সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ভ্রমণ ও পর্যটন / করোনায় জৌলুস ফিরেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক

করোনায় জৌলুস ফিরেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক

মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
করোনা মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে এলেও প্রকৃতি আর প্রাণীদের জন্য এসেছে আর্শিবাদ স্বরুপ। দর্শনার্থীদের পদচারণা না থাকায় দেশের প্রথম প্রতিষ্টিত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এখন নবরুপে সেজে উঠেছে। হেসে-খেলে অবাধে বিচরণ করছে নানাজাতের পাখি ও বন্যপ্রাণীর দল।

জানা গেছে, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের পর থেকে অর্থাৎ চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে দর্শীনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। যার কারণে কোন দর্শনার্থী বা সাধারণ মানুষ ডুকতে পারছেনা পার্কের ভেতর। আর এ কারণেই পার্কটি আগের স্বরুপে ফিরে এসেছে। গাছে গাছে কিচিরমিচির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে পার্কের পরিবেশ। বন্যপ্রাণীরা খেলছে আপন মনে। যেন স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।

করোনা ভাইরাসের কারণে পার্কটিতে দর্শনার্থীদের চলাফেরা বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীরা এখানে নিরাপদ আবাসস্থল মনে করছে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এখন যেকোনো বন্যপ্রাণীর জন্য উপযুক্ত বলে মনে করছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। বন্য প্রাণীদের জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত আবাসস্থল হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পার্কের ডুকা মাত্রই দেখা মিলবে একটি সুন্দর বাগানের। এই বাগানের ফাঁকে ফাঁকে পাথর আর সিমেন্ট দিয়ে তৈরী করা হয়েছে বাঘ-সিংহ, হরিণসহ নানা প্রাণীর চিত্রকর্ম। বাগানে ফুটেছে নানা প্রজাতির ফুল। পরিচ্ছন্ন চারিপাশ। বিশাল আকৃতির গাছে গাছে এসেছে নতুন পত্রপুষ্প। সবুজে ভরে গেছে চারিদিক।

ময়ুর বেষ্টনিতে ময়ুরের দল আপন মনে খেলা করছে। মাঝে মাঝে বানরের দলও তাদের সাথে খেলায় সামিল হচ্ছে। গাছে গাছে কাঠবিড়ালি ছুটাছুটি করছে। লেকে স্বচ্ছ প্রাণীর ধারা বয়ে যাচ্ছে একপাশ থেকে অন্য পাশে। লেকের পানির ছনছন শব্দ মনকে এনে দিবে প্রশান্তি। আর সেই লেকে আপন মনে সাঁতার কাটছে একদল বক পাখি। ভল্লুকের বেষ্টনিতে ভল্লুকের দল মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানুষের একটু শব্দ শুনলেই বনের ভিতর থেকে উকি দিচ্ছে হরিণের দল। আর জেব্রাদেরতো দেখা মিলাই মুশকিল! শুধুমাত্র খাবারের সময় ছাড়া তাদের দেখা মেলা না। জেব্রার দল পার্কের তাদের জন্য নির্ধারিত বেষ্টনীতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আপন মনে।

বাঘের বেষ্টনিতে শুয়ে শুয়ে দিন কাটছে বাঘ আর সিংহের। নেই তাদের ঢিল ছুড়ে মারার ছোট্ট শিশুর দল। তাই অনেকটা শ্রান্তভাবে নিজের শরীর এলিয়ে দিয়ে কাতর ঘুমে আচ্ছন্ন রয়েছে। আর জলহস্তীর দলতো পানি থেকে উঠতেই চাচ্ছেনা। বর্ষার জলে টুইটুম্বর হয়ে উঠেছে জলহস্তীর বিশাল লেক। স্বচ্ছ জল থেকে উঠতেই চাচ্ছেনা জলহস্তী। এক কথায় বলতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক পাখির কলকাকলি ও বন্যপ্রাণীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়ে উঠেছে।

পার্কে নিয়োজিত কর্মকর্তাচারীদের তেমন কোন কাজও নেই। বসে বসে অবসর সময় পার করছে। শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীদের দৈনিক তিন থেকে চারবার করে খাবার সরবরাহ করা। আর মাঝে মাঝে আর কিছু কর্মী প্রাণীদের দেখবাল করতে যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের এক কর্মকর্তা মিন্টু সেন। পার্কের বিভিন্ন প্রাণীর বেষ্টনী ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলো এই প্রতিবেদককে। এসময় পার্কের কিছু কুটিনাটি বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, আমি প্রায় ৮-১০ বছর ধরে এই পার্কে কর্মরত। এতো বছরের মধ্যে পার্কের এমন সুন্দর পরিবেশ কখনো দেখিনি। নেই মানুষের কোন কোলাহল। এখন এতো ভালো লাগে আমার ডিউটি না থাকলেও পার্ক ঘুরে ঘুরে দেখি। পার্কের গাছগাছালি আর প্রাণীগুলো যেন আমার পরিবারের অংশ হয়ে গেছে।

পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাদের অভিমত, বছরে অন্তত ২-৩ মাস পার্ক বন্ধ রাখা দরকার। এতে পার্কের যেমন সৌন্দর্য্য ফিরে আসবে তেমনি প্রাণীকুলও তাদের স্বমহিমা ফিরে পাবে। মানুষ যেমন দিনরাত পরিশ্রম করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বিনোদনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছুটে যায় তেমনি এসব প্রাণীদেরও মাঝে মাঝে ছুটি দেয়া প্রয়োজন।

তারা আরো বলেন, করোনা মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে আসলেও আমরা মনে করি প্রকৃতি আর প্রাণীদের জন্য আর্শিবাদ হয়ে এসেছে।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ইনচার্জ ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে গত কয়েক মাস ধরে সাফারি পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকায় প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে তার জৌলুস। পাশাপাশি প্রাণীকুলও মনের আনন্দে ছুটে বেড়াচ্ছে। প্রাণীকুলের আনাগোনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝে মাঝে প্রকৃতিরও যে বিশ্রামের প্রয়োজন তা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই বন্ধে পার্কে বেশ পরিবর্তনও আনা হচ্ছে। নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে পার্ককে। পার্কের মিউজিয়ামে বেশ কিছু ভাস্কর্য প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স এর সৌন্দর্য হাতছানি দিচ্ছে, #https://coxview.com/tourism-lama-mirinja-rafiq-20-09-2023-00/

মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স এর সৌন্দর্য হাতছানি দিচ্ছে

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান গুলোর অন্যতম বান্দরবানের লামার ‘মিরিঞ্জা ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/