সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / সাহিত্য / একজন মানুষের গল্প – হুমায়ূন আহমেদ

একজন মানুষের গল্প – হুমায়ূন আহমেদ

16-7-2015 - 27 সাহিত্যিক ইবরাহীম খাঁকে নিয়ে এই অগ্রন্থিত লেখাটিতে হুমায়ূন আহমেদের স্বভাবসুলভ দক্ষতা বরাবরের মতোই উপস্থিত। লেখাটি অদ্যাবধি কোথাও প্রকাশিত হয়নি।

[সংগ্রহ: পিয়াস মজিদ]

অনেকদিন আগে শঙ্খনীল কারাগার নামের একটি বই লিখেছিলাম। সেখানে ভালোবাসাবাসি ছিল, চোখের জল ছিল, কাজেই মেয়ে মহলে ‘লেখক’ নাম হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, বারো বছরের এক মেয়ে একটি চিঠি লিখে ফেললো। চিঠি পেয়ে সরাসরি উপস্থিত হলাম ভক্তার বাড়িতে। ভাবখানা এরকম যেন মুখোমুখি বসে আধুনিক সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে আসব।

মেয়ের মা দরজা খুলে দিলেন। এক মধ্যবয়স্ক লোক এসেছে তাঁর মেয়ের সঙ্গে গল্প করতে এই শুনে তাঁর ছোটখাট একটা স্ট্রোকের মতো হলো। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে কড়া গলায় বললেন, “আমার মেয়ের সঙ্গে কী দরকার তা পরিষ্কার করে বলেন।” খুবই সঙ্গিন অবস্থান। আমি কুল কুল করে ঘামছি, এদিক ওদিকে তাকাচ্ছি। হঠাত্ দেখি মেয়েটি হাত ধরে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোককে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে আসছে। মেয়েটি হাসিমুখে বললো,

“আমার দাদাকে আপনি কি চিনতে পারছেন?”

প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর সঙ্গে সেই আমার প্রথম পরিচয়।

প্রথম পরিচয় অবশ্যি খুব সুখকর হয়নি। ইবরাহীম খাঁ সাহেব [খুব সম্ভব আমার চক্রকাটা লাল রঙের সার্টের জন্যেই] আমাকে খানিকটা সন্দেহের চোখে দেখলেন। আমাদের মধ্যে এই ধরনের কথাবার্তা হলো।

“আমার কোন বইপত্র কি পড়েছ?”

‘জ্বি হ্যাঁ।’

“দুই একটার নাম বলতে পারবে [গলার স্বরে সন্দেহের আভাস?]”

“আমি নছর পেয়াদা পড়েছি, আমাদের পাঠ্য ছিল।”

“পাঠ্যের বাইরে কিছু পড় নাই?”

“বাতায়ন পড়েছি।”

“প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত?”

“জ্বি”।

খাঁ সাহেবের ভ্রূকুঞ্চিত হলো। বিশ্বাস করলেন বলে মনে হলো না।

“কেমন লাগলো বাতায়ন?”

“প্রথম অর্ধেক চমত্কার!”

“বাকি অর্ধেক?”

আমি চুপচাপ [খাঁ সাহেবের ঠোঁটের কোণে হাসির আভাস]।

“আমার ধারণা ছিল আজকালকার ছেলেরা আমার মতো বড়দের লেখা পড়ে না।”

“আপনার ধারণা ঠিক না। আমরা ঠিকই আমরাই পড়ি, আপনারাই পড়েন না।

খাঁ সাহেব গম্ভীর হলেন। চশমা খুলে চশমার কাচ মুছতে লাগলেন। আমি সাহস করে বলে ফেললাম

“আপনি নিশ্চয় হুমায়ূন আহমেদের কোন বই পড়েন নাই।”

খাঁ সাহেব থমথমে গলায় বললেন,

“হুমায়ূন আহমেদ কে?”

