টানা বৃষ্টিপাত, পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তৃতীয় দফায় আবারো টানা ৩দিনের বানের পানিতে২৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মত্স্য ঘের ও কৃষকদের রূপিত আমনের বীজতলা। এতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন।
এসব ইউনিয়নের বেশিরভাগ বসত ঘর রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। টানা বন্যার কারণে এখনো হাজারো মানুষ সড়কের উপর পলিথিনের তাবু টাঙ্গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। দু’উপজেলার অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে বানবাসি মানুষ নৌকা ও কলার ভেলায় করে চলাচল করছে। বন্যাদূর্গত বানবাসি মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও পানীয় জলের চরম সংকট। সরকারী ত্রান অপ্রতুল হওয়ায় বানবাসি মানুষরা উপোস করছে দিনের পর দিন। বন্যাদূর্গত এলাকার মানুষদের মাঝে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগ। বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা একবারে নাজুক। বন্যা দূর্গতরা ত্রানের জন্য হাহাকার করছে। সরকারের কাছে বন্যা দূর্গতরা দু’উপজেলাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণার জোর দাবী জানিয়েছেন।
বন্যা কবলিত ৬৫ বছরের জহুর আলী নামের এক বৃদ্ধ বলেন, এই জীবনে অনেকবার বন্যার কবলে পড়েছি। তা থেকে উত্তোরণ হয়েছি। কিন্তু এবারের বন্যার মতো ভয়াবহ বন্যা জীবনে আর দেখিনি। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে রক্ষার প্রার্থনা জানান।
এদিকে বন্যা দুর্গতদের ঘুরে ঘুরে চিকিত্সা সহায়তা দিচ্ছেন বলে জানান চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আবদুস সালাম। তিনি আরো দু’উপজেলার ২৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার জন্য ৩০টি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যকটি মেডিকেল টিমের সাথে একজন করে এমবিবিএস চিকিত্সা রয়েছেন। তারা দূর্গত এলাকা পরিদর্শন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি নিচে নামতে না পারায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ অবস্থার কারণে চিংড়ি জোনের অন্তত ১ হাজার চিংড়ি প্রকল্প বানের পানিতে ভেসে গেছে। এতে শত কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন চিংড়ি ঘের মালিকরা। গত জুন মাসের ভয়াবহ বন্যার পরও চাষিরা নতুন করে চিংড়ি চাষ শুরু করেছিলো কিন্তু এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারনে তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারছে না। তারা একেবারে নি:স্ব হয়ে গেছে বলে চিংড়ি প্রকল্পের মালিক সলিম উল্লাহ জানান।
চকরিয়া উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো.সাইদুল রহমান বলেন, গত ১ মাসের ব্যবধানে ৩ দফা বন্যার কারণে চিংড়ি ঘেরগুলো বানের পানিতে একাকার হয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে শত কোটি টাকার মাছ। তবে বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানা যাচ্ছে না।
চকরিয়া উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা আতিক উল্লাহ বলেন, পর পর ৩টি বন্যার কারণে উপজেলার কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবেে গেছে আমনের বীজতলা। সরকারী সাহায্য ছাড়া কৃষকরা এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
চকয়িা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ সাহেদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১৮টি ই্উনিয়ন ও ১টি পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা এখনো বানের পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সমুদ্রের জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে এই পর্যন্ত ৭০ মেট্রিক টন চাউল ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগের বরাদ্দের ৪০ মেট্রিক টন চাউল উপজেলা প্রশাসনের কাছে রক্ষিত ছিলো। এবারের বন্যায় আগের রক্ষিত এসব চাউল ও নগদ টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে শনিবার জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় নেতারা কক্সবাজার জেলাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনরোধ জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। নেতৃবৃন্দ সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের বানবাসিদের সাহায্যে এগিয়ে আসারও আহবান জানান।
You must be logged in to post a comment.