সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ধর্মীয় / দুর্গাপূজার নানা রঙে নানা রূপে উদযাপনের কাল

দুর্গাপূজার নানা রঙে নানা রূপে উদযাপনের কাল

অনলাইন ডেস্ক :

ভারতবর্ষে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় সর্বজনীন দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়। আসলে দূর্গাপূজা মানেই নারীশক্তির উদযাপন। প্রত্যেক নারীর চেতনার অধিষ্ঠাত্রী দেবী দূর্গা। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও অনেক মেয়ে অংশগ্রহণ করেছে। বলা হয়ে থাকে, দেবী দূর্গার ‘তেজ’ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করে ভারতবর্ষের অনেক মেয়ে সেসময় আত্মশক্তি বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। দেবী দূর্গার ভাবনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বন্দে মাতরম গানটি রচনা করেন, যা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র।

দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত দুর্গাপূজা পালিত হয়। এই পাঁচটি দিনকে বলা হয় ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনার অমবস্যার নাম মহালয়া। এই দিন হিন্দুরা তর্পন করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষদিন হলো কোজাগরী পূজা। এই দিন লক্ষী পূজা করা হয়।

একটা সময় ছিল যখন মেয়েরা লাল পেড়ে সাদা গরদ কিংবা জামদানিতে সেজে একে অপরের পায়ে আলতা দিয়ে মেতে উঠতো পূজার কাজে। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, আলতা ও সিঁদুর পবিত্রতার প্রতীক। ধারণা করা হয়, সিঁদুর আলতার লাল আর কাশফুলের সাদা- এই থেকেই এসেছে দূর্গাপূজায় লাল সাদার আধিক্য।

তবে এখন ফ্যাশনে এসেছে পরিবর্তন। পূজায় লাল, সাদার আধিক্য থাকলেও আজকাল অন্য রঙের পোশাকও পরছেন অনেকেই। সুতি, ভয়েল, দোপিয়ান, মসলিন, গরদ ও বিভিন্ন ধরনের সিল্কের কাপড়ের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার কামিজের চাহিদা রয়েছে। আধুনিক, সনাতনী, ঐতিহ্যবাহী যেকোনভাবেই নিজেকে সাজিয়ে তোলার জন্য দূর্গাপূজা একটি অন্যতম মাধ্যম।

পূজার সূচনা হয় ষষ্ঠীতে। এদিনে ঘরবাড়ি সাজানো ও পূজা অর্চনার কাজটাই প্রধান। তাই ষষ্ঠীতে ঘোরাঘুরি একটু কমই হয়। সাধারণত পূজার আমেজ শুরু হয় সপ্তমী থেকে। ষষ্ঠীর দিন ঘুরতে গেলে তাঁত, কটন বা জামদানী শাড়ি পরতে পারেন। তাছাড়া সালোয়ার কামিজও বেশ মানিয়ে যায়। পোশাকের সাথে মিলিয়ে হালকা সাজই এই দিনে ভাল লাগে।

সপ্তমীতেও হালকা সাজ মানানসই। সকালবেলা মন্দিরে অঞ্জলি দিতে গেলে আপনার সাজে সতেজ ভাব রাখা জরুরী। এই দিন সকালে সুতি শাড়ি পরতে পারেন। অনেকে সালোয়ার কামিজ পরেও অঞ্জলি দিতে যায়। শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজে স্নিগ্ধ রং বেছে নিতে পারেন। হালকা আকাশি, নীল কিংবা একরঙা বড় পাড়ের শাড়িতে ভাল মানাবে। দিনের বেলার মেকআপ হালকা হওয়াই ভাল। অনেকে শাড়ির সাথে মিলিয়ে টিপ পড়তে পছন্দ করেন। হালকা গিতলের গয়না ভাল মানাবে।

আলতা পূজার সাজের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। অনেকেই আলতা পরতে পছন্দ করেন। তাছাড়া আলতা মঙ্গলের প্রতীক বলে বিবাহিত মেয়েরা পূজায় আলতা পরেন।

