‘একটাই কথা আছে দুনিয়াতে, মুখ আর বুক বলে একসাথে- বন্ধু, বন্ধু আমার।’ এই গানটির মতো বন্ধুত্বের স্বর্গীয় অনুভব নিয়ে অনেক গান, গল্প, কবিতা যুগে যুগে রচিত হয়েছে। বন্ধুত্বের বন্ধন চিরকালের, যেখানে ধন্যবাদ অথবা দুঃখিত বলার কোনো অবকাশ নেই! পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থায় এই বন্ধন পায় অমরত্বের পথ।
মহামতি অ্যারিস্টটল এই সম্পর্কের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘এ যেন একই আত্মার দুটি শরীর।’ আমাদের রবীন্দ্রনাথ বলেছেন অভিন্ন এক জগতের কথা। তার ভাষায়, ‘বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বুঝায়। দুইজন ব্যক্তি ও একটি জগত্।’
কবে থেকে মানুষ এ জগতের বাসিন্দা? বোধ করি প্রাণের সূচনা থেকেই। আধুনিক মানুষ শুধু এর গায়ে উদযাপনের বাড়তি রং ঢেলেছে। তাও আবার ব্যবসাসিক প্রয়োজনে! কথাটি এজন্য বলা যে, ১৯১৯ সালে জয়েস হল প্রথম এ বিষয়ে একটি দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। তখন এক বন্ধু অপরকে কার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাত এবং তা আগস্টের প্রথম রোববার। বছরের এই দিনটিকেই কেন বেছে নেওয়া হলো, তা এখন আর জানা যায় না। তবে এই হল সাহেব যে হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা এ সত্য তথ্য।
এরপর দিনটি যখন একটু একটু করে হুজুগে আমেরিকানদের পাতে প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে তখন ১৯৩৫ সালে মার্কিন কংগ্রেস ঘোষণা করে দিনটি পালনের আহ্বান জানায়। অন্তর্জাল অন্তত এমনটাই জানাচ্ছে। সেখানে আরেকটি তথ্য জানাচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশ বিশেষত প্যারাগুয়েতে প্রথম বন্ধু দিবস পালন শুরু হয়। কিন্তু বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবসের ধারণাটি আসে ড. আর্তেমিও ব্র্যাকোর কাছ থেকে। এই সাহেব প্রথম ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই এমন একটি প্রস্তাব করেন ডিনারের টেবিলে বসে। ধারণা করি, তিনি অত্যন্ত বন্ধুপ্রিয় ছিলেন এবং প্রস্তাবটি সেই টেবিলে তুলেছিলেন। সে বছরের ৩০ জুলাই এই গ্রহে প্রথম বিশ্ব বন্ধু দিবস পালন করা হয় এবং বলা যায় বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধনের তাড়নায় দিবসটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে।
যদিও জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেতে দিনটির অনেকদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ শতাব্দীতে এসে (২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল) বড়মিয়া সাধারণ অধিবেশনে ঘোষণা দেন, ৩০ জুলাই পালিত হবে বিশ্ব বন্ধু দিবস। কিন্তু এ উপমহাদেশের মানুষ সে কথা শুনল না। তারা শুনল জয়েস হলের কথা। যে কারণে আমাদের বন্ধু দিবস আগস্টের প্রথম রোববার।
দিবস যায়, দিবস আসে থেকে যায় বন্ধুত্ব। শুধু মানবের জন্যই নয়, অন্যান্য প্রণী, এমনকি রাষ্ট্রের জন্যও বন্ধু প্রয়াজন। এটা এ কারণে যে, বন্ধুর কাছ থেকেই আমরা সবচেয়ে বেশি মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই, এমনকি প্রথম স্বীকৃতিটুকুও চাই সেখান থেকে। এটুকু না পেলে জীবনের শূন্যতা ঘোচে না। এখানে গ্রিক নাট্যকার ইউরিপিদিসকে স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, একজন বিশ্বাসী বন্ধু দশ হাজার আত্মীয়ের সমান। আর এই বন্ধু বেছে নেওয়াটাও কঠিন কিছু নয়।
মানুষের নিয়তি বেছে দেয় আত্মীয়, বন্ধু সে নিজেই বেছে নিতে পারে। সে স্বর্গবাসে যাবে নাকি সর্বনাশের পথে হাঁটবে এ সিদ্ধান্তও তার। সুতরাং চলো বন্ধু হাতে রাখি হাত, কেটে যাক জীবনের সকল উতপাত্।
সূত্র:risingbd.com, ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.