সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / চাকরিচ্যুত না করার শর্তে রবি-এয়ারটেল একীভূত হতে পারবে

চাকরিচ্যুত না করার শর্তে রবি-এয়ারটেল একীভূত হতে পারবে

চাকরিচ্যুত না করার শর্তে রবি-এয়ারটেল একীভূত হতে পারবে

টেলকো ইন্ডাস্ট্রিতে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু রবি-এয়ারটেল একীভূত হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে বিটিআরসি। বুধবার কমিশনের ১৮৯তম বৈঠকে রবি বা এয়ারটেলে কোন কর্মকর্তার চাকরিচ্যুত না করাসহ মোট ৬টি শর্তে প্রাথমিক এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিটিআরসির সচিব সারওয়ার আলম। শিগগির এটি সুপারিশসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অপারেটর দুটির একীভূত হওয়ার এ প্রক্রিয়াটি কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর ২২৮ ও ২২৯ ধারা অনুযায়ী সম্পন্ন হবে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে কোম্পানি আইনের ২২৮ ধারা অনুযায়ী শেয়ারসংক্রান্ত বিষয়টি হাইকোর্টের নির্দেশনার মাধ্যমে সমাধান হলে চূড়ান্তভাবে একীভূত হবে রবি-এয়ারটেল।
বিটিআরসির বৈঠকে রবি ও এয়ারটেলের পক্ষ থেকে দুটি কম্পানি একীভূত হওয়ার আবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। এরপর কমিশন সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনজন কমিশনার এবং দুজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দুটি কম্পানি একীভূত হওয়ার ব্যাপারে সুবিধা ও টেলিযোগাযোগ খাতে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে একীভূত হওয়ার বিষয়টি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে রবি এবং এয়ারটেলে স্থায়ী লোকবল আছেন ২ হাজারের বেশি। এদের কাউকে ছাঁটাই করা যাবে না। একইভাবে রবি ও এয়ারটেলের তালিকাভুক্ত পরিবেশকদের অনুমোদনও বাতিল করা যাবে না। অন্য শর্তগুলো হলো-বিদ্যমান ডিলার ও গ্রাহকসেবা কেন্দ্র অপরিবর্তিত রাখতে হবে, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে এবং সেবার মানে তারতম্য করা যাবে না। বিটিআরসিসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে অপারেটর দুটির বকেয়া পরিশোধের দায়দায়িত্ব প্রধান অংশীদার কোম্পানিকে নিতে হবে। এ ছাড়া একীভূত হওয়ার পর এয়ারটেল ও রবির বিদ্যমান রেডিও তরঙ্গ বা স্পেকট্রাম যোগ হয়ে যাবে। দুটি কোম্পানির শেয়ারসংক্রান্ত বিষয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোম্পানি আইনের ২০৮ ধারা প্রযোজ্য হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে তরঙ্গ ব্যবহারের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, যেহেতু দুটি অপারেটর এখানে একীভূত হচ্ছে, তাই তরঙ্গের মালিকানার এখানে পরিবর্তন হবে না। তরঙ্গের মালিকানা পরিবর্তন না হলে আইনের ভিত্তিতে তা ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। অর্থাত্ রবি ও এয়ারটেলের কাছে থাকা তরঙ্গ একীভূত হওয়া প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহার করবে। বর্তমানে এয়ারটেলের কাছে ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে আর রবির কাছে আছে ১৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ। দুটি প্রতিষ্ঠানের তরঙ্গ এক হয়ে ৩৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ হলে তা সব মোবাইল অপারেটরের মধ্যে সর্বোচ্চ হবে। বর্তমানে গ্রামীণফোনের কাছে সর্বোচ্চ ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে।
