মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা :
লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নে আবুল হাসেম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার ৪৪ বছরের ভোগদখলীয় জায়গা রাতারাতি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীয় জায়গা বান্দরবান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা ১৬৪/২০২০ মূলে ১৪৪ ধারা বজায় রাখার নির্দেশ থাকলেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তর্কিত সম্পত্তিতে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ ও অবৈধভাবে দখল করেছে বলে জানিয়েছেন অসহায় আবুল হাসেম।
জানা যায়, লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের হিমছড়ি পাড়াস্থ ৩০৭নং চাম্বি মৌজার ১৯৭৮-৭৯ সালে বন্দোবস্তি প্রাপ্ত হয়ে জি হোল্ডিং ১২৪ মুলে মৃত আব্দুল ছালামের ওয়ারিশরা পৈত্রিক সূত্রে ৫ একর জায়গা মালিক ও ভাগদখলে রয়েছে। উক্ত জায়গা বসতবাড়ি, ফলদ-বনজ বাগান ও আবাদি জমিতে চাষাবাদ করে ভোগদখলে আছে। এই জায়গা নিয়ে একই এলাকার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে হোসেন আহাম্মদ এর পরিবারের সাথে গত দুইবছর যাবৎ বিরোধ চলে আসছে।
আবুল হাসেম বলেন, গত ১২ মে ওমরাহ হজ্জ পালন করতে আমি সৌদি আরবে যাই। বাড়িতে আমার স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলের বউ ছিল। ঘরে কোন পুরুষ না থাকায় এই সুযোগে বিবাদী পক্ষ গত ২৫ মে রাত ১টায় দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দলবল নিয়ে আমার জায়গার উপর ঘর নির্মাণ করে। বিষয়টি পরিবারের লোকজন 999 ফোন করে জানালে উপরের নির্দেশে আজিজনগর ক্যাম্পের পুলিশ এসে হোসেন আহাম্মদ ও তার লোকজনকে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে ২৭ মে, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় আমরা জুম্মার নামাজে গেলে মোঃ হোসেন এর লোকজন জোর করে আবার বাগানের ঘরে প্রবেশ করে। এসময় আমার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাঁধা দিলে তাকে মারধর করে। আমার স্ত্রীকে রক্ষা করতে মেয়ে সাদেকা আক্তার, ছেলের বউ জান্নাতুল ফেরদৌস ও নাতি জাবেদ (১০) গেলে তাদের মারধর ও কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ২৭ মে এর ঘটনায় আমি প্রতিপক্ষের ৯জনকে বিবাদী করে লামা থানায় মামলা করেছি।
এই বিষয়ে হোসেন আহাম্মদ বলেন, এইটা আমাদের ক্রয় করা সম্পত্তি। মোঃ নুরুল আলমের ছেলে আরেফুল আলম নামীয় আর/৬০২নং হোল্ডিং এর ৫ একর থেকে ৪.৫০ একর জায়গা ১৬৫০/০৯ বায়নানামা দলিল মূলে ক্রয় করেছি। আমরা আমাদের জায়গা দখল করেছি। ২৭ মে আবুল হাসেমের পরিবারের লোকজন আমার বোনকে মারধর ও শ্লীলতাহানী করে। আমরা বিচার চেয়ে বান্দরবান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেছি। মামলাটি লামা থানাকে তদন্ত দেয়া হয়েছে।
আবুল হাসেম আরো বলেন, আর/৬০২ হোল্ডিং দিয়ে ১৯৯৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর আরেফুল আলম আমাদের বিরুেদ্ধ উচ্ছেদ মোকাদ্দমা ৩ (ডি) ৯৮ রুজু করে। দীর্ঘ শুনানী ও কানুনগোদের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এই বিরোধীয় জায়গা ৬০২নং হোল্ডিং নয় মর্মে আদালত ২০০৩ সালে মামলাটি খারিজ করে দেয়। সেই ৬০২ হোল্ডিং এর একটি বায়নানামা দিয়ে হোসেন আহাম্মদ গং আমাদের ৪৪ বছরের ভোগদখলীয় জায়গার ৫০ শতকের মত জায়গা জবরদখল করার পায়তারা করছে।
পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা পারভীন আক্তার, নুরুল কবির, শওকত ও আজিজ বলেন, বন্দোবস্তি মূলে আবদুল ছালাম ও তার মৃত্যুতে তার ওয়ারিশরা দীর্ঘদিন যাবৎ এই জায়গা ভোগদখলে আছে। বিরোধীয় জায়গায় বর্তমানে লাগিত ১০/১২ বছর বয়সী আম, লিচু ও অন্যান্য গাছগাছালি আবুল হাসেম লাগিয়েছে।
আজিজনগর হিমছড়ি এলাকার বাসিন্দা মৃদুল কান্তি দাশ বলেন, আবুল হাসেম পরিবারের জায়গা ৫ একর। তাদের দখলে বেশি জায়গা আছে।
আজিজনগর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি শামীম শেখ বলেন, গত ২৫ মে গভীর রাতে ইউনিয়নের হিমছড়ি এলাকায় আবুল হাসেমের ভোগদখলীয় জায়গায় হোসেন আহাম্মদ সহ তার লোকজনকে ঘর নির্মাণ করতে গেলে খবর পেয়ে পুলিশ বাঁধা দেয়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। বিরোধীয় জায়গায় সৃষ্ট ১০/১২ বছর বয়সী বাগান স্থানীয়দের ভাষ্যমতে আবুল হাসেমের পরিবার কর্তৃক সৃজিত। একদিন পরে পুণরায় হোসেন আহাম্মদ ওই জায়গা দু’চালা একটি ঘর করে দখল করে।
You must be logged in to post a comment.