দীপক শর্মা দীপু :
দুর্নীতির দায়ে ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সরকার দলীয় এমপি আবদুর রহমান বদির হাতে হামলার শিকার হয় সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর ২৪ জন ব্যক্তি। ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ না করে এমপি বদি নির্গৃত ও লাঞ্চিত করে শত-শত মানুষকে। প্রশাসনের বিভিন্ন বৈঠকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে বৈঠকে গোলমাল করায় ব্যাপক সমালোচিত হন এমপি বদি।
২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে টেকনাফ-উখিয়া সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ২৩ দিন পর ২২ জানুয়ারি টেকনাফ উপজেলা নির্বাচনের দিন একটি ভোট কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিনকে মারধর করেন তিনি। এরপর তাঁর হাতে প্রহৃত হন টেকনাফের বন বিট কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান।
এ ছাড়া ভোটার তালিকা তৈরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে টেকনাফের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক আবদুল জলিল ও পুলিন দে প্রহৃত হন বদি এমপির হাতে।
টেকনাফের কুলালপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা হাজি মোস্তফা, কক্সবাজারের সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিম, উখিয়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলামুর রহমান, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য রাখাল চন্দ্র মিত্রও এমপির হাতে প্রহৃত হন। টেকনাফের সাবরাং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুফিজ উদ্দিন, টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিনকেও মারধর করেছেন এমপি। টেকনাফ পৌর এলাকায় এমপির চাচা হাজি ইসলামের নির্বাচনী সভার ভিডিও করার সময় কক্সবাজার সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুর রহমানকে ধরে এমপি বদি বেধড়ক পিটুনি দেন। এমপি বদি টেকনাফের শামলাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর আলমকে (৫২) প্রকাশ্যে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এছাড়া দুর্নীতিবাজ, ইয়াবা, মানবপাচারকারিদের গডফদার হিসেবে এমপি বদি দেশব্যাপী নিন্দিত। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি সহ নানা অপকর্মের অভিযোগ থাকলেও তিনি নানা ভাবে পার পেয়ে যান। কিন্তু এবার দুর্নীতি মামলায় ফেঁসে গেছেন এমপি বদি। তার বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া প্রথম শাস্তির খবরে কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর বদির হাতে নির্গৃত ও নির্যাতিত ব্যক্তিরা উল্লসিত হয়েছেন।
তার হাতে হামলার শিকার হওয়া কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এডভোকেট রাখাল মিত্র তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন,- ‘খারাপ লোকদের শাস্তি হলে আগামিতে কোন মানুষ অন্যায় করতে সাহস পাবেনা। দুর্নীতির দায়ে এমপি বদির শাস্তির খবর শুনে খুশি হয়েছি।’
তিনি বদির হাতে হামলার শিকারের ঘটনার বিবরণে জানান, ‘এমপি বদি নির্বাচিত না হওয়ার আগে কক্সবাজার কেন্দ্রিয় মহাশশ্মানের জন্য লাইটিং করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর তাকে এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে কিল ঘুষি মারেন। একজন এমপির এমন আচরন মেনে নেয়া যায়না।’
বর্তমান সরকারের ৩৪৫ এমপির মধ্যে ‘বদি’ নামটি দেশের সবাই জানেন। তবে সুনামের জন্য নয় নানা অপকর্মের হোতা হিসেবে। আওয়ামী লীগের এমপি বদি টেকনাফের দুর্নীতিবাজ হিসেবে দেশের সবাই চেনেন। যা আওয়ামী লীগের একজন ‘বদ’ হিসেবে পরিচিত। আদালতের দেয়া এই সাজায় খুশি হয়েছেন, সরকারি, বেসরকারি চাকুরিজীবী, বিভিন্ন পেশাজীবীসহ খোদ স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভুক্তভোগি নেতা-কর্মিরা। দেশের মানুষ ‘নিন্দিত বদি’র সাঁজা প্রত্যাশা করেছিলেন।
You must be logged in to post a comment.