সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / ধর্মীয় / ভারতে যেসব হিন্দু মন্দিরে এখনো নারীদের প্রবেশ নিষেধ

ভারতে যেসব হিন্দু মন্দিরে এখনো নারীদের প্রবেশ নিষেধ

বিশ্বের সবচেয়ে ‘ধনী মন্দির’ বলে পরিচিত কেরালার শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরেও নারীদের প্রবেশাধিকার নেই। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেরালা রাজ্যে প্রায় আটশ বছরের প্রাচীন সবরিমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের প্রবেশাধিকার দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

কেরালার প্রাচীন বিশ্বাস, ওই বয়সের নারীরা ঋতুযোগ্যা, অন্যদিকে মন্দিরটির পূজ্য দেবতা আয়াপ্পা একজন ব্রহ্মচারী, ফলে চিরকুমার এই দেবতার কাছাকাছি ঋতুযোগ্যা নারীরা গেলে তিনি রুষ্ট হতে পারেন।

সেজন্যই পেরিয়ার ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভেতরে এক পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত ওই মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের প্রবেশাধিকার ছিল না।

অবশ্য ওই মন্দিরটি ছাড়াও ভারতে এমন আরও কিছু মন্দির রয়েছে, যেখানে নারীদের প্রবেশাধিকার নেই।

যেমন বিশ্বের সব থেকে ‘ধনী মন্দির’ বলে পরিচিত, কেরালার রাজ্যেরই শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির বা মহারাষ্ট্রের ত্রিম্বকেশ্বর মন্দির, রাজস্থানের পুষ্করে অবস্থিত কার্তিকেয় মন্দির, মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের মহালক্ষ্মী মন্দির বা তামিলনাডুর তালাওয়াডির মল্লিকার্জুনস্বামী মন্দির এগুলোতেও নারীদের প্রবেশাধিকার নেই।

আবার এমন কয়েকটি মন্দির রয়েছে, যেখানে পুরুষরা প্রবেশ করতে পারেন না। যেমন বিশাখাপতনমের কাছে কামাখ্যা মন্দিরে মাসের কয়েকটি বিশেষ দিনে পুরুষদের প্রবেশাধিকার নেই। পুষ্করের ভগবান ব্রহ্মার মন্দিরে বিবাহিত পুরুষরা যেতে পারেন না। কন্যাকুমারীর দেবী কন্যাকুমারী মন্দিরে ঢুকতে পারেন না বিবাহিত পুরুষরা।

যেসব মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকার নেই, সেগুলিতে মূলত ঈশ্বর ব্রহ্মচারী বা চিরকুমার হিসেবে পূজিত হন। সবরিমালার আরাধ্য দেবতা আয়াপ্পা যেমন ব্রহ্মচারী এবং চিরকুমার, তেমনই তার কাছে মকর সংক্রান্তির দিনে যে বিশেষ পুজো দিতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়, তাদেরও পুজোর আগে ৪১ দিন ধরে ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়। তারা নিরামিষ খাবার খান, কালো পোশাক পড়েন, দাড়ি কাটেন না এবং কোনো রকমের নারী সাহচর্য করেন না।

ঘটনাচক্রে আয়াপ্পা মন্দিরের কাছেই একটি মন্দির রয়েছে, যেখানে মালিকাপুরাত্থাম্মা নামের এক দেবীর পূজা হয়। বহু মানুষ এটা বিশ্বাস করেন যে, মালিকাপুরাত্থাম্মা আয়াপ্পাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আয়াপ্পা ব্রহ্মচারী হওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। তাই মালিকাপুরাত্থাম্মা আয়াপ্পার মন্দিরের কাছেই চির-অপেক্ষায় রয়েছেন।

আবার আয়াপ্পার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল ভাভর নামের এক মুসলিমের। তাই ওই মন্দিরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সেই দরগা।

দেশটির শীর্ষ আদালত শুক্রবার এক রায়ে এই মন্দিরের বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা নিয়ম বদল করে নারীদের প্রবেশাধিকার দিয়েছে। কিন্তু অনেক নারী নিজেরাই চান না ঋতুযোগ্যা হওয়ার পরে ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে।

