এম আবুহেনা সাগর; ঈদগাঁও :
চাকুরী নিয়মিতকরণ, চাকুরীচ্যুতদের পূন:বহাল ও কাজের পরিমাণ কমানোর দাবীতে কক্সবাজারেও পল্লী বিদ্যুতের মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জারগণদের ৪র্থ দিনের মত কর্মবিরতি কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। ২০ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার পবিসের সদর দপ্তরে এ কর্মবিরতি চলে। কর্মসূচীতে সদর দপ্তর, উখিয়া জোনাল অফিস, টেকনাফ জোনাল অফিস, মহেশখালী জোনাল অফিস, ঈদগাঁও সাব জোনাল অফিস, চকরিয়া জোনাল অফিসের চুক্তিভিত্তিক ৯২ জন মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার অংশ নেন।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায় ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার (চুক্তিভিত্তিক) হিসেবে কর্মরত আছে তারা। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা মোতাবেক – শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। কিন্তু দু:খের বিষয় ঘরে ঘরে মিটার লাগলেও গণহারে তাদেরকে ছাটাই করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে অনুষ্ঠিতব্য বিগত ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর ৪৯৪ তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নং ১২৫৯২ মোতাবেক একই একই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে ৯ বছর চাকুরী করার পর অভিজ্ঞতার আলোকে বিহীন সমিতিতে আবেদনের মাধ্যমে পরীক্ষা ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত চাকুরী গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকতারা তাদের অসৎ উদ্যোর্শ হাসিলের জন্য উক্ত বোর্ডের সিদ্বান্ত বরখেলাপ করার পায়তারা করছেন পাশাপাশি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যায়কে নস্যাৎ করার নীল নকশা প্রণয়নে পায়তারা করছে। পূর্বে বিদ্যুৎ ছিল উপজেলা ও জেলা শহরসহ প্রায় এলাকায় বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে উন্নত সমৃদ্বশালী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গ্রামে-গঞ্জে বা পাহাড় পর্বতসহ উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। যার কারণে পূর্বের ন্যায় কাজ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া পূর্বে বাড়ীঘরে মিটারও ছিল এনালগ। যা সহজে রিডিং করা সম্ভব, আর বর্তমানে মিটার হচ্ছে ডিজিটাল। যা রিডিং করতে এনালগ মিটারের প্রায় তিনগুণের বেশি সময় ব্যয় হয়।
এমতাবস্থায় চলতি ২০১৮ সালের গত জানুয়ারী থেকে দুই হাজার রিডিং এবং সমপরিমাণ বিল বিতরন করার নিদের্শ দিয়ে দপ্তরাদেশ করেন। অথাৎ তাদেরই কাজের পরিমান দ্বিগুণ করা হয়েছে। তারা কাজ সঠিকভাবে করতে পার ছেনা। সমিতিকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার লক্ষে তারা তাদের বেতনের টাকা দিয়ে তাদের চাকুরীচ্যুত সহকর্মীদের দিয়ে কাজ করে চাকুরী বাঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কাজের বোঝা দ্বিগুণ হওয়ায় তাদের পক্ষে কঠিন কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। যার ফলে অফিস ভূতুড়ে বিল করে তাদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়। এতে মাননীয় সংসদ সদস্যরা এলাকায় জনসভা করতে গেলে জনগণের রোষানলে পড়ে। এতে সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। কাজ সঠিকভাবে করতে গিয়ে তারা ১৬ ডিসেম্বর, ১৫ আগষ্ট, ২৬ মার্চ ও ২১ ফ্রেরুয়ারীর মত মহান জাতীয় দিবসসমূহের দিনগুলোতেও কাজ করতে হচ্ছে।
তাছাড়া কাজের পরিমাণ দ্বিগুণ করায় তা সঠিকভাবে করতে গিয়ে তারা শারিরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এতে তাদের মানবতা বিপন্ন হয়েছে। এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার ব্যতিত আর অন্য কোন পদের কর্মচারীদের উপর এমন দ্বিগুন কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়না। তারা চুক্তিভিত্তিক বলেই তাদের উপর নির্যাতন সরুপ জোরপূর্বক অতিরিক্ত কাজ ছাপানো হয়েছে।
উন্নয়ন মেলা ২০১৮ সালের তথ্য অনুয়ায়ী, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে ৮০টি সমিতিতে গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৩৪ লক্ষ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ২০০০ রিডিং এবং সমপরিমান বিল বিতরণের জন্য মিটার রিডার প্রয়োজন হয় ১১৭০০ জন। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। এতে বাকী আরো চার হাজার কর্মীর কাজ তাদের উপর মাননীয় জেনারেল ম্যানেজারেরা বেশি করাচ্ছে। যার দরুন, আরো চার হাজার কর্মচারী কর্মহীন হয়ে চাকুরীর দাবীতে বিভিন্ন প্রেসক্লাব এবং বিআরইবি বোর্ডের সামনে মানববন্ধন, অনশনসহ নানা কর্মসূচী পালন করে চলছে।
এতে একদিকে কিছু কর্মচারী চাকুরী হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে, অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাবর্মূতি নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের চাকুরী নিয়মিতকরণ এবং অভিজ্ঞতা সনদধারীদের পুন:বহাল ও কাজের পরিমাণ কমানোর প্রয়োজন। তার প্রতিবাদে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, কর্মবিরতি পালন করে যাচ্ছে।
ঈদগাঁও সাব জোনাল অফিসের মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার আলা উদ্দিন জানান, পল্লী বিদ্যুৎ কক্সবাজার সদর দপ্তরসহ ৫টি জোনাল অফিসের ৯২জন চুক্তিভিত্তিক মিটার রিডার তাদের দাবী বাস্তবায়নে ৪র্থ দিনের মত কর্ম বিরতি চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে ১০ অক্টোবর জেলা প্রসাশক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ১৭ অক্টোবর তাদের কর্ম বিরতি কর্মসূচী শুরু হয়।
You must be logged in to post a comment.