হামিদুল হক; ঈদগড় :
কক্সবাজার জেলার কৃষি প্রধান এলাকা ঈদগড়ে বোরো পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। আগাছা দমন, সেচ দেয়া, সার প্রয়োগ সহ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়াতে কৃষকরা অনেকটা দুশ্চিন্তায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধান চাষে লাভের মুখ দেখবে এমনটাই আশা কৃষকদের।
চলতি সপ্তাহে মাঠ পর্যায়ে সারের দাম কেজি প্রতি এক-থেকে দুই টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রান্তীক কৃষকরা জানান। অন্যদিকে পাইকারী ব্যবসায়ীদের দাবী চলতি সপ্তাহে বস্তা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।বিঘা প্রতি ধানের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৭ হাজার টাকা। বাজার মূল্যে কৃষকরা বিঘা প্রতি ধানের দাম পান ১৮ হাজার টাকা। বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন না হলে কিছুটা হলেও কৃষকরা ধান চাষ করে মুনাফার মুখ দেখবে এমন তথ্য দিলেন কয়েক জন কৃষক। বোরো রোপনের আগে বীজ তলা তৈরি করে কৃষকরা। সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ সহ ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে গত কয়েক বছর ধরে ধানের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ধান চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষকরা।
হাসনাকাটা এলাকার কৃষক মুনছুর আলী (৫০) তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি এবছর দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছে। ধানের বাড়ন ও ভাল। তার ক্ষেত যেন সবুজের সমারহ। কিন্তু তার দুঃখ ধানের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তিনি জানান, বিঘা প্রতি তার উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ১৭ হাজার টাকা এর মধ্যে বিঘা প্রতি বীজতলা তৈরিতে খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। ১০কেজি বীজ, সার পানি, পাতা উঠানো বাবদ এসব খরচ করতে হয়েছে তাকে। এর পর জমিতে তিন চাষ, নয়শ টাকা, রোপন এক হাজার টাকা, সার ওষধ দুই হাজার টাকা, আগাছা দমন, ওষধ স্প্রে তিনশ টাকা, ধান কাটা পনর’শ টাকা, বহন-ঝাড়া বারশ টাকা, জমির হারি ছয় হাজার টাকা, পানি সরবরাহের জন্যে তিন হাজার টাকা তাকে দিতে হবে। তার এক বিঘা জমিতে ১৮ মণ ধান পাবে বলে তিনি আশা করছেন।
তার মতে ধান কাটার মৌসুমে দাম বেশি থাকলে মণপ্রতি এক হাজার টাকা তিনি পেতে পারেন। এতে তার এক হাজার টাকা লাভ থাকবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে। ধুমছাকাটা এলাকার কৃষক আজগর আলী (৬০) সারা জীবন ধরে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু ধানের উৎপাদন খরচ এত বেশি তিনি কখনো দেখেনি। তার অভিযোগ, ধানের ক্ষেতে বিভিন্ন ধরণের পোকার আক্রমণ দেখা যায়, কিন্তু সরকারী ভাবে কোন কৃষি কর্মকর্তার দেখা পায়নি। কোন পরামর্শ দেয়ার কোন লোক তার কাছে কখনো আসেনি।
এবিষয়ে এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, জনবল সংকটের কারনে সব কৃষকের কাছে পৌছানো সম্ভব হয় না। তবে বিভিন্ন প্রসপেকর্টাস, কৃষি মেলার আয়োজন সহ বিভিন্ন ভাবে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর ঈদগড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদী।
You must be logged in to post a comment.