“আমি। আমার নাম হুমায়ূন আহমেদ।”

খানিকক্ষণ চুপচাপ কাটল। তিনি চশমা চোখে পরলেন। তীক্ষষ্ট দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। এক অসম বন্ধুত্বের সৃষ্টি হলো সেদিন [৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ সন]। একদিকে নিবেদিতপ্রাণ ইবরাহীম খাঁ, সাহিত্য যার প্রাণপাখি, অন্যদিকে এক যশলিপ্সু তরুণ, সাহিত্য যার কাছে এক ধরনের জীবন বিলাস। আজকের এই লেখা নিবেদিতপ্রাণ ইবরাহীম খাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাড়ির নাম দখিন হাওয়া। নাম শুনলেই মনে হয় সারাক্ষণ উথাল পাথাল বইছে। আসলে কিন্তু সে রকম নয়। পুরানা ধরনের দোতলা বাড়ি। একটু যেন গুমোট ভাব। সে বাড়ির সমস্ত হাওয়ার উত্স এক সৌম্যদর্শন বৃদ্ধ চোখে ভারি পাথরের চশমা নিয়ে সারাদিন বাইরের ঘরে চুপচাপ পড়াশুনা করেন। বসার ঘরটি বড়ই সাদামাটা। মেঝেতে কার্পেট নেই। দেয়ালে কার্পেটের সঙ্গে রং মেশানো পেইনটিং নেই, ভারি-ভারি সোফা নেই। কাঠের একটি টেবিলের সামনে কয়েকটি চেয়ার, বাঁ পাশে একটি লম্বা বেঞ্চ। আসবাবের মধ্যে এই। সবচে যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হচ্ছে দেয়ালের একটি লেখা:

অল্প কথায় কাজ সেরে বিদায় হন যিনি

তাঁকে অনেক ধন্যবাদ, কাজের লোক তিনি।

_ মাতু মিয়া

 লেখায় কাজ হয় না কিছু। যে আসে সে আর উঠতে চায় না। আর উঠবেইবা কেন? বাড়ির দখিন দুয়ার সবার জন্যে খোলা। যেই আসে তাঁকেই হৃদয় খুলে অভ্যর্থনা: বাড়ি কোথায়? কোন গ্রাম? কোন থানা? ছেলেমেয়ে কটি? কী নাম, কোথায় পড়ে? সবশেষে অতি বিনীত ভঙ্গিতে বলবেন, “কী করতে পারি আপনার জনাব?”

বিনা প্রয়োজনে কেউ তেমন আসে না। বেশির ভাগই সাহায্যপ্রার্থী; দরিদ্র ছাত্র, বেতন দিতে হবে, পরীক্ষার ফিস দিতে হবে। দরিদ্র লেখক; জীবনধারণ করতে পারছেন না। কেউ সাহায্য চেয়ে তাঁর কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে গেছে_ এমন অপবাদ তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুও তাকে কোনদিন দেবে না। তাঁর টেবিলের ড্রয়ারে গাদা করা থাকত মনিঅর্ডার ফরম। মাসের প্রথম তারিখে নিজের হাতে লিখতেন সেসব। অধিকাংশই দুঃস্থ কবি-সাহিত্যিকদের জন্যে। মনি অর্ডারে টাকা যারা পেতেন তাঁরা টাকার সঙ্গে বাড়তি পেতেন লিমেরিক জাতীয় রচনা। মনিঅর্ডার ফরমে সুন্দর করে লেখা।

স্কুল-কলেজের ব্যাপারে সাহায্যপ্রার্থীর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। অমুক স্কুল মঞ্জুরি পাচ্ছে না, অমুক কলেজের ফান্ডে টাকা নাই, অমুক জায়গায় নতুন কলেজ হবে, তিনি গিয়ে একটা বক্তৃতা দিলে বড় ভালো হয়। মেয়েদের একটা স্কুল দেয়া হবে, লোকজন খুব বিরোধিতা করছে। তিনি যদি একটু দেখেন। অসীম ধৈর্য নিয়ে শুনছেন সবকিছু। একটা জবদা খাতায় নোট লেখা হচ্ছে। এই অশক্ত শরীর নিয়ে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতটুকু বিরক্তি নেই মুখে। রসিকতা করছেন ক্রমাগত। উদাহরণ দেই।

