সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / তথ্য ও প্রযুক্তি / উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাল্টে যাচ্ছে কেবল টিভির ভবিষ্যৎ

উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাল্টে যাচ্ছে কেবল টিভির ভবিষ্যৎ

এইচডি টেলিভিশন দেখার প্রধান মাধ্যম সেটটপ বক্স। ছবি: সংগৃহীত

দেশের প্রায় প্রতিটি খাতে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগলেও কেবল টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এক সংযোগে অনেক গ্রাহক যুক্ত করার মত অ্যানালগ পদ্ধতিই ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ফলে বাংলাদেশের দর্শকেরা টেলিভিশন দেখার ক্ষেত্রে কেবল অপারেটরের পছন্দ এড়িয়ে নিজ পছন্দে উন্নত মানের এইচডি (হাই ডেফিনিশন) চ্যানেল, নিখুঁত সাউন্ড ও অন্যান্য ভ্যালু অ্যাডেড অত্যাধুনিক সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে টেলিভিশন দেখার ক্ষেত্রে দেশের এই প্রেক্ষাপটের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে, শুধু টেলিভিশন সেটের সাথে একটি সেপ-টপ বক্স যুক্ত করে।

ডিজিটাল সংযোগে নিখুঁত টেলিভিশন দেখার প্রযুক্তিটি ২০১৫ বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আমদানি করে ‘বেঙ্গল ডিজিটাল’ পরবর্তীতে ২০১৬ সালের এপ্রিলে বেক্সিমকো কমিউনিকেশনের ‘রিয়েল ভিউ’ ও ‘জাদু ডিজিটাল ব্রডব্যান্ড লিমিটেড’ নামে অন্য দুটি কোম্পানিও এই সুযোগ গ্রাহকদের দ্বারে পৌঁছে দেয়। তবে বেক্সিমকোর সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহক তার বাড়িতে একটি রিসিভার বসিয়ে সরাসরি স্যাটেলাইট সিগন্যাল গ্রহণ করেন যাকে বলা হয় ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) প্রযুক্তি। ডিটিএইচ-এ অ্যানালগ পদ্ধতির মত তারের মাধ্যমে প্রতিটি টিভি সেটে আলাদা করে সংযোগ দেওয়ার কোন প্রয়োজন পড়ে না। এ প্রযুক্তিতে সিগন্যাল ডাউনলিংকের মাধ্যমে ছবি ও শব্দ আসে কেবল সংযোগের চেয়ে অনেক বেশি গতিতে। ফলে গ্রাহকরা একই সঙ্গে উন্নত ছবি ও নিখুঁত শব্দ পেয়ে থাকেন। তবে গ্রাহকের বাড়িতে রিসিভার না বসিয়ে ভিন্ন প্রযুক্তিতে ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের মাধ্যমে ডিজিটাল টেলিভিশন দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে ‘বেঙ্গল ডিজিটাল’ ও  ‘জাদু ডিজিটাল ব্রডব্যান্ড লিমিটেড’। ডিটিএইচ এর সাথে ডিজিটাল কেবল সংযোগের পার্থক্য হল, ঝড়-বৃষ্টি বা আবহাওয়ার পরিবর্তনে কেবল সংযোগের সিগন্যালে কোন পরিবর্তন হয় না।

যে সুবিধা দিচ্ছে সেট-টপ বক্স 

প্রচলিত অ্যানালগ ডিশ সংযোগে নির্দিষ্ট কিছু চ্যানেল দেখার সুযোগ থাকে। সেটার ছবির মান বা শব্দও আবার অনেক ক্ষেত্রেই স্পষ্ট নয়। কিন্তু সেট-টপ বক্সের মাধ্যমে ডিজিটাল সংযোগ নিলে ঝকঝকে ছবির সাথে নিঁখুত শব্দও পাওয়া যাবে। দর্শকরা দেখতে পাবেন অত্যাধুনিক এইচডি চ্যানেল। উল্যেখ্য যে, বাংলাদেশেও এখন প্রায় ১০টির বেশি এইচডি চ্যানেল রয়েছে। এছাড়া সেট-টপ বক্স দিয়ে ইপিজি (ইলেকট্রনিক প্রোগ্রাম গাইড, ওটিটি (ওভার দি টপ), ভিওডি (ভিডিও অন ডিমান্ড) ইত্যাদি সেবাও পাওয়া যায়। যেমন কোন নির্দিষ্ট একটি অনুষ্ঠান দেখার সময় যদি কোন গ্রাহক ব্যস্ত থাকেন তবে ওই অনুষ্ঠানটি সেট-টপ বক্সের মাধ্যমে পেনড্রাইভ বা পোর্টেবল হার্ডডিস্কে রেকর্ডও করে রাখতে পারবেন এবং সুবিধামত সময়ে দেখতে পারবেন। এছাড়াও ওটিটি-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সার্ভার থেকে সব অনুষ্ঠান ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেখতে পারবেন।

