Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / ঈদগড়ে মেয়ে হত্যার বিচার চাইলেন পিতা

ঈদগড়ে মেয়ে হত্যার বিচার চাইলেন পিতা

এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :

আমি জহিরুল ইসলাম পিতা-মৃত মোঃ ইদ্রিছ, সাং- উত্তর সাতজোলাকাটা ইসলামাবাদ, উপজেলা ও জেলা কক্সবাজার আপনাদের সদয় জ্ঞাতার্থে অবগত করছি যে, গত ১১ জানুয়ারী ২০১৮ রামু উপজেলাধীন ইদগড় ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল হক রেজার ছেলে রেজাউল করিম রেজার (৩০) সাথে আমার আমার ২য় কন্যা ফারজানা পাইরিনের (১৯) ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ১০ লক্ষ টাকা দেনমোহর নির্ধারণপূর্বক সামাজিকভাবে অত্যন্ত ঝাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিবাহ সম্পন্ন হয়।

২৮ জুন বিকেলে ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা প্রেস ক্লাবে উপস্থিত হয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের উপস্থিতিতিতে তিনি একথা বলেন। জহির বলেন, হাতের মেহেদির রং মুছে যেতে না যেতেই মেয়ের জামাই রেজা আমার মেয়ে পাইরিনের নিকট হতে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। বিষয়টি মেয়ে পাইরিন আমাকে অবগত করলে আমি যৌতুক দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এতে রেজা আমার মেয়ের উপর প্রথমে মানসিক ও পরে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। এতকিছুর পরেও স্বামীর ঘর করার আশায় সদ্য বিবাহিতা আমার কলিজার টুকরা এতদিন ধরে সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করে আসছিল। রেজাউলের এহেন কর্মকান্ডের প্রতিকার চেয়ে আমি বার বার তার পিতা সিরাজুল হক রেজা ও চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভূট্টোকে অবহিত করলে তারা কিছুদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে এধরনের আশ্বাস দিয়ে ৩ বার আমাকে বিদায় করেন। আমার বিশ্বাস তারা রেজাউলকে এব্যাপারে কোন কথাই বলেনি। যে কারণে রেজাউল আরো বেশী আস্কারা পেয়ে যায় এবং শেষতক আমার নিষ্পাপ নিরপরাধ মেয়েকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে।

এদিকে নির্যাতনের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গেলে আমার কন্যা বিগত রমজানে আমার বাড়ীতে চলে আসে। পরে স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ীর বিশেষ অনুরোধ এবং একজন সদ্য বিবাহিতা নববধূ হিসেবে সমাজ সংসারের দিকে তাকিয়ে গত ঈদুল ফিতরের দুদিন পূর্বে আবারও স্বামীরুপী ঘাতক রেজার সাথে পিত্রালয় থেকে পাইরিন শেষবারের মত শ্বশুরালয়ে চলে যায়। শ্বশুরবাড়ী যাওয়ার পরপরই পাষন্ড স্বামী রেজাউল পাইরিনের উপর আবারও শুরু করে আগের মত অমানুষিক নির্যাতন আর অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ।

ঈদের ৪র্থ দিন সকালে অজ্ঞাতনামা ৩ যুবতীকে আচমকা ঘরে নিয়ে আসে পাইরিনের স্বামী রেজাউল। আগত তরুণীদের জন্য খাবার দাবারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়ে আমার মেয়ে পাইরিনের বেড রুমে রেজাউল ওইসব তরুণীদের সাথে দিনভর ফুর্তি করে। একই দিন দুপুরের খাবার খেয়ে আসরের পরে আগত তরুণীরা বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আগত তরুণীদের সম্পর্কে জানতে চান আমার কন্যা পাইরিন স্বামী রেজাউলের নিকট । এতে রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। রাতে এসে খাওয়া-দাওয়া সেরে রেজাউল তরুনীদের কথার জের ধরে পাইরিনকে আবারও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে বেধড়ক মারধর করে। রেজাউলের মা মনজিআরা বেগম এ সকল ঘটনায় বিয়ের পর থেকেই ছেলেকে উস্কানি দিয়ে আসছিল বলে আমার মেয়ে তার মাকে জানিয়েছিল।