ভুয়াপুর কলেজের কাজে গিয়েছেন। ভাদ্র মাসের গরম। সমস্ত দিন সভা-সমিতি- মিটিং শেষে ক্লান্ত-বিরক্ত হয়ে দখিন হাওয়াতে ফিরে এসেছেন। এসে শুনলেন এক ভদ্রলোক দুপুর থেকে বসে আছেন। তক্ষুনি গেলেন দেখা করতে। ভদ্রলোকের ছেলেটি কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না। তার একটা ব্যবস্থা করে দিতেই হবে। ইবরাহীম খাঁ সাহেব বললেন_

“আপনার ছেলেটিতো শুনেছিলাম গুণ্ডামী করে বেড়ায়। এখনো সেই রকম নাকি?”

“নাহ্ প্রিন্সিপ্যাল সাহেব, সেই ছেলে আর নাই। এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তাহাজ্জতের নামাজ পড়ে। দিনের মধ্যে ৭/৮ ঘণ্টা মসজিদেই থাকে।”

ইবরাহীম খাঁ খানিকক্ষণ গম্ভীর থেকে বললেন, “হুঁ, জোয়ান ছেলে। বলছেন দিন রাত মসজিদেই থাকে। অবস্থা তো জনাব আগের চেয়েও খারাপ। কোন রকমে আগের মতো করা যায় না?”

যে সময়ের কথা লিখছি সে সময় তাঁর বয়স আশির কোঠায়। বৃদ্ধ বয়সের ব্যাধি ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসারে কাবু হয়েও জীবনকে বাঁধলেন ঘড়ির কাঁটায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা_ ভাগ ভাগ করা কখন কী করবেন। ভোর বেলা হাঁটতে বের হন। সে সময় পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজ নেন। কে কোথায় আছে, কী করছে সব জানা চাই। হাঁটাহাঁটির পর মেয়ের বাড়ি যান ইনসুলিন নিতে। সেখানে নাস্তা শেষ। দখিন হাওয়ায় ফিরে পরের তিন ঘণ্টা হচ্ছে লেখার কাজ। সে সময় তাঁকে কিছুতেই বিরক্ত করা চলবে না। উদাহরণ দেই।

আমি বসে আছি তাঁর ঘরে। জনৈক সরকারি কর্মচারী এসেছেন। খাঁ সাহেবের সঙ্গে উঁচুদরের কে যেন দেখা করতে চান। [খুব সম্ভব তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী; বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কী একটা ব্যাপার।] খাঁ সাহেব বললেন,

“যে সময় যেতে বলছেন সে সময়টা আমার লেখার সময়, যাওয়া সম্ভব নয়।”

“খুবই জরুরি লেখা কি?”

“[মুখে মৃদু হাসি] জনাব আমার সব লেখাই আমার কাছে জরুরি।”

১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে আমি ইবরাহীম খাঁ সাহেবের মেজো নাতনিকে বিয়ে করি [বার বছরের সেই বালিকা পাঠিকা]। বাংলাদেশের অন্য সব নাত-জামাইদের মতো তখন আমি তাঁকে যেকোন সময় বিরক্ত করার পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করি। কত সময় যে কাটিয়েছি তাঁর ঘরে! কত বিচিত্র বিষয় নিয়ে কত বিচিত্র আলোচনা! তাঁর প্রিয় বিষয় হচ্ছে ইতিহাস। তিনি শুরু করতেন ইতিহাস। আমি তাঁকে টেনেটুনে নিয়ে আসতাম ভূত-প্রেতের গল্পে। ভূত-প্রেত আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে পুরোপুরি নাস্তিক ছিলেন। আমি কিছু কিছু অলৌকিক গল্প বলে তাঁকে ব্যাখ্যা করতে বলতাম। তিনি দেখতাম কিভাবে কিভাবে খুবই বিশ্বাসযোগ্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতেন। তার নিজের জীবনে অলৌকিক ঘটনার তিনি অবিশ্যি কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

