সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / অনুসন্ধানী প্রতিবেদন-৩ শ্রমের বাজার রোহিঙ্গাদের দখলে

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন-৩ শ্রমের বাজার রোহিঙ্গাদের দখলে

হুমায়ুন কবির জুশান; উখিয়া :

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীর অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তিতে চলছে চরম খাদ্য ঘাটতি। প্রায় অর্ধলক্ষাধিক ছিন্নমূল রোহিঙ্গা নাগরিক তাদের দুবেলা দুমোটো অন্নের তাগিদে প্রতিদিন ভোর সকালে কাজের সন্ধানে ঝুঁপড়ি ছেড়ে শহর বন্দর গ্রাম থেকে গ্রামান্তর হাট বাজার লোকালয়ে ঘুরে বেড়ালেও এদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। ফলে স্থানীয় নাগরিক জীবন যাপনে বিরাজ করছে নানামুখি সমস্যা, দুভোর্গ ও বিড়ম্বনা। বিশেষ করে শ্রমের বাজার রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে স্থানীয় খেটে খাওয়া অসহায় পরিবার গুলোকে পোহাতে হচ্ছে মানবেতর দিনযাপন।

জানা গেছে, ২০১০ সালে সীমান্তের নাফ নদী অতিক্রম করে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা স্ব-পরিবারে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার কুতুপালং রেজিষ্ট্রাড শরণার্থী শিবিরের পাশ্বস্থ বনভূমির সৃজিত বাগান ধ্বংস করে ঝুঁপড়ি বেধে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ গত ১১ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে বনভূমিতে ঝুপঁড়ি বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এসময় উখিয়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা বন কর্মীদের নিয়ে রোহিঙ্গাদের দখলীয় বন বাগান উদ্ধার করতে গেলে রোহিঙ্গারা বনকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থলে বিট কর্মকর্তা সহ বেশ কয়েক জন বনকর্মী আহত হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নিদের্শক্রমে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ করিম পুলিশ বাহিনীর সহযোগীতায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর একাধিক বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এসময় বিদেশী সাহায্য সংস্থার চাপের মুখে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ভাবে আশ্রয় দিলেও তাদের খাদ্য সহ যাবতীয় সাহায্য সহযোগীতা না করার জন্য রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত এনজিও গুলোর প্রতি নিদের্শ প্রদান করেন জেলা প্রশাসন। তথাপি সরকারের অনুমতিক্রমে এম.এস.এফ (হল্যান্ড) ও এসিএফ ওই সব অবৈধ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা, সুপেয়পানি ও সেনিটেশন সুবিধা দিয়ে আসছে।

এদিকে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা না পাওয়ার সুবাদে বর্তমানে ওই রোহিঙ্গা বস্তিতে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে বলে বস্তিতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অভিমত। কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শন করে, রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে দেখা যায় অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশে রোহিঙ্গারা দৈনন্দিন জীবন যাপন করছে। ঝুঁপড়িতে বসবাসরত মরজান বিবি (৫৫) নামের এক বৃদ্ধ মহিলা জানালেন, বড় ছেলে নবী হোছন (২৮) মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে নিখোজ হয়ে গেছে বছর দেড়েক আগে। বর্তমানে তার বউ তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনযাপন করতে হচ্ছে। পাশের ঝুঁপড়ির বৃদ্ধ হাকিম আলী (৬০) জানালেন, দিনের বেলায় ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। বস্তির রোহিঙ্গা মহিলা কুলসুমা বেগম (৩৫) জানান, এখানে কোন এনজিও বা বেসরকারি সংস্থার লোকজন সাহায্য করতে আসলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এ ভয়ে সাহায্য সহযোগীতা করতে কেউ এগিয়ে আসেনা। রোহিঙ্গা এনায়েত উল্ল­াহ (৪৫) জানালেন, অভাব অনটনে বিনা চিকিৎসায় কত রোহিঙ্গা শিশু বৃদ্ধ মারা গেছে তার কোন হদিছ নেই।

বস্তির কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক আলম (২২), সোনা মিয়া (১৮), রফিক (১৪) জানালেন, বাইরে লোকালয়ে কাজ করতে গেলে অনেককে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে হয়। অন্যথায় কাজ করে ফেরার সময় তারা শ্রমের টাকা কেড়ে নেয়। এ ভয়ে অনেকেই বস্তির বাইরে যেতে চায়না। তুবুও জীবন জীবিকার তাগিদে রোহিঙ্গারা ভোর সকালে বের হয়ে তাদের হাত করে বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে চলে যায়। সারাদিন কাজকর্ম করে তারা আবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পে ফিরে আসে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চলাফেরা করার সুযোগ পেয়ে তারা বিভিন্ন হোটেল রেষ্টুরেন্ট, বাসা বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজসহ চাষাবাদের কাজে রোহিঙ্গারা কম মজুরীতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে স্থানীয় শ্রমের বাজার রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে বলে জানালেন উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, এসব অবৈধ রোহিঙ্গার কারণে শুধু শ্রম বাজার নয় এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন হতে চলেছে। কুতুপালং এলাকার জালাল উদ্দিন জানান, এসব নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সরকারি-বেসরকারি কোন সাহায্য সহযোগীতা দেওয়া যাচ্ছে না বিধায় তারা বেঁচে থাকার তাগিদে ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে নানা ধরনের কাজ কর্ম করবে।

সচেতন মহল বলছেন, বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত বিভ্ন্নি এনজিও সংস্থা ও ইউএনএইচসিআর এর কার্যকলাপে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের সেবার নামে এদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের জলাঞ্জলি দিয়ে রোহিঙ্গাদের জামাই আদর করছে। তাদের রোহিঙ্গা প্রীতির কারণে সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গারা এদেশে অবাদে বিচরণ করার সুযোগ পেয়ে সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে। চুরি, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়ে জেলার আইনশৃংখলার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করতে আরো কঠোর ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আটক করে তাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে যথ দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করার আহবান জানান।

উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রফিক উদ্দিন বাবুল জানান, কুতুপালং ক্যাম্পের পার্শ্বে যেসব রোহিঙ্গা ঝুপড়ি তৈরী করে বসবাস করছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে উখিয়ার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও শ্রমবাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। অবৈধ ভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সরকারের প্রয়োজন মনে করেন তিনি।

সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ঝুঁপড়িতে বসবাস করা রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের চার পাশে বাউন্ডারী না থাকায় তারা অবাধে চলাচল করছে। ফলে তারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ওই সব রোহিঙ্গারা পর্যাপ্ত সাহায্য সহযোগীতা না পাওয়ায় বাইরে গিয়ে কাজ কর্ম করছে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর সংবাদকর্মী আবু হেনা সাগরের মাতা অসুস্থ : দোয়া কামনা 

  বার্তা পরিবেশক : কক্সবাজারে ঈদগাঁও উপজেলার সংবাদকর্মী এম আবুহেনা সাগরের মাতা অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের ইবনে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/