টানা ১২ দিনের ঢল ও জলোচ্ছ্বাসে একাকার হয়ে গেছে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ার মাছ ও ফসল। দু’উপজেলায় ৫’শতাধিক টাকা মূল্যের মিঠা ও লবণাক্ত পানির মাছ ভেসে গেছে এবং ফসল ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫০ কোটি টাকার। কৃষকদের সুদমুক্ত ঋণসহ নানাভাবে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা না হলে মাছ ও খাদ্য উদ্বৃত্ত চকরিয়া ও পেকুয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ ও মত্স্য বিভাগের তথ্যমতে চকরিয়ায় দু’টি খাতে ৪৩১ কোটি ও পেকুয়ায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি ও মত্স্য বিভাগ মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে ইতোমধ্যে প্রশাসনের উর্ধ্বতন দপ্তরে ক্ষতির লিখিত বিবরণ জমা দিয়েছেন। এতে চিংড়ি ঘের ও পুকুর থেকে মাছ ভেসে গিয়ে দু’উপজেলায় অন্তত ৫’শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। আমন বীজতলা, পানের বরজসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে আরো ৫০ কোটি টাকার।
চকরিয়া উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চিংড়িজোন খ্যাত চকরিয়ায় ৪ দফা বন্যার পানিতে মাছ ভেসে গিয়ে অন্তত ৪০৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চিংড়িজোনের ৪ হাজার ২৬৫টি চিংড়ি প্রকল্প ও ৮ হাজার ২’শ পুকুর থেকে মাছ ভেসে গিয়ে এ ক্ষতি হয়। অনুরুপভাবে পেকুয়ায় ভেসে যায় শত কোটি টাকার মাছ।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিক উল্লাহ জানান, বন্যায় চকরিয়ার কৃষিখাত একেবারে শেষ হয়ে গেছে। পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়ায় এখনো দুই তৃতীয়াংশ ক্ষেতের ফসল পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। ঢলের তাণ্ডবে মত্স্য ও কৃষিখাত পুরোপুরি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এর ফলে খাদ্য উদ্বৃত উপজেলা হিসাবে খ্যাত চকরিয়ায় খাদ্য ঘাটতির আশংকা রয়েছে। তিনি বলেন, ৪ দফা ভয়াবহ বন্যায় উপজেলায় ৩০ হেক্টর রোপা আউশ, ২৫০ হেক্টর সবজি ক্ষেত ৫৭১ হেক্টর আমন বীজতলা, ও ১০৬টি পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গিয়ে অন্তত ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জরিপ করে এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলেও জানান। এর ফলে ৫০ হাজারেরও অধিক কৃষক পরিবার ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
চকরিয়া পৌরসভার আমাইন্যারচর এলাকার চাষী জয়নাল আবেদীন বলেন, জীবনে অনেকার বন্যার মোকাবেলা করেছি। কিন্তু এবারের ৪ দফা বন্যায় আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। সরকার যদি আমাদের সাহায্য না করে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসা ছাড়া উপায়ন্তর থাকবে না।
You must log in to post a comment.