গল্পটি এ রকম-

তাঁর বড় ভাই মারা গিয়েছেন যেদিন, সেদিন রাত্রে তিনি নামাজ পড়ছেন। গভীর রাত। চারদিকে ঘন অন্ধকার। তিনি হঠাত্ দেখলেন তাঁর জায়নামাজের সামনে একটি ছোট্ট আলো। সেই আলো ক্রমাগত বড় হতে লাগল। সমস্ত ঘর আলোময় হলো। তিনি নামাজ থেকে উঠতে পারছেন না। ভয়ে কাঁপছেন। এক সময় আলো নিভে গেল। তিনি নামাজ শেষ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।

দাদার বেশির ভাগ গল্পই আমি শুনেছি তাঁর নাতি-নাতনিদের কাছে। তারা সব সময় বলতো, “বিখ্যাত লোকের নাতি-নাতনি হওয়ার মধ্যে সুখ যেমন, বিড়ম্বনাও সে রকম।”

উদাহরণ-

ক. দাদা লক্ষ্য করলেন তাঁর নাতি-নাতনিদের সাহিত্যের দিকে তেমন আগ্রহ নেই। যত ঝোঁক খেলাধুলার দিকে। তিনি এক ছুটির দিনে সবাইকে ডেকে বললেন, আজ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সবাইকে একটি করে কবিতা লিখে জমা দিতে হবে। ভালো হলে পুরস্কারের ব্যবস্থা। খারাপ হলে শাস্তির সম্ভাবনা। নাতি-নাতনিরা মুখ কালো করে কাগজ-কলম হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কবিতা আসে না কিছুতেই। একজন কোনমতে লিখল একটি। জমাও দেয়া হলো যথাসময়ে। কবিতার নমুনা:

কেরে পারে কেরে খোদা

গাছের ডালে বসে তোতা

ওরে ভোতা ওরে ভোতা

দাদার মুখ গম্ভীর। রেগেমেগে আগুন। তাঁর কণ্ঠে মেঘ গর্জন “এর মানে কী জানতে চাই।” নাতির চোখে অশ্রুজল।

খ. দাদা মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছেন। একটি নাতি আছে সঙ্গে। মজার মজার গল্প শোনাচ্ছেন দাদা। এক সময় নাতিটি বললো_

“দাদা দেখেছেন, এই বাড়িতে নতুন ভাড়াটে এসেছে?”

“কারা এসেছে জান?”

“জ্বি না।”

“খুবই লজ্জার কথা। পাড়াপ্রতিবেশী কে এল, কে গেল, কিছুই জান না। আজকেই একটা পাঁচ নম্বর খাতা কিনে আনবে এবং পাড়া-প্রতিবেশী যারা আছে সবার নাম-ধাম লিখবে। তাঁরা কে কী করেন, কয় ছেলেমেয়ে সব যেন থাকে। সেই খাতা এক সপ্তাহের মধ্যে জমা নিতে হবে।”

গ. দৈনিক বাংলায় কী যেন একটা লেখা দাদার খুব মনে ধরেছে। নাতি-নাতনিদের উপর হুকুম হলো সবাই যেন লেখাটা পড়ে। নাতি-নাতনিরা খুশি-একটা এমন কোনো বড় ব্যাপার না, বললেই হলো পড়েছি। কিন্তু ভুলবার নয়। দুপুরবেলা নতুন হুকুম লেখাটা শুধু পড়লেই হবে না, খাতায় কপি করতে হবে। কঠিন কঠিন শব্দের অর্থ লিখতে হবে লাল কালিতে। সুন্দর হাতের লেখার জন্য পুরস্কার আছে।

