয়োজনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্বিতীয়বারের মতো ভেস্তে যাবার পর হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্থানীয়রা। এর পেছনে সরকারের কুটনৈতিক ব্যর্থতার অভিযোগ তাদের। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার নেতিবাচক প্রচারণাকেও দুষছেন। অবশ্য উন্নয়ন সংস্থাগুলো এই অভিযোগ মানতে নারাজ।

গেলো বছরের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের নিজদেশে ফেরত নেবার কথা জানিয়েছিলো মিয়ানমার। কিন্তু সেখানে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় সেবার কোনো রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে যেতে রাজি হয়নি।

নয় মাসের বেশি সময় পর আবারও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ৩৫৪০ জনের তালিকা দেয় মিয়ানমার। এবারো ভেস্তে গেছে সেই উদ্যোগ। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার শর্তের তালিকা ইতোমধ্যে আরো বড় ও সুনির্দিষ্ট হয়েছে। এসব শর্তের একটিও বাংলাদেশের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। আর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এভাবে ভেস্তে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক সনজিত ধর বলেন, অভিযোগ উঠেছে রোহিঙ্গাদের এমন অনড় অবস্থানের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে ক্যাম্পে সেবা কার্যক্রম চালানো উন্নয়ন সংস্থাগুলো। প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত নেতিবাচক প্রচারণার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নানামুখী দাবি-দাওয়া উত্থাপনে উৎসাহী করছে তারা। যার ফলে প্রত্যাবাসনের সামান্য সম্ভাবনাও অংকুরে নষ্ট হচ্ছে।

তবে এই ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে উন্নয়ন সংস্থার ফোরামগুলো।

এদিকে স্থানীয়া আরও বলছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর আগে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি জরুরি কুটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/06/Rohingya-Camp-coxs-bazar-8.jpg

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারও গোলাগুলিত : নিহত ১

নিজস্ব প্রতিনিধি; উখিয়া : কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারও দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/