সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ৮ বছরের নানা বাঁধা পেরিয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু

৮ বছরের নানা বাঁধা পেরিয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু

দীপক শর্মা দীপু; কক্সভিউ :

৮ বছরে নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা আর আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের নিজস্ব ক্যাম্পাসে ৮ বছর পর ৮ জানুয়ারী রবিবার মুখরিত হয়ে উঠে। ৬ তলার বিশাল একাডেমী ভবন অফিস, শ্রেণীকক্ষ, অধ্যক্ষ আর শিক্ষকদের কক্ষ সাজানো হয়েছে। পরিপাটি করা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীর পৃথক দু’টি ছাত্রাবাস। সাজানো হয়েছে বিশালায়তনের পাঠাগার কক্ষ। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারি সবার চোখে-মুখে ভেসে উঠেছে জয়ের স্মিত হাসি। কক্সবাজারে স্থান করে নিল চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার আলোকিত বাতিঘর। আর এই জয়যাত্রায় স্থানীয় সচেতন অনেক মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষা যেমন রয়েছে তেমনি কিছু শিক্ষক,কর্মচারি আর ছাত্রদের অবদানও রয়েছে।

‘কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য জমি না পাওয়া, জমি পাওয়ার পর অধিগ্রহণ করতে না পারা, অধিগ্রহণ করতে গিয়ে নানা ঝামেলা সৃষ্টি হওয়া, মন্ত্রালয়ের জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, কক্সবাজারের ক্যাম্পাসের অর্থ অন্য জেলায় চলে যাওয়া, কক্সবাজারে মেডিকেল কলেজ স্থাপন না করে অন্য জেলায় চলে যাওয়া, করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ কক্সবাজারে নিজস্ব জমিতে স্থাপন করার তীব্র আন্দোলন-সংগ্রাম করা, শিক্ষক আর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করা, ভবন নির্মানের জটিলতা, ষড়যন্ত্র সহ ৮ বছরে নানা বাঁধা-বেদনা পেরিয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ তার নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছেন।’

নিজস্ব ক্যাম্পাস পাওয়ার আন্দোলকারি একজন সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু বলেন-‘সন্তান প্রসবের বেদনা যেমন মা সন্তানের মুখ দেখে ভুলে যান তেমনি ৮ বছরের বেদনা ভুলে গিয়ে হাসি ফুটেছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের।’

কক্সবাজারের কৃতি সন্তান সাবেক সচিব এ.এম.এম নাছির উদ্দিন ও হুমায়ুন কবির এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা: মো: আবুল ফয়েজের আন্তরিক প্রচেষ্টায়  ২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর ‘কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ’ প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে। অনুমোদন পেয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য অপেক্ষা না করে জেলা সদর হাসপাতালের নির্মিত আইসিইউ, সিসিইউ ভবনে কলেজের দাপ্তরিক কর্ম শুরু হয়। ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারী কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে স্বাধীনতা পরবর্তি প্রথমবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের নাম কক্সবাজারের বুকে অংকিত হয়। তখন শুরু হয় কক্সবাজার থেকে মেডিকেল অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়ার নানা ষড়যন্ত্র। মেডিকেল কলেজের জন্য কক্সবাজারে জমি না পাওয়া আর জমি পাওয়া গেলেও অধিগ্রহণ করতে না পারার কারণে ঢাকায় বসে থাকা উচ্চ পদস্থ কর্তারা তাদের নিজ-নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালান। অবশেষে গোপালগঞ্জ জেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে চুড়ান্ত হয়ে যায়। কক্সবাজারে জমি না পাওয়া আর অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সচেতন সাংবাদিকরা আন্দোলনে নামে। আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় ছাত্র-ছাত্রীরা। জেলা প্রশাসক এ অসংখ্যবার বৈঠক হয়। এতে সমাধান না হওয়ায় মাঠে নামে শিক্ষার্থীরা। প্রধান নিকট বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, অসংখ্যবার মানববন্ধন কমসূচী পালন, ক্লাস বর্জন, সর্ব শেষ কক্সবাজারে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর আগমনে অনশন ধর্মঘট পালন করা হয়ে। শুরুতে যোগদান করা অধ্যক্ষ বি.এম. আলী ইউসুফ মন্ত্রণালয়ের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করা থেকে সার্বিক আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি জানার পর সমস্যা সমাধান করে দ্রত ক্যাম্পাস নির্মানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

জানা যায়, ৩২.৪০ একর জায়গায় ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে একাধিক ভবন ছাড়াও রয়েছে শহীদ মিনার, মসজিদ, পৃথক ২টি ছাত্রাবাস ভবন, প্রশস্থ শ্রেণি কক্ষ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাঠাগার, ডরমেটরি, কেন্টিন, খেলার মাঠ।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন- ৮ জানুয়ারী শ্রেনি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে প্রত্যেক শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা যেমন উপস্থিত ছিলেন, তেমনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদাচরাণায় মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস। আগামি ১০ জানুয়ারি ২০১৬-২০১৭ শিক্ষা বর্ষ এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিকৃত নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের ওরিয়েন্টেশ ক্লাসের মাধ্যমে ৯ম ব্যাচের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে। এটি বাংলাদেশের একটি আধুনিক স্বয়ং সম্পন্ন মেডিকেল কলেজ।

৬ ব্যাচে ৫৭ জন করে ৩৪২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দক্ষ শিক্ষক রয়েছেন ৬৭ জন। সবুজের মাঝে গড়ে উঠা এ কলেজ হবে দেশের একটি আকর্ষনীয় মেডিকেল কলেজ। এখানে পড়ালেখা মান বেড়েছে। ভালো ফলাফল অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন-‘নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এ কলেজ ক্যাম্পাস হয়েছে। অনেকে এখনো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। পক্ষান্তরে অন্য সবার সহযোগিতায় উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত করতে পারছেননা। তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে আগামিতে পথ চলতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/