এসব ঝামেলা সত্ত্বেও নাতি-নাতনিরা তাঁর জন্যে পাগল ছিল সারাক্ষণই ঘুরঘুর করতো চারপাশে। দাদা গল্প কবিতা লিখলে খুশি হন। কাজেই গল্প এবং কবিতা ও ছড়া দাদা ভালোবাসেন। সবার চেষ্টা কে কত সুন্দর গল্প বলতে পারে। তাঁর প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছিল। নাতি-নাতনিদের লেখা এক সময় পত্র-পত্রিকায় ছোটদের আসরে ছাপা হতে শুরু করে। একজন আবার রচনা লিখে প্রেসিডেন্ট পুরস্কারও পায়।

আমার সঙ্গে যখন তাঁর পরিচয়, সে সময় তিনি কিন্তু নাতি-নাতনিদের কাছ থেকে বেশ দূরে সরে গিয়েছেন। লেখাপড়া নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমাকে বললেন, হাতে সময় কম, অনেক কাজ বাকি। তাঁর দীর্ঘ দিনের শখ শেরেবাংলার একটি জীবনী লিখবেন। সেটি হয়ে ওঠেনি, তার উপর কাজ করতে হচ্ছে। অপ্রকাশিত রচনা প্রচুর আছে। সে সবেরও ব্যবস্থা করতে হয়। নতুন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার আর্থিক অবস্থা শোচনীয়; তাও দেখতে হয়। তাঁর একটি জীবনী লেখা হচ্ছে। সে জন্যেও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করতে হচ্ছে। মহাব্যস্ততা। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে আগের মতো আর মিশতে পারেন না।

১১ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে পত্নীবিয়োগ হলো। দীর্ঘ দিনের সুখ-দুঃখের সাথীকে হারিয়ে সত্যি সত্যি নিঃসঙ্গ হলেন; কিন্তু অত্যন্ত সহজ ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মৃত্যুকে গ্রহণ করলেন। খবর পেয়ে দেখা করতে গিয়েছি। দখিন হাওয়া লোকে লোকারণ্য। দাদা সবার মাঝে হেঁটে বেড়াচ্ছেন, মুখে শান্ত-সমাহিত ভাব। প্রিয়জনদের কেউ চিত্কার করে কাঁদছিল, তিনি সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তাদের। যে-ই দেখা করতে আসছে খোঁজ নিচ্ছেন তাঁদের। দাদির কবর হলো ভুয়াপুর কলেজের মাঠে। দাদা দুজনের জন্যে সেখানেই শেষ বিশ্রামের জায়গা করে রেখেছেন। নিজের রক্ত করা পরিশ্রমের কলেজের পাশেই যেন থাকতে পারেন। ইসলামী রীতিতে স্বামীর বাঁ পাশে হয় স্ত্রীর কবর। তিনি তার উল্টোটা করলেন। বললেন, বেঁচে থাকতে আমি আমার স্ত্রীকে সম্মান দিতে পারি নাই, মরবার পর একটু সম্মান দেখাতে চাই: আমার স্ত্রীর বাঁ পাশে থাকুক আমার জন্যে। এই প্রথম চোখে জল আসল তাঁর।

ভগ্নহৃদয় ইবরাহীম খাঁ ফিরে এলেন দখিন হাওয়ায়। রণক্লান্ত সৈনিক শয্যা পাতলেন শূন্য বিছানায়। একটি যুগের সমাপ্তি হলো সেদিনই।

-দেশেবিদেশে অনলাইনডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়োজনে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার জন্মদিনে হুদা মেলা…….

এম আবু হেনা সাগর; ঈদগাঁও :দরিয়া নগরের জাতিসত্ত্বার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার জন্মদিন উপলক্ষে একদিন ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/