সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / বাংলাদেশে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তোলপাড়

বাংলাদেশে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তোলপাড়

বাংলাদেশে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তোলপাড়

ইতালীয় নাগরিক খুনের পর এক সপ্তাহেরও কম সময়ে বাংলাদেশে দ্বিতীয় এক বিদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি জাপানের নাগরিক হোসি কোনিও (৬৫)।

শনিবার সকালে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মাহিগঞ্জ গ্রামে তাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত সোমবার ঢাকায় কূটনৈতিক এলাকায় হত্যা করা হয় ইতালির এনজিওকর্মী তাবেলা সিজারকে। তাবেলা হত্যায় জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার মনে করছে এটা ‘একটি বিচ্ছিন্ন’ঘটনা। এ হত্যার কোন কূল-কিনারা হওয়ার আগেই শনিবারে খুন হলেন হোসি কোনিও। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া সরব হয়ে উঠেছে। সব মিডিয়াতেই এ খবরকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে।

এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি সহিংসতা নিয়ে উচ্চ সতর্কতা বিরাজ করছে বাংলাদেশে। এ দেশটিতে রয়েছে স্পর্শকাতর আকাশপথ, স্থলপথ ও নৌপথ। এসব পথে সন্ত্রাসীরা এ দেশটিকে ট্রানজিট পয়েন্ট বানাতে পারে। এ দেশটি উদার ইসলামিক রীতি চর্চা করে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কঠোরভাবে ধর্মনিরপেক্ষ। এ বছরে টার্গেট করে হত্যার ঘটনা একটি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে চার ব্লগারকে। ভারত উপমহাদেশে বেশকিছু হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল কায়েদা নেতারা। বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকদের নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার।

তারা বলেছে, বিদেশিদেরকে টার্গেট করা হতে পারে। এমনই আশঙ্কায় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থ ঝুঁকিতে। গত সোমবার নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে বৃটিশ সরকার। পশ্চিমারা সমবেত হন এমন অনুষ্ঠানে বৃটিশ কর্মকর্তাদের সীমিত উপস্থিতির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

অনলাইন জাপান টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ বলেছে- বাংলাদেশের উত্তরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে হোসিকে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে তিনি রিকশায় ছিলেন। তিনি ঘাসের চাষ করেন। সেখানে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে চেপে তিন দুর্বৃত্ত তাকে ঘিরে ধরে খুব কাছ থেকে গুলি করে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি মারা যান।

স্থানীয় থানার ওসি রেজাউল করিম বলেছেন, হোসিকে বুকে, হাতে ও পায়ে গুলি করা হয়েছে। তার লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। তবে কি কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে এ বিষয়ে পুলিশ কোন মন্তব্য করে নি। তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে ঢাকায় জাপান দূতাবাসের এক কর্মকর্তার মন্তব্য চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেছেন, হোসি কোনিও জাপানি নাগরিক হলেও জন্মেছেন বাংলাদেশে। তিনি সহায়তাবিষয়ক ও কৃষি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর এক সপ্তাহেরও কম সময়ে গত সোমবার তিন দুর্বৃত্ত হত্যা করে ইতালির এনজিওকর্মী তাবেলা সিজারকে। এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।

তবে সরকার বলছে, এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এরপর থেকেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অস্থায়ীভিত্তিতে বন্ধ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের স্কুলগুলো। পশ্চিমা দূতাবাসগুলো তাদের কূটনীতিকদের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে। বাংলাদেশ প্রধানত মুসলিম প্রধান দেশ। কিন্তু এ বছরে কয়েকজন ব্লগারকে হত্যায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে কট্টর ইসলামপন্থি গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে।

ওদিকে অনলাইন আউটলুক ইন্ডিয়া লিখেছে, মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা গতকাল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে হত্যা করেছে জাপানের এক নাগরিককে।

পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, দুর্বৃত্তরা যখন হোসিকে গুলি করে তখন তারা ছিল মুখোশধারী। হত্যার পরেই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এতে মনে হচ্ছে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জাপানের এই নাগরিক গত ৬ মাস রংপুরে অবস্থান করছিলেন। ঘটনার সময় তিনি শহরের বাইরে একটি কৃষি খামারে যাচ্ছিলেন রিকশায় করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা এমনটাই বলেছেন।

