সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ইফতার

ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ইফতার

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইফতারের প্রধান আয়োজন শরবতের দোকান।

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
মানবতার শহর কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বজনহারা অসহায় মানুষের ইফতার আগের বছরের চেয়ে ভাল হলেও চোখের পানিতে এখনো কাঁদে তাদের মন।বালুখালী ময়নাঘোনা ক্যাম্প নং ১১ এর বাসিন্দা চল্লিশ বছরের রোহিঙ্গা জাহেদুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত মিয়ানমারে আরাম আয়েশে ছিলাম। সেখানে পবিত্র রমজান মাসে আমরা ছোলা, লেবুর শরবত ও সেমাই দিয়ে ইফতার করতাম।

২৫ আগস্ট থেকে মুসলিম অধ্যুষিত মংডু রাখাইন রাজ্যে সেদেশের সেনাবাহিনীর তান্ডবে মুসলিম নারী ও মেয়েদের ধর্ষণ পুরুষদের গুলি করে ও জবাই করে হত্যা, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়াসহ নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আমরা রোহিঙ্গা মুসলমানেরা স্বাধীন সার্বভৌম শান্তির দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে গত রমজানে আমাদের অনেক রোহিঙ্গা ভাইদের শুধুমাত্র পানি দিয়ে ইফতার করতে হয়েছিল। এখন সেই অভাব রোহিঙ্গাদের মাঝে নেই। রোহিঙ্গারা তাদের ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দোকান দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

তাছাড়া ডাব্লিউ এফপি তাদের ই ভাউচার প্রোগ্রামের মাধ্যমে সকল রোহিঙ্গাদের রমজানের ইফতার সামগ্রী ছোলা, তেল, ডাল, সেমাই, পেয়াজ-রসুন চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করছেন। এ ধরনের সাহায্য সহযোগীতার ফলে রোহিঙ্গারা আগের অবস্থানে নেই। তারা বিভিন্নভাবে স্বাবলম্বী হতে চলেছে। তাই তারা এবারের রমজানের ইফতার তাদের ইচ্ছামতো করতে পারছেন বলে একাধিক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন। নাচ্ছিডং এলাকার ২১ বছরের ইয়াছমিন মিজ্জিরিপাড়ার জুলেখা (২৫) সানজিদা বেগম (২৯) ও মায়েশা জানান, তারা প্রত্যেকে তাদের মাকে হারিয়েছেন। মিয়ানমার সেনারা তাদের মাকে মির্মমভাবে হত্যা করেছে। প্রতিবছর রমজানের রোজা আসলে ইফতারের সময়ে মাকে বিষন মনে পড়ে। আমরা এমন এক অভাগা জাতি যে মাতৃভূমি ছেড়ে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে হারিয়ে বুকে পাথর বেঁধে দিনাতিপাত করছি। এরপরও এখানে আমরা ভালো আছি।মিয়ানমারের জালিম সরকারের অত্যাচার থেকে বাচিঁয়ে নিজেদেরকে নতুন করে তৈরি করছি। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ইফতারি কিনতে আসা রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ নুর বলেন, এখানে মিয়ানমারের বিভিন্ন পণ্য দিয়ে পাঁচ মিশালি শরবত পাওয়া যায়। আমরা ক্যাম্পে মা-বোনদের সাথে ইফতার করি। মাঝে মধ্যে দোকানে বন্ধুদের সাথে নিয়ে ইফতার করি। এখানে আমরা অনেক ভাল আছি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয়রা যেমন বিভিন্ন দোকান থেকে তাদের পছন্দের পণ্য সামগ্রী ক্রয় করে থাকে ঠিক তেমনিভাবে রোহিঙ্গারাও ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দোকান থেকে তাদের দেশীয় পণ্য সামগ্রীসহ বিভিন্ন নিত্য পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করছেন।রোহিঙ্গাদের তৈরি ইফতারের মজাদার খাবার নিয়ে হাজির হয়েছে। প্রতিদিন দুপুর ২ টা থেকে মাগরিব পর্যন্ত রোজাদারদের সেবায় ব্যবসায়ীরা এই আয়োজন করেছে। এখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক সাথে ইফতার করছেন রোহিঙ্গারা।

ক্যাম্পে তাদের মাঝে রয়েছে এক অনাবিল আনন্দ ও বিশ্বাস। রোজাদারদের কাছে ইফতারের আগ মুহুর্তে আরও একটু আনন্দময় করতে এক সাথে ইফতারের জুড়ি নেই।পাশাপাশি তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা স্মৃতি মনকে কাঁদায়। এরপরও জীবন সংগ্রাম থেমে নেই রোহিঙ্গাদের।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/04/Thermometer-Hit-Hot.jpg

বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, রাতে বাড়বে গরম

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকাসহ দেশের কোনো বিভাগেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/