সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / কলাম / ছাত্র জীবন

ছাত্র জীবন

-: সালাহ্উদ্দিন :-

ছাত্রছাত্রীরা দেশ ও জাতির সম্পদ; আজ ও আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উপরই নির্ভর করে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সাফল্য। তাই ছাত্রজীবন মানুষের জীবন গঠনের প্রস্তুতিকাল। এই সময়েই তাদেরকে জীবনের আদর্শ কাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারে।

আদর্শ ছাত্রছাত্রী তাদের নিজস্ব পরিচয় বহন করে। যাদের মধ্যে অব্যক্তভাবেই ছাত্রত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তারাই ছাত্রছাত্রী। তারা দেশের ভবিষ্যৎ; আগামী দিনের কর্ণধার। তাই ছাত্রছাত্রীদের চেতনায় থাকবে মনুষ্যত্ববোধের দীক্ষা, মনমানসিকতা হবে সুন্দর। আচার আচরণ হবে নম্র, ভদ্র, বিনয়ী আর সামগ্রিকভাবে তাদের কর্মে প্রতিফলিত হবে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও গঠনমূলক গবেষণা। ছাত্রছাত্রীদের আসল পরিচয় ঘটে তাদের শারীরিক ও অবয়ব গঠনে। তাই ছাত্রছাত্রীদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত থাকা চাই আদর্শিক ছাপ এবং ছাত্রজীবনের দাবির প্রতি যত্নশীল। কিন্তু আজ দুর্ভাগ্য চেপে বসেছে জাতির কপালে।

বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রদের পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন দেখে বোঝাই যায় না এরা আদর্শ শিক্ষার্থী। ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে নিমজ্জিত হতে চলেছে বিদেশী অপসংস্কৃতির দিকে। যেহেতু ছাত্রছাত্রীরা সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের চাবি।

তাই তাদের শারীরিক গঠন হতে হবে আদর্শের আঙ্গিকে গড়া। ছাত্ররা হবে সবসময় উদ্যমী এবং জ্ঞানোম্মুখ। ছাত্ররা হবে সদা সচেতন, অত্যন্ত সতর্ক, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, অনুসন্ধানী, পিপাসার্ত, জ্ঞান অর্জনের নেশায় উন্মুক্ত ও পিপাসার্ত, উদ্বিগ্ন, সর্বদা ব্যতিব্যস্ত অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা ও কৌতূহলী মনকে জ্ঞানের আলোতে উদ্ভাসিত করার লক্ষ্যে সব সময় উদ্যমী এবং জ্ঞানোম্মুখ। অজেয়কে জয় করে, অন্ধকারকে দূর করার প্রবল স্পৃহার উন্মুখ এমন শিক্ষার্থীরাই হবে দেশ ও জাতির কান্ডারী। জানার নেশায় বিভোর এমন শিক্ষার্থীরাই একদিন পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। পৃথিবীর বুকে উঁচু শিখরে আসন লাভ করার একমাত্র সম্মোহনী শক্তি হলো শিক্ষা। তাই ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষার প্রতি হতে হবে শ্রদ্ধাশীল। ছাত্রদেরকে হতে হবে আদর্শিক চিন্তা-চেতনায় অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন।

আদর্শ-অনাদর্শ, ভাল-মন্দ নির্ণায়ক চৌকস ও গবেষণায় সদা নিয়োজিত। ছাত্রছাত্রীদেরকে চিন্তা চেতনায় উদ্ভাসিত হওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর সমস্ত চ্যালেঞ্জ এবং অসাধ্যকে সাধ্য করার নেশায় মেধা ও দু’হাতকে কাজে লাগাতে হবে। ছাত্রদেরকে আত্মসচেতন ও সংঘবদ্ধ হতে হবে। ছাত্ররা কখনোই মেধার প্রখরতা, ভাল ফলাফল অর্জনে আত্মম্ভরিতা, কর্মের সফলতা আর চারদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ার উচ্ছবাসে গর্ব করা, অহংকার করা, স্রষ্টাকে ভুলে স্রষ্টার প্রতি বৈরীভাব পোষণ করা ইত্যাদি কোনোভাবেই ছাত্রদের কাছে কাম্য নয়। ছাত্ররা হবে সদা হাস্যোজ্জ্বল ও মিশুক স্বভাবের অধিকারী। তারা একই প্রতিষ্ঠান বা দেশ-বিদেশের যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করুক না কেন তাদের পরিচয় যখন ছাত্র তখনই তারা হবে একে অপরের পরিপূরক এবং ছাত্রদের বন্ধনে পরস্পর পরস্পরের খুব কাছাকাছি। ছাত্রসমাজ দেশ-বিদেশের যে কোন প্রান্তে সংঘটিত হওয়া যে কোন মানবতাবিরোধী বা জাতি, ধর্ম, বর্ণ বিদ্বেষী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে পারে। সকলের ভালোবাসার প্রতীক ছাত্রসমাজ কখনো ‘একলাচলো’ নীতি অবলম্বন করবে না। ছাত্রছাত্রী মানেই শিক্ষার্থী আর শিক্ষার্থী মানেই যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে, যারা জ্ঞান অর্জনে নিয়োজিত, শিখতে আগ্রহী, অজ্ঞতার অন্ধকারকে বিদূরিত করার লক্ষ্যে জ্ঞান অন্বেষণ করার কাজে নিয়োজিত।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রথম যে আদেশ তাই হলো ‘পড়ো’ (ইকরা)। আর একজন ছাত্রছাত্রীর প্রধান দায়িত্ব পড়ালেখায় মনোনিবেশ করা। কেন না ‘knowledge is power’ (জ্ঞানই শক্তি) কিন্তু তাদের এই জ্ঞানার্জন শুধু পাঠ্য বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তাদেরকে বিভিন্ন আদর্শবান লেখকের বই পড়তে হবে। আর বিভিন্নভাবে জ্ঞান অর্জন করে ছাত্র-ছাত্রীদের সত্য অন্বেষণ করতে হবে। পড়ালেখার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য হলো পূর্ণাঙ্গরূপে আদর্শ মানুষ হওয়া। কেউ পড়ালেখা করলো কিন্তু তার মাঝে মনুষ্যত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না, মানবিক আচার আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ, তাহলে প্রমাণিত হয় যে, সে হয়তো পড়ালেখা করছে ঠিকই, একাডেমিক সার্টিফিকেট লাভ করছে কিন্তু তার শিক্ষার কোথাও না কোথাও ভুল ত্রুটি থাকার কারণে সে পূর্ণাঙ্গরূপে আদর্শ মানুষে পরিণত হতে পারেনি। ফলে তার দ্বারা শিক্ষা যেন প্রশ্নবিদ্ধ! তাই শিক্ষাকে প্রকৃতপক্ষে অর্জন করতে হবে বিবেক দিয়ে মহামূল্যবান, সময় জীবন। জীবনের অপর নাম সময়।

