হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
ভোটকেন্দ্র দখল, ভোটারদের ভোট দিতে বাধা, ভোটকেন্দ্রে বহিরাগতদের ব্যাপক অনুপ্রবেশসহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় শেষ হয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। কিন্তু মানবতার শহর উখিয়ায় তার ব্যতিক্রম। বড় ধরনের কোন প্রকার সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
১১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত উখিয়ায় পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এলাকার সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন সুন্দর পরিবেশে ভোট দিতে পেরে তারা খুশি। অনেক দিন পর উখিয়ায় ইতিহাস রচিত হলো।
আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এবারই প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরেছেন বলে অনেকেই পুলকিত মনে জানিয়েছেন।
সকাল থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের ফলে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। দুপুরের পর থেকে সুন্দর পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন জালিয়া পালং ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। সোনার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট নিচ্ছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ ভোটাররা। উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে মহিলারা ভোট দিতে পেরেছেন। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহনে ধীরগতিতে ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রাজাপালং ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ভোটার সরওয়ার আলম শাহীন বলেন, দীর্ঘদিন পর উৎসবের আমেজে উখিয়ায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নারী ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। দরগাহবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান ও র্যাবের দফায় দফায় লাঠিচার্জ করেছেন বলে জানান, গফুর মিয়া চৌধুরী।
এদিকে মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, হলদিয়ার নলবনিয়া কেন্দ্রে পরিকল্পিতভাবে ২টি ব্যালট বক্স ছিনতাই হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তদমধ্যে ১টি উদ্ধার হলেও আরেকটি না পাওয়ায় ভোট গ্রহণ স্থগিত বলে জানান।
উখিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আলম ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে কিছু দুর্বৃত্ত নাশকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তিনি তাদের বাধা দেন। এতে তারা ভাইস চেয়ারম্যানকে মারাত্নকভাবে আহত করেন বলে জানান মোহাম্মদ হোসাইন মারুফ। বহুল আলোচিত রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে নৌকা প্রতীকের নুরুল হুদার পক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের নুরুল কবির চৌধুরীকে লাথি মেরে পেট ফাড়ি ফেলাইয়ম বলে যে হুমকি দিয়েছিলেন তাতে ভোটাররা শঙ্কিত ছিল। ১১ নভেম্বর ভোটের দিন থিমছড়ি কেন্দ্রে সামনা সামনি দেখা হলে একজন বর্তমান চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী ও অপরজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল কবির চৌধুরী দুজনই হাসি-মুখে কথা বলেন এবং ভোটাররা দুজনকে ভাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন। পরে নৌকা প্রতীকের নুরুল হুদার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল কবির চৌধুরীর কেন্দ্রে দেখা হয়। হাজারো ভোটারের সামনে তারা একে অপরের সাথে কোলাকোলি করেন। এমন দৃশ্য দেখে সবাই খুশি।
পালংখালী ইউনিয়নের তেলখোলা ৬নং কেন্দ্রে মিমাং প্রো চাকমা (৩০) রঙকিবালা চাকমা (৩৬) সুকিলশা চাকমা ( ২৬) বলেন, আমরা সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। অবশেষে ভোট দিতে পেরে আমরা খুশি। বালুখালী আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ৯০ বছরের বৃদ্ধা হাজি আবুল হোসেন বলেন, নিজেও ভোট দিয়েছি। অন্যান্যদের শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে দেখে ভালো লাগছে।
পালংখালী ইউনিয়নের ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষ ভূমিকা সকল প্রার্থীসহ ভোটারদের মন জয় করেছে। প্রতি কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তার জন্য মাঠে ছিলেন পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এর মধ্যে বিজিবি, পুলিশ, র্যাবও আনসার বাহিনীর সদস্যরা কঠোর ও নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন।
এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বিজিবির টহল টিম সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, নির্বাচন অবশ্যই সকলের সহযোগীতায় উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটারদের মধ্যে উৎসবের কমতি ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়া।
You must be logged in to post a comment.