সপ্তমীর রাতের সাজেও স্নিগ্ধতা থাকবে। রাতে জামদানী বা কাতান পরতে পারেন। মেকআপ হালকা হবে। চুলে ফুল দিলে চেহারায় স্নিগ্ধ ভাবটা ফুটে ওঠবে।

সপ্তমীতে ছেলেরা ক্যাজুয়াল পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবে অনেকে সপ্তমীর দিনে ঘোরাঘুরি না করে পার্টিতে যান। সেক্ষেত্রে জিনস ও টিশার্ট মানাবে না। তখন পাঞ্জাবি বেছে নিতে পারেন।

অষ্টমী পূজা খুব জাঁকজমকপূর্ণ হয়। অষ্টমীতে সন্ধি পূজা ও কোথাও কোথাও কুমারী পূজা হয়। সন্ধিপূজার থালা সাজায় মেয়েরা। ফলমূল, নাড়ু, সন্দেশ, মিষ্টি, ফুল আলতা ও সিঁদুরের কৌটা দিয়ে সন্ধি পূজার থালা সাজানো হয়। অষ্টমীর সাজ হওয়া উচিত একেবারে নিজস্ব ঢংঙে। সকালের অঞ্জলিতে কিংবা সন্ধিপূজায় সাধারণত লাল শাড়ি মানানসই। কাতান সাদার সাথে লাল পাড়ের শাড়ি পরার প্রচলন আছে অষ্টমীতে। আঁচলে বেশি কাজ আছে এমন লাল পাড়ের শাড়ি একপ্যাঁচ করেও পরতে পারেন। কপালে বড় লাল টিপ, গাঢ় লাল লিপস্টিক, চোখে কাজল ও হাতের পলায় নিজেকে সাজাতে পারেন। শাখা পরলে সাথে সোনার গয়নাও ভাল মানাবে। চুল সামনের দিকে সেট করে পেছনে কার্ল করে ছেড়ে রাখলে ভাল দেখাবে। কানের পেছনে গুঁজে দিতে পারেন বেলি ফুলের মালা কিংবা সাদা ও লাল জারবেরা।

অষ্টমীর রাতে কমবেশি সবাই ঘুরতে যান। রাতের সাজটা হয় জমকালো। রাতের সাজে ভারী কাজের সিল্ক, কাতান ও মসলিনের কাপড় বেছে নিতে পারেন। রাতের সাজের গয়নাও ভারি হতে হবে। যেহেতু পূজায় ঘুরতে বের হলে অনেক হাঁটতে হয়, তাই আরামদায়ক স্যান্ডেল পরতে হবে। এজন্য বেছে নিতে পারেন স্লিপার।

শাড়ি পরতে না চাইলে সালোয়ার কামিজ কিংবা হাতের কাজের নকশা করা কুর্তা ও ফতুয়ার সঙ্গে লেগিংস বা জিনস পরতে পারেন।

রাতের সাজে ছেলেরা পাঞ্জাবির সাথে ধুতি, চুরিদার ও জিনস পরলে ভাল লাগবে। পায়ে মোকাসিন, দুই ফিতার স্যান্ডেল ছাড়াও স্টাইলিশ চটি পরতে পারেন। ইচ্ছেমতো চুল সাজাতে মাঝারি আকারের চুল ছাঁট ভাল। অল্প জেল দিয়ে চুলটা ভেজা ভেজা রাখলেও ভাল লাগবে। তাছাড়া সিল্কের পাঞ্জাবী পরলে চুলটা ব্যাক ব্রাশ করেও নিতে পারেন।

নবমীর দিন সকালে মন্দিরের পূজা অর্চনা শেষ করে অনেকেই বাইরে যান ঘুরতে। কারণ দশমীতে প্রত্যেকের বাসায় অনেক কাজ থাকে। ফলে বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়না। বিকেলে ঘুরতে বের হলে অবশ্যই পোশাকে থাকবে রঙের আধিক্য। রঙ বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক, ভারি গহনা, ভারি মেকআপ, বাহারি চুলের সাজ ও তাজা ফুল এদিনের সাজের অনুষঙ্গ।

