Home / প্রচ্ছদ / অপরাধ ও আইন / টেকনাফে আনসার ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ডাকাত দলের হামলা : নিহত ১ : ১১টি অস্ত্র ও ৬৭০ রাউন্ড গুলি লুট

টেকনাফে আনসার ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ডাকাত দলের হামলা : নিহত ১ : ১১টি অস্ত্র ও ৬৭০ রাউন্ড গুলি লুট

Khon

 

গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :

কক্সবাজারের টেকনাফে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার বাহিনীর শালবন ক্যাম্পে ডাকাতদলে হামলায় আনসার বাহিনীর কমান্ডার মো. আলী হোসেন (৫৫) নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার গভীর রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মোছনির এলাকার এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত আনসার কমান্ডারের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের সফিপুর এলাকার মৃত শুক্কুর আলীর ছেলে। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শরণার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম।

শরণার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম বলেন, এ শিবিরে কোন ধরনের বাউন্ডারী ওয়াল না থাকায় কিছু বহিরাগতদের আনাগোনা অবাদে করে আসছিল। আগে ক্যাম্পে অবস্থানকারি রোহিঙ্গাদের বাইরে যাবার জন্য শিবিরের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার নিয়ম থাকলেও লোকজন বিনা বাধায় বিচরণ করছিল।

Khon- Giasuddin 13-5-16-এ ঘটনার খবর পাওয়ার পর সকালের দিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. তানভীর আলম খাঁন, র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. আসিকুর রহমান, ২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী, ২৯ আনসার ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. তানজিনা বিনতে এরশাদ ও জেলা আনসার কর্মান্ডার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

টেকনাফ ২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী বলেন, রোহিঙ্গা শিবির এলাকা কেন্দ্রিক একটি সক্রিয় ডাকাত দল রয়েছে। বিভিন্ন সময় বিজিবি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও তার আশপাশের এলাকা থেকে কয়েকজন ডাকাতকে অস্ত্রসহ আটক করেছিল। ডাকাতির উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ বলেন, ক্যাম্পে থাকা পাঁচটি রাইফেলস, দুটি এসএমজি, চারটি এম টু ও ৬৭০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের ব্যবহারিত মুঠোফোন এবং নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য অভিযান চলছে।

সরেজমিনে গিয়ে শুক্রবার সকালে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে শালবন এলাকার একটি টিনশেড ভবনের আনসার সদস্যরা সরকারী দায়িত্ব পালন করে আসছিল। তাদের সঙ্গে থাকা অস্ত্রগুলো বৃহস্পতিবার রাতেও তাদের হাতে থাকলেও এখন অস্ত্র বিহীন শুধু পোশাক পড়ে অনেকে হতাশার মধ্য দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের সি ও ডি ব্লক এবং পাশ্ববর্তী পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় শালবনে আনসার ব্যারাকটি অবশিষ্ট। ওই ব্যারাকে ১৪জন আনসার সদস্য থাকার কথা ছিল। ছুটিজনিত কারণে পাঁচজন সদস্য অনুপস্থিত থাকলেও ওইদিন রাতে নয়জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তারা হলো- নিহত কমান্ডার মো. আলী হোসেন, অজিত বড়ুয়া, চন্দন কুমার, মো. হোসাইন, আবদুর রাজ্জাক, মো. শহিদ, ইব্রাহীম খলিল, মো. আমজাদ ও নায়েক মো. রফিক। শরণার্থী শিবিরে আনসার সদস্যদের চারটি ক্যাম্প থাকলেও ওই শালবন এলাকায় লম্বা টিনশেড ভবনটিতে তিনটি কক্ষের মধ্যে দুটিতে আনসার সদস্যরা থাকতেন। অপর কক্ষেটিকে কর্মান্ডার নিজে থাকতেন এবং সেখানে একটি ছোট পাকা ভবনে একটি অস্ত্রগার ছিল।

ঘটনার সময় চৌকির পাহারাদার চন্দন কুমার বলেন, চৌকির সামনে থেকে তিনজন অপরিচিত লোক হেটে যাওয়ার সময় তাদের চ্যালেঞ্জ করলে তাঁরা সামনে দিকে এসে আমার সঙ্গে কথা বলা সময় হঠাৎ করে পিছন থেকে কয়েকজন লোক এসে আমাকে মুখ চেপে ধরে হাত-পা বেঁধে রেখে ব্যারাকে হামলা চালায়।

