দীর্ঘস্থায়ী বানের আক্রোশে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ার সড়ক যোগাযোগ । গ্রামীণ অবকাঠামোর মানচিত্রই যেন পাল্টে গেছে টানা ১১ দিনের প্লাবনে। দু’উপজেলায় কাঁচা-পাকা ৪৭০ বর্গকিলোমিটার সড়ক ভেঙ্গে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫’শ কোটি টাকার। উপকূলীয় এলাকা থেকে বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়ায় ক্ষতির সঠিক হিসাব নিরুপন করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।
চকরিয়ায় দুর্যোগকালীন কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসানউল্লাহ বলেন, ঢল ও জলোচ্ছ্বাসের পানিতে এখনো অনেক গ্রাম নিমজ্জিত রয়েছে। তাই দপ্তর ভিত্তিক ক্ষতির হিসাব পাওয়া যায়নি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো প্রাথমিক হিসাবে দেখানো হয়েছে চকরিয়ায় ২০ কিলোমিটার পাঁকা ও ৮০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক সম্পূর্ণ এবং ৩০ কিলোমিটার পাঁকা ও ১০০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক আংশিক ভেঙ্গে অনন্ত ৩’শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সড়ক ও জনপথ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তত্ত্বাবধানে নির্মিত সড়কগুলোর পুরো ক্ষতির বিবরণ প্লাবিত এলাকা থেকে পানি একেবারে নেমে গেলেই পাওয়া যাবে।
পেকুয়ার কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব থাকা পিআইও’র অফিস সহকারী ওমর আলী বলেন, এই উপজেলার অনেক গ্রাম এখনো পানির নিচে রয়েছে। তাই সড়ক ভাঙ্গার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে ঢল ও জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে পেকুয়ার ৭ ইউনিয়নে ৫০ বর্গকিলোমিটার পাঁকা, ৬০ বর্গ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। আংশিক ভেঙ্গেছে পাঁকা ৬০ বর্গকিলোমিটার ও কাঁচা ৭০ বর্গকিলোমিটার সড়ক। সম্পূর্ণ ও আংশিক সড়ক ভেঙ্গে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ২’শ কোটি টাকার।
চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আমিন উল্লাহ বলেন, এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে থাকা সকল সড়কেই বানের আঁচড় লেগেছে। যেভাবে সড়ক ভেঙ্গেছে তা মেরামত ও পুণ:নির্মাণ করতে বরাদ্দ পেলেও ৮ থেকে ১০ বছর লেগে যাবে।
চকরিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাহেদুল ইসলাম ও পেকুয়ার নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুর রশিদ খান অভিন্ন মত প্রকাশ করে বলেন, এবারের দীর্ঘস্থায়ী ঢল ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতির পরিমাণ অপুরনীয়। স্থানীয় বিত্তশালীসহ সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে অভাবী ও বন্যা দূর্গত মানুষদের খাবার জোগানো হলেও সড়কের ক্ষতি আগামী ৫ বছরেও পুষানো যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। যেখানেই পানি কমছে সেখানেই ভেসে উঠছে সড়ক ভাঙ্গার ভয়াবহ চিত্র।
মঙ্গলবার সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অতীত সকল রেকর্ড ভেঙ্গে গেছে এবারের বন্যার ক্ষতিতে। চিরিংগা-মাঝেরফাঁড়ি-মানিকপুর সড়ক, চিরিংগা-বদরখালী, বানিয়ারছড়া-মগনামা, চিরিংগা-কোণাখালী, ছিকলঘাট-কৈয়ারবিল, হারবাং-টৈটংসহ গ্রামীণ প্রতিটি কাঁচা-পাঁকা সড়কই কমবেশী ভেঙ্গে যোগাযোগ বির্পযয় ঘটেছে। প্রপার কাকারার ফুটবলার আবছার বলেন, আমাদের এলাকায় যেভাবে ক্ষতি হয়েছে স্বচক্ষে না দেখলে কেউই বিশ্বাস করবে না। পায়ে হাঁটাও দুরুহ হয়ে পড়েছে কাঁচা-পাঁকা সকল সড়ক ভেঙ্গে তচনছ হয়ে যাওয়ায়। কথা হয় চকরিয়া পৌরশহরস্থ হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা মোঃ আলমগীর হোছাইনের সাথে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করলেও পৌরসভার অবহেলার শিকার হয়ে আসছি। বন্যার সময় পানি নিষ্কাশন সমস্যার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জলবন্দী ছিলাম টানা ৫দিন। এখনো বৃষ্টি হলেই পানি জমে বাসা থেকে বেরই হতে পারিনা। সন্তানরা যেতে পারে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
দু’উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ২৫টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের অন্যতম দাবী এখন ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা জরুরী মেরামত ও নির্মাণের মাধ্যমে জনগণকে যোগাযোগ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের। এ দাবীর প্রতি দু’উপজেলার অন্তত ৮ লাখ মানুষেরও।
You must be logged in to post a comment.