ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে জেলায় কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ২২ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ এবং পূর্ণিমার জোয়ারে তলিয়ে গেছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, বীজতলা, রোপা আমন, শাক সবজি, পানের বরজ। জেলায় ৩ হাজার ৩শ ৭৭ হেক্টর ফসল এখনো পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বীজতলা। কৃষকদের সহায়তা করতে জেলার কৃষি অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করেছে প্রশাসন। বীজতলা নষ্ট, ফসলের ক্ষতি সত্বেও কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে কাজ করছে কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ.কে.এম শাহারিয়ার জানান, টানা ৮ দিনের বৃষ্টি এবং কোমেনের প্রভাবে জেলায় ১৩ হাজার ৮শ ২৩ হেক্টর ফসলের মধ্যে ৩ হাজার ৩শ ৭৭ হেক্টর বীজতলা, সবজি, আউশ, আমন পানির নিচে নিমজ্জিত। রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, সদর এবং কুতুবদিয়ায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। এদের মধ্যে চকরিয়ায় ১৪৪৫ হেক্টর, পেকুয়ায় ১৪০ হেক্টর, রামুতে ৬৫০ হেক্টর, সদরে ৬’শ হেক্টর, কুতুবদিয়ায় ২৭০ হেক্টর ফসল পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে জেলার কৃষিক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ক্ষতির তথ্য পেতে পানি নেমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান কৃষি অধিদপ্তর।
মওসুমের প্রারম্ভে বন্যা হওয়ায় বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে “নাভি জাতের” বীজ বপনের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণীত প্রাথমিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, জেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় ২৮৯৭ হেক্টর রোপা আউশের মধ্যে ২৩৯ হেক্টর, ৯৬৮ হেক্টর শাক সবজির মধ্যে ৪৪৯ হেক্টর, ৪৭৭৮ হেক্টর বীজতলার মধ্যে ১৮৪১ হেক্টর, ২৩০০ হেক্টর রোপা আমনের মধ্যে ৮৩৫ হেক্টর, এবং ২৮৮০ হেক্টর পানের বরজের মধ্যে ১৩ হেক্টর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে এটি প্রাথমিক তথ্য। এ ক্ষতি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এ.কে.এম শাহরিয়ার কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে বিভিন্ন পরামর্শের এবং পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান। তিনি কৃষকদের বীজতলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নাভী জাতের বীজ বিশেষ করে বি আর ২২, ২৩, ৪৬ নাজির শাইল, বপনের পরামর্শ দেন। তিনি জানান, উক্ত জাতের বীজ মাত্র ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে লাগানো যাবে। এছাড়া ভাসমান এবং ‘দাপগ’ বীজ বপন করলে দ্রুত চারা বৃদ্ধি পাবে। উপ-পরিচালক শাহারিয়ার কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন পানি সরে যাওযার সাথে বীজতলার পরিচর্যা, আউশের পরিচর্যা, এবং ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো প্রয়োজন। প্রয়োজনে কৃষি কর্মকর্তা এবং ইউনিয়নের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কৃষকদের অনুরোধ জানান। বিএডিসি অফিসে পর্যাপ্ত বীজ মওজুদ থাকায় ন্যায্যমূল্যে বীজ সরবরাহ করা যাবে বলেও তিনি মত দেন।
এদিকে দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড কৃষিকে বাঁচাতে, কৃষকদের বাঁচাতে সরকারি সহায়তা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি নামার সাথে সাথে যেন কৃষকরা বিনামূল্যে বীজ ও সার পায় তথা বিশেষ প্রনোদনা প্যাকেজ চালু করা হয় এমন দাবী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।
You must log in to post a comment.