প্রতিদিন একই ধরণের বা ডিজাইনের পোশাক না পরে একটু ভিন্নতা আনতে পারেন। যেমন বিভিন্ন প্যাটার্নের ব্লাউজ এবং শাড়ি পরার ঢঙে আনতে পারেন পরিবর্তন। একইভাবে সালোয়ার কামিজের ক্ষেত্রে কামিজটা ঠিক রেখে ওড়না ও সালোয়ারের পরিবর্তনে সাজে আসতে পারে ভিন্নতা। আজকাল নবমীর সাজে মেকআপের চেয়ে গয়নাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন অনেকে। এথনিক জুয়েলারি এই দিনে ঐতিহ্যের সাথে আধুনিক আমেজ আনবে।

বাচ্চাদের পোশাকের ক্ষেত্রে সবসময় আরামের দিকটিকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল কিংবা হালকা রং বেছে নিতে পারেন। শিশুদের পোশাকের জন্য মেয়েদের সালোয়ার কামিজ, স্কার্ট, ফ্রক, শাড়ি এবং ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি শার্ট ইত্যাদি ভাল মানাবে।

দূর্গাপূজার বিশেষ আকর্ষণ থাকে দশমীর দিনে। দশমীতে ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রাধান্য পায়। দশমীর সাজ মানে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, লাল রঙের শাড়ি কিংবা সাদা জামদানী আর হাতে নকশা করা গাঢ় লাল ব্লাউজ। গরদের লাল, সাদা শাড়িতেও ফুটে ওঠে আভিজাত্য। গতানুগতিক লাল ব্লাউজের বদলে ভিন্ন ধরনের ব্লাউজও পরতে পারেন।

দশমীতে সোনা পরতেই হবে এমন কোন কথা নেই। ভারি রুপার গয়নাও সাজে এনে দিতে পারে আভিজাত্য। সিথির সিঁদুর একটু গাঢ় রাখলেই ভাল মানাবে। দশমীতে এক প্যাঁচে শাড়ি পরার প্রচলন আছে। সামনের দিকের চুলগুলো পেঁচিয়ে পেছনে নিয়ে খোঁপা করতে পারেন। এছাড়া লাল, সাদা শাড়ির সঙ্গে মানাবে ঘাড়ের কাছে আলগা হাতখোঁপা। খোঁপায় জড়িয়ে নিতে পারেন সাদা ফুল।

দশমীর সাজে একটু নতুনত্ব আনতে চান অনেকেই। তবে সেটা যেন বেশি জমকালো না হয়। চোখে যাতে আরাম লাগে সেই দিকটি বিবেচনা করে সাজতে হবে।

দশমীতে হয় বিসর্জন। এই দিনেও বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে পূজার থালা সাজানো হয়। অঞ্চলভেদে থালা সাজানোর উপকরণে ভিন্নতা থাকলেও আলতা, সিঁদুর ও মিষ্টি থাকেই। প্রতিমাকে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মেয়েরাও মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। এই সিঁদুর খেলা শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাই নয়, এর মধ্য দিয়ে বাড়ে সামাজিকতাও।

ষষ্ঠী থেকে দশমী- দূর্গাপূজা পাঁচদিন হওয়ায় মনের মতো করে সাজার সুযোগ থাকে। তবে সাজতে হবে আপনার রুচি, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ ও ব্যক্তিত্বের সাথে মিলিয়ে।

সূত্র: তিথি চক্রবর্তী-deshebideshe.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

রামুতে তরমুজের দাম চডা :হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতারা

  কামাল শিশির; রামু :কক্সবাজারের রামু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পবিত্র মাহে রমজানের শুরুতে বিভিন্ন এলাকায় ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/