তাদের একজনের ভাষ্য- হোসি কোনিও একাই ছিলেন রিকশায়। আক্রমণকারীরা ছিল মুখোশ পরা। হোশি ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র তারা তার বুকে, কাঁধে ও হাতে গুলি করে। এরপর একটি মোটরসাইকেলে চড়ে তাত্ক্ষণিক ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। হোসি স্থানীয় লোকজনের কাছে খুবই জনপ্রিয়। কারণ তিনি সহায়তামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে মিলে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি ফার্ম। ওই ব্যবসায়ীকে, হোসি কোনিও বহনকারী রিকশার চালক, ভূমির মালিক ও স্থানীয় অন্য এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ঘাতকদের ধরতে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। এর আগে তাবেরা হত্যার দায় আইএস স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ওই ঘটনা ঘটাতে আইএস স্থানীয় পর্যায়ে তাদের সমমনাদের ব্যবহার করতে পারে- এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেন নি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। ওদিকে নিক্কি এশিয়ান রিভিউও প্রায় একই রকম রিপোর্ট দিয়েছে। তারা জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যার রিপোর্ট দিতে গিয়ে টেনে এনেছে তাবেলা হত্যার প্রসঙ্গ। বলা হয়েছে, ইতালীয় নাগরিক তাবেলাকে হত্যার কয়েক দিনের মধ্যেই হত্যা করা হলো হোশিকে।

পুলিশ বলছে, তারা বিশ্বাস করে যে, তাবেলাকে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস হত্যা করেছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাচলের ব্যাপারে সতর্কতা দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে রংপুরের উপ-পুলিশ প্রধান সাইফুর রহমান বলেছেন, শনিবার কাউনিয়া শহরের বাইরে একজন জাপানিকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি রিকশায় করে তখন কোথাও যাচ্ছিলেন। তিন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে করে এসে তাকে থামিয়ে দেয় এবং গুলি করে। তারপর পালিয়ে যায়। তার লাশ রাখা হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। তাকে গুলি করা হয়েছে খুব কাছ থেকে। তিনি বলেন, ঘাতকদের দুজন তার বুকে দুটি গুলি করে। অন্যজন মোটরসাইকেলেই অপেক্ষায় ছিল। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের শিরোনাম- ‘ইতালিয়ান এনজিও কর্মীকে আইসিস হত্যার কয়েক দিন পরেই বাংলাদেশে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে এক জাপানিকে’। এ ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকা থেকে ২১০ মাইল উত্তরের জেলা রংপুরে। তবে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়। বার্তা সংস্থা সিনহুয়া, অনলাইন এমিরেটস, জাপান টুডে একই রকম রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন আগেই।

নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্কতা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, সরকার যদি সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে জঙ্গি তত্পরতা বাড়তে পারে। নিরাপত্তার জন্য তা হুমকি হয়ে দেখা দেবে। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাফকাত মুনির বলেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কোন পশ্চিমা নাগরিককে হত্যা বা টার্গেট করা হয়নি। সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০০৪ সালে। তখন বাংলাদেশে বৃটিশ হাইকমিশনার ছিলেন আনোয়ার চৌধুরী। তার ওপর সিলেটে হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী। তারপর থেকেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে আইএস ও আল কায়েদাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বেশ কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শাফকাত মুনির বলেন, বাংলাদেশে যেসব গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে তারা সব সময়ই সক্রিয় ছিল এবং এখনও আছে। এর কারণ, বিশ্বজুড়ে জঙ্গি সহিংতার উত্থান। তারাও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করেছে। আগস্টে দেশের আধা সামরিক বাহিনী আইএসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক বৃটিশসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

শাফকাত মুনির বলেন, উচ্চ নিরাপত্তামূলক সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও এসব গ্রুপ হামলা চালাতে সক্ষম। এটা চরম উদ্বেগের বিষয়। সিজার তাবেলা হত্যার পর সতর্কতা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার মনে হয় সতর্কতা উচ্চপর্যায়ে রয়েছে। আমার ভয় হলো- এই ধারা থামবে না। এটা চলতেই থাকবে এবং তা বৃদ্ধিও পেতে পারে।

-শীর্ষনিউজডটকম,ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/