মোবাইল নম্বর পরিবর্তনের বিষয়ে রবি-এয়ারটেলের আবেদনে বলা হয়েছিল, আগামী ৩ বছর রবির ০১৮ এবং এয়ারটেলের নম্বরগুলো ০১৬ সিরিয়ালেই থাকবে। এরপর প্রয়োজন হলে নাম্বার পরিবর্তনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বিটিআরসির বৈঠকে বলা হয়েছে, যতদিন মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) বা নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর পরিবর্তনের সুবিধা চালু না হবে ততদিন তারা এভাবেই সেবা দিতে পারবে।
যৌথভাবে আবেদনপত্রে জানানো হয়, রবি আজিয়াটা ৭৫ শতাংশ শেয়ার পাবে আর এয়ারটেল পাবে ২৫ শতাংশ। রবি যে ৭৫ শতাংশ পাবে তার মধ্যে ৫ শতাংশ পাবে রবির আরেক সহযোগী জাপানের এনটিটি ডকোমো। এদিকে রবিতে আজিয়াটার শেয়ার আছে ৯১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর ডকোমোর শেয়ার আছে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০০৭ সালে ডকোমো তখনকার একেটেলের ৩০ শতাংশ শেয়ার কিনে যাত্রা করলেও পরে এখানকার বাজারে আর কোনো বিনিয়োগ করেনি। ফলে তাদের শেয়ার কমতে থাকে। আর বাড়তে থাকে আজিয়াটার শেয়ার।
বিটিআরসির সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রায় ১৩ কোটি মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে রবির গ্রাহক রয়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ আর এয়ারটেলের রয়েছে ৯০ লাখ গ্রাহক। দুটি প্রতিষ্ঠান একীভূত হলে রবির মোট গ্রাহক সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৭ লাখ। ফলে বাংলালিংককে ছাড়িয়ে রবি হয়ে যাবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর। ২০১২ সাল থেকে লাভে থাকা রবির বাত্সরিক আয় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এয়ারটেলের ২ হাজার কোটি টাকা।  উল্লেখ্য, গত মাসের শেষ সপ্তাহে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল একীভূত হওয়ার আলোচনা শুরু করে। যদিও তখন ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছিল ফ্রান্সের কোন একটি মোবাইল অপারেটর বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার এয়ারটেল কিনে নিতে পারে। তবে শ্রীলংকা এয়ারটেলের কোন খবর জানা না গেলেও বাংলাদেশের এয়ারটেল শেষ পর্যন্ত রবি কিনে নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ভারতী এয়ারটেল ২০১০ সালে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ কিনে নিয়ে এয়ারটেল বাংলাদেশ নামে ব্যবসা শুরু করে। ২০১৩ সালে বাকি ৩০ শতাংশ কিনে নেয় ভারতী এয়ারটেল। ভারতী এয়ারটেল এশিয়া, আফ্রিকাসহ বিশ্বের ২১ টির দেশে ৩০ কোটির বেশি গ্রাহক নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর। এখানে মোট কর্মরত জনবলের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। এয়ারটেল বাংলাদেশে কর্মরত জনবলের সংখ্যা ৫০০ জনের বেশি। তাদের বাংলাদেশে লাইসেন্স-এর মেয়াদ রয়েছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত।
এদিকে ১৯৯৭ সালে একটেল নামে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে রবি। বাংলাদেশের শিল্পগোষ্ঠী এ কে খান গ্র“প ও টেলিকম মালয়েশিয়ার যৌথ অংশীদারি কো¤পানি ছিল একটেল। ২০০৯ সালে এ কে খান গ্র“প ও টেলিকম মালয়েশিয়া আজিয়াটার কাছে রবির মালিকানা বিক্রি করে দেয়। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ ‘রবি’ নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে তারা। রবির পরিশোধিত মূলধনের (পেইড-আপ ক্যাপিটাল) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন এক হাজার ৬০০ জনের বেশি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এক হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে রবি। প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে তাদের প্রথম ১৫ বছরের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ করে দ্বিতীয় দফায় লাইসেন্সের অনুমোদন পেয়েছে।
– প্রিয়ডটকম,ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/