এদিকে পরদিন অসুস্থ শরীর এবং বিনা চিকিৎসায় সারাদিন পাইরিন বিছানায় কাতরাচ্ছিলেন। ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৯ টা’র দিকে কাজকর্ম না করে সারাদিন কেন বিছানায় পড়ে আছে জানতে চেয়ে এবং বাবার বাড়ী থেকে ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার জন্য চাপাচাপি শুরু করলে পাইরিন যৌতুকের টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করার সাথে সাথে রেজাউল ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং একপর্যায়ে পাইরিনকে গলাটিপে ধরে ঠান্ডা মাথায় খুন করে। এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে রেজাউল তার মা মনজিআরা এবং পিতা সিরাজুল হক রেজা মিলে মৃত পাইরিনের মুখে বিষ ঢেলে দেয় এবং নিহত পাইরিনকে এ্যাম্বুলেন্সযোগে রামু থানায় রেখে থানার আশেপাশে ঘোরাঘোরি করতে থাকে। মেয়ে পাইরিনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমি, আমার স্ত্রী, বড় মেয়ের জামাই এবং ঈদগাঁও’র ইউপি সদস্য আবদুল হাকিমসহ পরিবারের অপরাপর সদস্যরা দ্রুত রামু থানায় পৌঁছালে ছেলের পিতা সিরাজুল হক রেজা, স্বামী রেজাউল করিম রেজা, মা মনজিআরা বেগম এবং ঈদগড়ের ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভূট্টোসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন বিনাময়না তদন্তে দাশ দাফন এবং সংঘটিত ঘটনায় যেন আমি কোন মামলা মোকদ্দমা না করি সেজন্য আমার উপর প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করেন এবং নানারকম ভয়ভীতি প্রদর্শণ করতে থাকে। আমি একজন অশিক্ষিত লোক এবং ইতোপূর্বে আর কখনও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি না হওয়াতে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলামনা। একদিকে সন্তান হারানোর বেদনা অন্যদিকে প্রভাবশালী মহলের চাপে পড়ে সেদিন আমি ভীতসন্ত্রস্ত্র এবং বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। সুযোগ বুঝে পাইরিনের স্বামী রেজাউল তার বাবা মাকে সাথে নিয়ে চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং অজ্ঞাতনামা স্থান থেকে মুঠোফোনে বার বার মামলা মোকদ্দমা না করার জন্য সাবধানবাণী উচ্চারণ করে। এতে আমি ও আমার পরিবারের অপরাপর সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একপ্রকার চুপ থাকতে বাধ্য হই।

সুরতহাল রিপোর্টে লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে বলে লিখা আছে। আর্শ্চয্যের বিষয় হচ্ছে, এতবড় একটি হত্যাকান্ড সংঘঠন করার পর মেয়ে জামাই রেজাউল ও তার পরিবারের কোন সদস্য ভূলক্রমে একটিবারের জন্যও ফোনে অথবা অন্য কোন মাধ্যমে আমাদেরকে আমার মেয়ে পাইরিনের মৃত্যুর বিষয়টি অবগত করেনি। পরিতাপের বিষয় এই যে, জাতির বিবেক খ্যাত ঈদগড়ের সাংবাদিক ভাইয়েরাও কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেদিন বা অদ্যাবধি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে একটিবারের জন্যও তাদের কলম চালনা করেননি।

সম্মানিত সাংবাদিক ভাইয়েরা আমি আমার মেয়ের হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের নিকট ন্যয় বিচার প্রার্থনা করছি। পাশাপাশি এ হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টাকারী এবং অপর চিহ্নিত হত্যা মামলার আসামী জেলফেরত চেয়ারম্যান ভূট্টোকে আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

৫০০ কোটি আয় ছাড়াল প্রভাসের ‘কল্কি’; #https://coxview.com/entertainment-kalki/

৫০০ কোটি আয় ছাড়াল প্রভাসের ‘কল্কি’

  অনলাইন ডেস্ক : মুক্তির মাত্র চার দিনেই বক্সঅফিস সিনেমাটি ঝড় তুলেছে। প্রভাস ও দীপিকা ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/