Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / মহেশখালী বিদ্যুৎ-জ্বালানি ছাড়াও মডেল সিটি গড়ে উঠবে

মহেশখালী বিদ্যুৎ-জ্বালানি ছাড়াও মডেল সিটি গড়ে উঠবে

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :
দেশে শিল্প উন্নয়নের পথ বেয়ে বেড়েছে বিদ্যুৎ-জ্বালানির চাহিদা। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের হাত ধরেও। ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ। এই রূপকল্প অনুযায়ী সোনার বাংলার সে অগ্রযাত্রায় প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ জ্বালানি। দেশীয় উৎস থেকে এর পুরোটা মেটানো সম্ভব নয়। তাই অপেক্ষাকৃত কম খরচে অধিকতর নিরাপদ উপায়ে তেল-গ্যাস আমদানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এগুলো শিল্পের, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে জ্বালানির সবচেয়ে বড় সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে দ্বীপ মহেশখালী।

বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, কৃষির পাশাপাশি বাংলাদেশ শিল্প উৎপাদনমুখী দেশ হিসেবে গড়ে উঠছে। মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে এবং আগামী কয়েক বছরে এটি বহুগুণে বাড়বে। ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপাত্তা নিশ্চিত করতে মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন অংশে গড়ে তোলা জ্বালানি অবকাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মহেশখালীতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।এর বাইরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আরো ৩৭টি প্রকল্প রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫৬ হাজার কোটি টাকার ৬৮টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। জ্বালানি প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল, স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্র থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল পাইপলাইনে খালাস, তেল মজুদাগার, সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা উদ্যোগ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার উচ্চতায় থাকা মহেশখালী দ্বীপটিতে নির্মিত হচ্ছে দুইটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, পাঁচটি এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল আনার জন্য সিংগেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম), এসপিএমের আওতায় ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইন এবং তেল মজুদাগার।

মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এবং ধলঘাটা ইউনিয়ন ঘিরে বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মাতারবাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এই দুই ইউনিয়নে সড়কপথ উন্নয়নের কাজ এখন প্রায় দৃশ্যমান। নির্মিত হবে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র চ্যানেল। রেলপথ নির্মাণ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহেশখালীতে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত মূলত লবণ উৎপাদন, মাছ শিকার, পান চাষ এবং শুঁটকি তৈরি ও বিক্রি করে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ আগের লবণের ঘের-মাঠে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগের মাটি বা ইট বিছানো পথের বদলে এখন নির্মিত হয়েছে পিচঢালা এবং সিমেন্টে তৈরি পথ। এসেছে বিদ্যুতের আলো। গড়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি শিক্ষার হার বেড়েছে এবং কমেছে বাল্যবিবাহ। চাষের মাঠ হারানোর দুঃখ কারো করো মধ্যে থাকলেও নতুন কর্মসংস্থান এবং আয়ের উৎস পেয়েছেন তারা।

মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মহেশখালী শুধু উৎস জ্বালানির কেন্দ্র নয়, মডেল সিটি হিসেবেও গড়ে উঠবে। ধলঘাটের স্থলভাগে দুটি এলএনজি টার্মিনালের পাশাপাশি আরো একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করবে সরকার। তিনটি টার্মিনাল দৈনিক ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে। পেট্রোবাংলা এবং সামিটের দুটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে আরো আগেই। এই দুটির দৈনিক সরবরাহ ক্ষমতা ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

মহেশখালী ধলঘাটা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী এই এলাকায় ইতিমধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি। সগর্বে জানান দিচ্ছে অন্য অবকাঠামোগুলো। সাগরের কোলে এক মহাযজ্ঞ কর্মকান্ডের সাক্ষী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এই কেন্দ্রটি। প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ৫ হাজার বিঘা জমিতে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৩-১৪ সালে। ৬০০ মেগাওয়াটের দুইটি ইউনিট থাকবে কেন্দ্রটিতে। জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এতে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকার অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। মহেহশখালীর নিকটবর্তী সমুদ্র এলাকায় নির্মিত হচ্ছে তেল খালাসে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন। এটি বাস্তবায়ন হলে সাগর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি দেশের তেলের পাইপলাইন নেটওয়ার্কে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে। এছাড়া এখান থেকে দেশের সব আমদানি করা তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-ঢাকায় পাঠানোর জন্য স্থাপনা করা হচ্ছে ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন। মহেশখালীর কালারমারছড়াতে তেল মজুতের জন্য বিশাল অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

গভীর সমুদ্র থেকে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের (এসপিএম) মাধ্যমে সরাসরি মাদার ভেসেল থেকে তেল মজুদাগারে জ্বালানি তেল খালাস করা হবে। এসপিএম প্রকল্পটি চালু হলে বার্ষিক আয় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে সরকারের। গভীর সমুদ্রে নোঙর করা বড় জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল খালাসে আর লাইটার জাহাজের প্রয়োজন হবে না। পাইপলাইনের মাধ্যমে মাত্র ৪৮ ঘন্টায় খালাস করা যাবে ১ লাখ ২০ হাজার টন তেল। এ পরিমাণ তেল বর্তমানে খালাস করতে অন্তত ১২ দিন সময় প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ টাকার পাশাপাশি সময়ও সাশ্রয় হবে। এছাড়া বিভিন্ন সময় অবরোধ-নাশকতার আশঙ্কা থাকলে তেল সরবরাহে দেরি হতো সেটিও ভবিষ্যতে হবে না। বাড়বে জ্বালানি তেলের মজুত ক্ষমতাও।

কেন্দ্রটির তড়িৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান জানান, আগামী ২০২৪ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে। প্রকল্পের কাজও ইতোমধ্যে ৮৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জানা যায়, এসপিএস প্রকল্পে সমুদ্রভাগে ১৩৫ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এ ছাড়া এইচভিডি ক্রসিংয়ের জলভাগ অংশে ১১ কিলোমিটারসহ মোট ১৪৬ কিলোমিটার। তাছাড়া স্থলভাগের পাইপলাইন ৭৪ কিলোমিটার। সবমিলিয়ে ১৮ ইঞ্চি ও ৩৬ইঞ্চি ব্যাসের ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মিত হচ্ছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

লামা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে নববর্ষ পালিত

  মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম :“নব আশায়, নব প্রভাতে নববর্ষের প্রতিটি দিন সবার জীবনে নতুন ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/