হামলাকারীরা অস্ত্রগারে ঢুকে আলী হোসেন স্যারের কাছ থেকে অস্ত্রগারের চাবির জন্য ধস্তাবস্তির এক পর্যায়ে গুলি করে চবি নিয়ে অস্ত্র লুট করে। এসময় আমার সঙ্গে থাকা অস্ত্রটিও কেড়ে নেয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও হামলার সময় ওই ক্যাম্পে থাকা আনসার সদস্য অজিত বড়ুয়া বলেন, দিবাগত রাতে ২০-২৫ জন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত ক্যাম্পে হামলা চালায়। এ সময় তিনিসহ ওই ক্যাম্পে নয়জন ছিলেন। সবাই ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎ করে পাশের আনসার কমান্ডার আলী হোসেনের ঘর থেকে আর্তনাদের শব্দে তাঁর ঘুম ভাঙে। উঠে দেখি আমার পাশের থাকা অন্য সদস্যদের হাতপা বেঁধে রাখা হয়। আমি সামনের দিকে গিয়ে বাঁধা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা আমাকেও অন্যদের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। ওই সময় দূবৃর্ত্তরা অস্ত্রগারের চাবির জন্য হাতাহাতির এক পযার্যে আলী হোসেনকে গুলি করে ও অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। দূর্বত্তরা পালিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন বেধে রাখা আনসার সদস্য ও গুলিবিদ্ধ আলী হোসেনকে শরণার্থী শিবিরে স্বাস্থ্য ক্লিনিকে নিয়ে গেছে কতব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশটি উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে সুরুতহাল রিপোর্ট করা করার পর তার গ্রামের বাড়ি পাঠানো হবে। খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ ও পুলিশ পরিদর্শক (ওসি. তদন্ত) মো. কবির হোসেনে নেতত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রাতে পাশ্ববর্তী আশপাশের এলাকায় অভিযান চালায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার জানান, অস্ত্রগার লুট ও আনসার সদস্যকে গুলি করে পাহাড়ির দিকে ছুটে যাবার সময় রাত আনুমানিক তিনটার স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আমিন নামে এক ব্যক্তি তাদের দিকে টর্চের আলো দেখালে ডাকাতরা তাদেরকে চিনতে পারায় তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে রাস্তার পাশে ড্রেনে ফেলে পালিয়ে যায়। আহত আবদুল আমিন জাদিমুরা এলাকার আমির হামজার ছেলে। সে বর্তমানে কক্সবাজার চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।

শরণার্থী রোহিঙ্গা শিবিরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির কেন্দ্রীক একটি সক্রিয় ডাকাত দল রয়েছে। তারা পাশ্ববর্তী পাহাড়ে তাদের আস্তানা গড়ে তুলে অধিকাংশ সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা বিভিন্ন সময়ে সড়কে যানবাহনে ডাকাতিতে লিপ্ত রয়েছে। তাদের কয়েক জন সদস্যকে পুলিশ ও বিজিবি আটক করে আদালতে পাঠালেও তারা পুনরায় জামিনে বেরিয়ে এসে ডাকাতির ঘটনায় লিপ্ত রয়েছে। তারাই এ ঘটনাটি ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আনসার ব্যারাকের দায়িত্বরত টু আইসি আলমগীর হোসেন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, স্যার হামলাকারীদের সনাক্ত করতে পারায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, ডাকাতি ও অস্ত্র লুটে উদ্দেশ্যে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছি। সরকারী লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নিহতের লাশটি কি করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আলী হোসেন বলেন, জেলা আনসার কমান্ডারের মাধ্যমে লাশটি ময়নাতদন্তের শেষে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হবে।

জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, শুক্রবার দুপুরে পর থেকে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে সহেন্দভাজন এলাকায় যৌথভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় সরকারী বিধি মোতাবেক মামলার প্রক্রিয় চলছে।

উল্লেখ্য যে, ২০১৫ সালে ১৫ মার্চ রোববার দুপুরে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আনসার-ডাকাত বন্দুকযুদ্ধে আবদুল হাফেজ (৩৮) এক ডাকাত মারা যায়। ওই ঘটনায় আনসার সদস্য হরিপদক দাশ (৩২) ও মোশারফ হোসেন (৩৮) এবং ডাকাত দলের সদস্য মো. রফিক (৩০)সহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

লামা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে নববর্ষ পালিত

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :“নব আশায়, নব প্রভাতে নববর্ষের প্রতিটি দিন সবার জীবনে নতুন ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/