কোচি শহরে একটি জনসংযোগ এজেন্সি চালান স্মিতা মেনন।

স্মিতা বলেন, ‘কোনো মালয়ালি নারীই চাইবেন না অনুশাসন ভেঙে মন্দিরে প্রবেশ করতে। যতই সুপ্রিম কোর্ট রায় দিক, এটা আমাদের বিশ্বাস। এর সঙ্গে ঋতুমতী হওয়ার কোনো যোগ নেই। ওই মন্দিরটি তো আসলে ব্রহ্মচর্য পালনের পীঠস্থান। সেখানে যাওয়ার আগে সব রকম জাগতিক বিষয়গুলোকে সরিয়ে রাখেন পুরুষরা এবং আমরা সেই সময়ে স্বামী বা বাবাকে সব রকমের সাহায্য করি। তাই ব্রহ্মচর্য পালনের এই ধারাটিকে আমরা নষ্ট হতে দিতে চাই না।’

আগে শনি শিঙ্গনাপুর নামের যে মন্দিরে নারীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না, অথবা নাসিকের ত্রিম্বকেশ্বর মন্দিরে, যেখানে এখনো গর্ভগৃহে নারীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিষেধটা আসে নারীদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার কারণে। কখনো সেটা প্রজনন বা কখনো ঋতুস্রাবের সঙ্গে সংযুক্ত বলে যুক্তি দেখানো হয় প্রাচীনকাল থেকেই।

হিন্দু মন্দিরগুলিতে নারীদের প্রবেশাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালাচ্ছে মহারাষ্ট্রের একটি সংগঠন ভূমাতা ব্রিগেড।

ভারতের সবরিমালা মন্দিরে ভক্তদের ভিড়। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এ মন্দিরেই নারীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

সংগঠনটির প্রধান তৃপ্তি দেশাই বলেন, ‘এসব নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ঋতুমতী হওয়ার কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি নেই। এটা নারীদের প্রতি বৈষম্য। একবিংশ শতাব্দীতে যখন মেয়েরা যুদ্ধবিমান চালায়, দেশ শাসন করে, মহাকাশে পাড়ি দেয়, সেই সময়ে তারা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবে না, এটা হতে পারে না। তাদেরও তো পুজো করার অধিকার রয়েছে।’

সুপ্রিম কোর্টও বলেছে ঋতুযোগ্যা নারীদের সবরিমালা মন্দিরে প্রবেশ না করতে দেওয়ার অর্থ তাদের ধর্মপালনের অধিকারে হস্তক্ষেপ। তবে হিন্দু পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ীর মতে পুরাণের সঙ্গে এই সব নিয়মের কোনো সংঘাত থাকা উচিত নয়।

প্রসাদ ভাদুড়ী বলেন, ‘শাস্ত্র তো তৈরি হয়েছে তৎকালীন সমাজ থেকে। সেই সময়ে সমাজে যা নিয়মকানুন ছিল, সেগুলোরই সংকলন এই শাস্ত্র। তখনকার সমাজ সেইভাবেই পরিচালিত হতো। সেই সময়ে যদি সমাজ পুরুষতান্ত্রিক থেকে থাকে, সেটা তো বর্তমান যুগে মানার প্রয়োজন নেই। এখন তো সমাজ পরিচালনার জন্য পার্লামেন্টের তৈরি করা আইন-কানুন রয়েছে, তাই এখন সেসব আধুনিক আইন অনুযায়ীই সমাজ চলবে! তাই দুটোর মধ্যে তো কোনো সংঘাত হওয়ারই কথা নয়।’

প্রসাদ ভাদুড়ীর ব্যাখ্যা, প্রাচীনকালে একভাবে সমাজ চলত বলেই যে বর্তমানকালে দাঁড়িয়ে সেটার ভালো-মন্দ বিচার করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।

ঘটনাচক্রে, সুপ্রিম কোর্টের যে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সবরিমালা মন্দিরে ঋতুযোগ্যা নারীদের প্রবেশাধিকার দিয়েছে, তার মধ্যে একমাত্র নারী বিচারক ইন্দু মালহোত্রা সংখ্যালঘু রায়টি লিখেছেন। তার মতে, ধর্মপালনের বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করাই উচিত নয়।

সূত্র:আবু আজাদ-priyo.com;ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

১৪ আগস্ট হাফেজ হাকিম শাহ বজলুর রহমানের (রাঃ) এর ১১৪তম ওরশ শরীফ

  প্রেস বিজ্ঞপ্তি :রবিবার হতে ৩ দিন ব্যাপী এতেকাফ শুরু, ১৪ আগস্ট বুধবার সৈয়দুল আজম ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/