সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / লামায় ৬০ হাজার টাকায় শালিসী বিচারে কিশোরী ধর্ষণকারীকে ছেড়ে দিল পুলিশ

লামায় ৬০ হাজার টাকায় শালিসী বিচারে কিশোরী ধর্ষণকারীকে ছেড়ে দিল পুলিশ

Rape - 27 (b)মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা :

বান্দরবানের লামা পৌরসভায় এক কিশোরী ধর্ষনকারীকে থানায় শালিসী বিচারের ৬০ হাজার টাকায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ছেড়ে দিল পুলিশ। লামা পৌরসভার কুড়ালিয়া টেক এলাকায় দিনমজুর রফিকুল ইসলামের (৫০) মেয়ে সুরমা (১৪) ‘প্রতিকী নাম’ কে প্রলোভন দেখিয়ে লামামুখ বাজারের সনাতন ব্যবসায়ী সঞ্জয় দাশ (৩২) ও তার তিন বন্ধু কক্সবাজারে নিয়ে আবাসিক হোটেলে ১৫ নভেম্বর রবিবার গণধর্ষণ করে।

ধর্ষিতার মা মাফিয়া খাতুন (খুকী) জানান, ১৫ নভেম্বর রবিবার সকাল ১০টার দিকে তার মেয়ে কিছু প্রসাধনী ক্রয় করার জন্য লামামুখ বাজারে যায়। বিগতদিনের ন্যায় লামামুখ বাজারের সঞ্জয় দাশের কসমেটিক দোকান থেকে কেনাকাটা করে। এসময় দোকানদার সঞ্জয় দাশ নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে তাকে কক্সবাজার যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। গরীব ঘরের মেয়েকে নানান প্রলোভন দেখিয়ে সে লামা বাজারে বাস স্টেশনে নিয়ে গিয়ে টিকেট কেটে তার আরেক বন্ধু জাহাঙ্গীরের সাথে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেয় সঞ্জয়। মেয়েটিকে পেয়ে সঞ্জয় বন্ধু জাহাঙ্গীর তার আরো দুই বন্ধুকে নিয়ে মোট ৩জনে কক্সবাজার কলাতলী আবাসিক হোটেলে ২দিন পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

এদিকে মেয়ের ফিরতে বিলম্ব হতে দেখে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চারদিকে খুঁজতে থাকে। দিন গিয়ে রাত হয় মেয়ের কোন খোঁজ না মিলায় মানসিক চাপে পড়ে মেয়ের পরিবার।

রবিবার সারাদিন রেখে সোমবার তাকে হোটেলে ফেলে চলে যায় তিন জন। এদিকে হোটেলে ভাড়া না দেয়ায় মেয়ের হাতের মোবাইলটি রেখে দেয় হোটেল ম্যানাজার। ১৬ নভেম্বর সোমবার মেয়েটিকে হোটেল থেকে বের করে দিলে, অসহায় মেয়েটি রাস্তায় কান্নাকাটি করতে থাকে। এক পুলিশ সদস্য দেখে তার কারণ জানতে চায়। মেয়েটি তখন সব কিছু পুলিশ সদস্যকে খুলে বলে। উক্ত পুলিশ সদস্যের সাথে লামা উপজেলার লামামুখ বাজারের চন্দন মজুমদার নামে একজনের পরিচয় ছিল। চন্দন মজুমদার বর্তমানে কক্সবাজারে চাকুরী করে। তাকে ফোন করে বিষয়টি জানালে সে মেয়েটি চিনতে পারে। তখন চন্দন দাশ ফোন করে মেয়ের পরিবারকে বিস্তারিত জানায় এবং চকরিয়ায় গাড়ির টিকেট করে দেয়।

এদিকে মেয়ের বড় বোনের জামাই মুজিবর তাকে চকরিয়া গিয়ে নিয়ে আসে।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লাগে ধর্ষক পক্ষ। ১৮ নভেম্বর বুধবার ১২টার দিকে লামা থানায় বিষয়টি সামাজিক মিমাংসা করতে বসে স্থানীয় শালিসদাররা। শালিসী বৈঠকে ছিলেন, লামা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন, লামামুখ বাজারের ব্যবসায়ী ডাঃ মৃদুল কান্তি দাশ, লামা পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ এর মহিলা কাউন্সিলর জোন্সা বেগম, ধর্ষকের বোন জামাই পরিমল দাশ, লামা থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক রবিউল হোসেন, লামামুখ এলাকার আনোয়ার হোসেন নুরু, মাসুদ রানা, মোঃ সামশু, ধর্ষক সঞ্জয় দাশ, মেয়ের বোন জামাই মুজিবুর রহমান ও ভাই রানা। মূল তিন ধর্ষককে বিচারে হাজির না করে বিচার কাজ সম্পন্ন করে শালিসকাররা।

শালিসকাররা সব কিছু জেনে বুঝে মেয়ের সংঘমের মূল্য নির্ধারণ করে ৬০ হাজার টাকা। তাও বাকী। আগামী ৩০ নভেম্বর মেয়ের পরিবারকে জরিমানার টাকা দেয়া হবে বলে জানায়। সুকৌশলে সঞ্জয়কে থানা থেকে নিয়ে আসে বিচারকরা।

এদিকে ১৮ তারিখের পর থেকে সঞ্জয় দাশের দোকান বন্ধ আছে বলে জানায় লামামুখ বাজারের ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে সামাজিক লোক লজ্জার ভয়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে রুপসীপাড়া বড় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ভিকটিম। মেয়ের মা জানায় এদিকে পাড়ার লোকের নানান কানাগুসা পরিবারের লোকজনের স্বাভাবিক চলাফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

রুপসীপাড়া বাজারে মুজিবুরের বাড়িতে গিয়ে ভিকটিমের সাথে কথা বললে সে তার মায়ের বক্তব্য সত্য স্বীকার করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লামা পৌর শাখার সভাপতি এম. তমিজ উদ্দিন বলেন, ধর্ষককে থানায় ধরে নিয়ে আবার ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। তাছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয় গুলো আপোষযোগ্য নয়।

লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, আমি সদ্য লামা থানায় যোগদান করেছি। বিষয়টি আমি জানিনা।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/