অ্যানালগ ডিশ সংযোগে অতি নিম্নমানের সেবা গ্রহণ করেও প্রতি মাসে গ্রাহককে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থায় গ্রাহকের চাহিদা মত চ্যানেল দেখতে পারেন। সেক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী প্যাকেজ বড় বা ছোট হতে পারে, এতে গ্রাহকের বিলের পরিমাণও কম-বেশি হবে। অর্থাৎ কম চ্যানেল দেখলে বিল কম আবার বেশি চ্যানেলের জন্য বেশি বিল প্রযোজ্য। তাছাড়া অ্যানালগ সংযোগে গ্রাহকের চ্যানেল চয়েস করার কোন সুযোগ নেই, অপারেটর যে চ্যানেল দেখাবে তাই দেখতে হয়। কিন্তু সেট টপ বক্সের মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার নিজের পছন্দমত যে কোন চ্যানেল ফেভারিট লিস্টে দেখতে পারেন।

একটি সেটটপ বক্সই আপনার টেলিভিশন দেখার অভিজ্ঞতাকে পাল্টে দিতে পারে।

এই সেবার মাধ্যমে দর্শকের পছন্দের কোন অনুষ্ঠান মিস হয়ে গেলে অথবা হঠাৎই পুরনো কোন অনুষ্ঠান দেখার প্রয়োজন হলে গ্রাহক ৭২ ঘন্টার পর্যন্ত পুরনো অনুষ্ঠান দেখতে পাবে এমন একটি প্রযুক্তিও চালু হতে যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই। তাছাড়া একটি সেপটপ বক্সের মাধ্যমে একই সাথে একটি টিভি সেটে একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলও দেখা যাবে। সেটটপ বক্সের এই সেবাটি একজন গ্রাহক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। এছাড়া এই সেবা গ্রহণের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে, সেবাদানকারী কোম্পানির সার্পোট সেন্টার গ্রাহকের জন্য ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। ফলে একজন গ্রাহক যে কোন অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ামাত্র তা সমাধানের সুযোগ থাকে।

খরচ কেমন?

ডিজিটাল টেলিভিশন দেখতে একজন গ্রাহককে কত টাকা খরচ করতে হবে? এ প্রশ্নের জবাবে জাদু ডিজিটালের মার্কেটিং (কেবল অ্যান্ড ইন্টারনেট ডিভিশন) প্রধান ইশরাক ঢালী প্রিয়.কম’কে বলেন, ‘গ্রাহকের চাহিদা, রুচি, ক্রয়ক্ষমতা এবং আমাদের খরচ ইত্যাদি সমন্বয় করে সর্বনিম্ন খরচে সেবাটি দেওয়ার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে একজন গ্রাহককে প্রথমে একটি সেট-টপ বক্স কিনতে হবে। যা এসডি সেট-টপ বক্স এর (স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন, এইচডি নয় এমন টেলিভিশনের জন্য) ক্ষেত্রে ২৫০০ টাকা এবং এইচডি সেট-টপ বক্সের (এইচডি টেলিভিশনের জন্য) ক্ষেত্রে ৩৫০০ টাকা। এই খরচের পর প্রতিমাসে গ্রাহককে শুধু সংযোগ বিল দিতে হবে। সংযোগ বিলটি আবার চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে একজন গ্রাহক ৩০০ টাকায় ১৫০টি চ্যানেল, ৪০০ টাকায় ১৭৫টি চ্যানেল, ৫০০ টাকায় ২০০টি চ্যানেল এবং ৬০০ টাকার প্যাকেজে ২৮০টি চ্যানেল দেখতে পারবেন।’

ইশরাক ঢালী আরো জানান, ‘বিল পে করার ক্ষেত্রেও ঝামেলা নেই। গ্রাহক চাইলে আমাদের প্রতিনিধি বাসায় গিয়ে বিল নিয়ে আসবেন। আবার তিনি যদি চান তবে ব্যাংক একাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমেও তা বিল পরিশোধ করতে পারবেন এমন সেবা অচিরেই যুক্ত হবে।

বাড়াবে জাতীয় রাজস্ব

টেলিভিশন বিনোদনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নের সাথে সাথে টেলিভিশন ডিজিটালাইজেশনের এই প্রক্রিয়া জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে। পুরনো অ্যানালগ প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি অপারেটর কতজন গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে সেটা সঠিকভাবে নিরূপন করা সম্ভব হয় না বলে সরকার প্রতি বছর শত কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে খুব সহজেই সেই চলতি সংযোগ সংখ্যা নিরূপন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ থাকে না। তাই এই সংযোগ গ্রহণের মাধ্যমে একজন গ্রাহক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ণেও অবদান রাখতে পারছেন। তাছাড়া জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮ এর প্রাথমিক ঘোষণায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ১ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে টেলিভিশন সংযোগের ক্ষেত্রে সেট-টপ বক্স ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে বিষয়টি পাশ না করে বিবেচনাধীন রাখা হয়েছে। হয়তো অতি শীঘ্রই আমরা এমনটি দেখব যে, অ্যানালগ সংযোগ ব্যবহার করে টেলিভিশন দেখার সুযোগই থাকবে না।

 

সূত্র:আবু আজাদ-priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর কালিরছড়ায় অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে প্রার্থী হলেন নুরুল আমিন

  নিজস্ব প্রতিনিধি; ঈদগাঁও :কক্সবাজারের ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অসহায় ও হত দরিদ্র মানুষের মুখে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/