তাইতো ছাত্র-ছাত্রীদের ছাত্রজীবন থাকতেই সময়ের প্রতি সচেতন ও সময়ের সদ্ব্যবহার করা উচিত। সুস্থ মন ছাত্র জীবনের সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলা ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন। শিক্ষকের মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় ছাত্র ছাত্রীরা সবসময় তৎপর ও সচেতন থাকবে। শিক্ষক মাত্রই সম্মানী ব্যক্তি। শিক্ষক মাত্রই আত্মসম্মানের অধিকারী। তাই শিক্ষকদের সম্মান করা আবশ্যক। মাতা-পিতা, গুরুজন সবাইকে শ্রদ্ধা করতে হবে। জাতির সমৃদ্ধি দেশের উন্নয়ন সকলেরই কাম্য, সকলেরই আকাঙ্ক্ষিত। আর আগামী দিনের সমৃদ্ধ জাতির কারিগর আর নেতৃত্বদানকারী হলো আদর্শ ছাত্র-ছাত্রী। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আদর্শ দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আর তাই তাদের মাঝে দেশাত্মবোধ জাগরণ করতে হবে।

বাস্তব জ্ঞানের আলোকে দেশের প্রতি কর্তব্যের আহবানে সাড়া দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরাই পারে দেশাত্মবোধ তথা দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে। ছাত্র-ছাত্রীরা চিরকালই প্রভাতের সূর্যের মতো উদীয়মান চির নবীন, বর্ষার নব কিশলয়ের মতো চির সবুজ। ফলে তারা সবসময় সম্ভাবনার দিকে চলে। তাই তারাই পারে দেশকে সম্ভাবনার দিকে এগিযে নিতে, নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে। ছাত্র-ছাত্রীরা সব সময় আত্মমানবতার কাজে নিয়োজিত থাকবে। তাদেরকে সকল দুর্যোগের সময় দুঃখী মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের ৪টি দায়িত্ব পালন করতে হয়, যথা- (১) স্রষ্টার প্রতি দায়িত্ব, (২) মাতাপিতার প্রতি দায়িত্ব, (৩) নিজের প্রতি ও (৪) দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আদর্শ ছাত্র-ছাত্রীরা নিরক্ষর দূরীকরণ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে এগিয়ে আসা, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টিতে, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হলো বন্ধু নির্বাচন। সাথী বা সহপাঠী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। বন্ধু বা বান্ধবী হিসেবে তাদেরকেই নির্বাচন করা উচিত যারা নিজের সত্ত্বা বিকাশে নিজেকে ব্যক্ত করার প্রয়াসে জীবনে চলার পথে সত্যের ও ন্যায়ের অনুসন্ধানী। কেননা সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। অতএব এ সবকিছু মিলিয়ে একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে আদর্শ ছাত্রজীবন গড়তে হবে। তাদেরকে সে সকল পদক্ষেপ ছাত্রজীবনেই নিতে হবে। যাতে তারা এই সমাজ, দেশ ও জাতিকে একটি সুন্দর নেতৃত্ব দিতে পারে। তাদেরকে জীবন সংগ্রামের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে কর্ম, চিন্তা, দেহে ও মনে। মনে রাখতে হবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বাণী-

‘‘মোদের চক্ষে জ্বলে

জ্ঞানের মশাল ভরা বাক

কণ্ঠে মোদের কুণ্ঠাবিহীন

নিত্যকালের ডাক

মোদের চোখে বিশ্ববাসীর

স্বপ্ন হোক সফল

আমরা ছাত্রদল।’’

পরিশেষে প্রখ্যাত কবি কামিনী রায়ের রচিত দু’টি পংক্তির উদ্বৃত্তি দিয়ে ইতি টানছি ‘‘এমন জীবন হবে করিতে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন।’’

প্রাক্তন ছাত্র- কিশলয় অাদর্শ শিক্ষা নিকেতন

খুটাখালী, চকরিয়া, কক্সাজার।

ব্যাচ- ২০১৩, বিজ্ঞান বিভাগ।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

দ্রুত ও স্থায়ী অবসান হোক রোহিঙ্গা সমস্যার

-: তাওহীদুল ইসলাম নূরী :- ২৫ আগষ্ট ২০১৯, রোহিঙ্গা সমস্যার দুই বছর পূর্তি হল। একে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/