সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ধর্মীয় / শুভ মধু পূর্ণিমা আজ

শুভ মধু পূর্ণিমা আজ

অনলাইন ডেস্ক :
আজ শুভ মধু পূর্ণিমা। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব আজ। বৌদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসে এটি অন্যতম এক শুভ তিথি। বিশেষ করে বর্ষাবাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমাতে এটি উদযাপিত হয়। বর্ষাবাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমা তিথি ভাদ্র মাসে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। তাই এর অপর নাম ভাদ্র পূর্ণিমা। তবে বিশ্বে এটি ‘মধু পূর্ণিমা’ নামে পরিচিত।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মধু পূর্ণিমার শুভ এই দিনটি নানা উৎসব, আনন্দ ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেন। নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এই দিন বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে মধু দান করার জন্য উত্সবে মেতে ওঠেন। বিহারে দেখা যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মধুদানের এক আনন্দঘন পরিবেশ। বিহারে সন্ধ্যায় বৌদ্ধকীর্তন ও পুঁথিপাঠ করা হয় এবং বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা ও প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়।

ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও বুদ্ধপূজা, প্রদীপ, ধূপপূজা, ভিক্ষুকে আহার্য দান, ধর্মীয় সভা ও বুদ্ধ-কীর্তন পরিবেশিত হবে। দেশের সব বৌদ্ধ বিহারে মধু পূর্ণিমা পালিত হবে। এতে বৌদ্ধ নর-নারী সকাল থেকেই বিহারে উপস্থিত হয়ে প্রার্থনায় অংশ নেবেন।

ভগবান গৌতম বুদ্ধের সমগ্র জীবন ইতিহাস প্রকৃতির হাত ধরে। রাজকীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও রাজপ্রাসাদে জন্ম হয়নি। তাঁর জন্ম হয়েছিল হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত লুম্বিনী কাননে। পরবর্তীতে তিনি বিত্তবৈভব, পরিবার-পরিজন এবং রাজপ্রাসাদ ছেড়ে নৈর্বানিক এবং বিমুক্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য গৃহত্যাগ করেন। মানবজীবনের দুঃখ দৈন্যতা দেখে দুঃখ মুক্তির জন্য বুদ্ধ কঠোর ধ্যান সাধনা করেন গভীর অরণ্যে।

এক সময় বুদ্ধ কৌশাম্বীতে অবস্থান করছিলেন। সে সময় ভিক্ষুদের মধ্যে বিনয় সম্পর্কিয় এক তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে কলহ-বিবাদের সৃষ্টি হয়। ক্রমেই কলহ কৌশাম্বীর সকল আবাসিক ভিক্ষুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভিক্ষুরা দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এক সময় বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বুদ্ধ ভিক্ষুদের আহ্বান করে কলহ-বিবাদ করা অনুচিত বলে বোঝাতে চেষ্টা করেন। বুদ্ধের নানাবিধ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কৌশাম্বীবাসী ভিক্ষুরা কলহ থেকে বিরত হলেন না। নিজেদের মধ্যে কলহ ত্যাগ করে প্রীতির সম্পর্ক তৈরী করতে পারলেন না। তখন বুদ্ধ কৌশাম্বীবাসী ভিক্ষুদের সংসর্গ ত্যাগ করে নিজে একাকী নির্জন গহীন বনে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। একসময় তিনি চলে গেলেন পারিল্যেয় নামক বনে। ভিক্ষুদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে তিনি সেখানে স্বাচ্ছন্দে অবস্থান করতে লাগলেন। বুদ্ধ বনের মধ্যে একটি ভদ্রশাল গাছের নিছে আশ্রয় নেন।

ভগবান বুদ্ধ দশম বর্ষাবাসের জন্য পারিলেয়্য বনে চলে যান। সেখানে গিয়ে বুদ্ধ দেখতে পেলেন একটা বৃদ্ধ হাতি অন্য হাতিদের দ্বারা নিগৃহীত হয়ে অখাদ্য, অপুষ্টিকর খাবার খেয়ে বেঁচে আছে। বুদ্ধ তখন তাকে সেবা-শুশ্রুষা করা শুরু করলেন। এর বিনিময়ে হাতিও বুদ্ধকে সেবা করলো নানাভাবে। বুদ্ধের থাকার জায়গা করে দিল, দিনরাত পাহারা দিত, বনের ফলাদি আহার্য এনে দিত, বুদ্ধের ব্যবহার্য জল এনে দিত। ভগবান বুদ্ধ ভিক্ষার জন্য বের হলে পাত্র নিয়ে যেত। মানুষের মতো পশুর মধ্যে বোধশক্তি আছে তা-ই প্রমাণ করল এই হস্তীরাজ। বুদ্ধ এবং হাতির এমন সম্পর্ক দেখে বনের বানরের মনেও বুদ্ধকে সেবা করার ইচ্ছা জাগে। এ সময় বানর গাছের মধ্যে একটি মৌচাক দেখতে পেল। তখন বানর উৎফুল্ল মনে সিদ্ধান্ত নিলো মৌচাকটি বুদ্ধকে দান করবে। মৌচাকের মধু দান করে বানর খুশিতে গাছে লাফাতে লাফাতে হঠাৎ গাছের শাখা ভেঙ্গে বানরটি গাছ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করল। পরে বানরটি পুণ্যবলে তাবতিংস দেবলোকে জন্মগ্রহণ করে। বানর কর্তৃক বুদ্ধকে মধু দানের এই বিরল ঘটনাটি ঘটেছিল ভাদ্র পূর্ণিমা তিথিতে। তাই ভাদ্র পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে মধু পূর্ণিমা নামে অত্যধিক পরিচিত। এই অনন্য ঘটনাকে স্মরণ করে বৌদ্ধরা এই পূর্ণিমা তিথিতে ভিক্ষু সংঘকে মধুদান করেন। এইসব কারনে ভাদ্র পূর্ণিমাকে মধু পূর্ণিমা বলা হয়ে থাকে। এছাড়া কৌসাম্বীর ভিক্ষুরাও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে কলহ ত্যাগ করেন এবং পারস্পরিক মধুময় সম্পর্ক সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। বৌদ্ধরা এই পূর্ণিমাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকেন। এই দিন বৌদ্ধরা উপোসথ শীল পালন করে থাকে।

মধু পূর্ণিমা আমাদের সেই মহৎ শিক্ষাই দিচ্ছে। আমরা যেন আমাদের মানবীয় গুণাবলিতে পুনরুজ্জীবিত-সিক্ত হই এবং দানে, ত্যাগে ও পরোপকারে বিশ্ব মানবতায় এগিয়ে যাই। ভাদ্র মাসের শুভ মধু পূর্ণিমা দিনটি বৌদ্ধদের জন্য ত্যাগ ও ঐক্যর মহিমায় সমুজ্জবল। প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে উৎসবমূখর পরিবেশে মধু দানের স্মৃতিকে ধারণ করে মধু পূর্ণিমা পালন করে থাকেন।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর কালিরছড়ায় অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে প্রার্থী হলেন নুরুল আমিন

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অসহায় ও হত দরিদ্র মানুষের মুখে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/