সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / কক্সবাজারের আইন-শৃঙ্খলা কোন দিকে? বাড়ছে খুন ছিনতাই ডাকাতি

কক্সবাজারের আইন-শৃঙ্খলা কোন দিকে? বাড়ছে খুন ছিনতাই ডাকাতি

Gun (Lash)অজিত কুমার দাশ হিমু, কক্সভিউ:

গত কয়েক দিনে কক্সবাজারের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের তান্ডবে ইতোমধ্যে ঘটেছে কয়েকটি হত্যাকান্ড। প্রতিরাতেই কোথা না কোথাও ফুটছে গুলি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ফাঁকি দিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা পুরো জেলা শহরকেই হাতের মুঠোয় নিয়ে নিত্যদিনেই অপকর্ম করে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে আতংকের মধ্যে দিন পার করছে শহরবাসী। তত্মধ্যে শহরে বর্তমানে মুর্তিমান মানুষের আতংকের একটি নাম সেটি হল অপরাধ জগতের রকি ও হাসনাত বাহিনী। যদিও তারা দুইজনেই জেল হাজতে। তারা জেলখানার ভেতর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছে এসব সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের অনুগত বাহিনীর সদস্যরা কক্সবাজার মডেল থানায় খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ছিনতাইসহ সকল অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়ায় খোদ থানাতেও। থানার কতিপয় দালালের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের মোটা অংকে ম্যানেজ করে একের পর এক অপরাধ করে আসছে ওই বাহিনীর সদস্যরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী, ইসলামপুর, ইসুফআলী ঘোনা, দক্ষিণ রুমালিয়ারছরা, বাঁচামিয়ার ঘোনা, এবিসি ঘোনা, ফাতের ঘোনা, বাদশা ঘোনা, বৈদ্যরঘোনাসহ আশ-পাশের এলাকায় অঘোষিত আধিপত্য ও রাজত্ব বিস্তার করছে এসব বাহিনী। ওইসব অপরাধ জগতের ডনদেরকে নিয়ে বিভিন্ন পাহাড়ের আড়াঁলে গড়ে তুলেছে তাদের নিজস্ব আস্তানা। সেই আস্তানা গুলিতে ছিনতাই-চুরি, ডাকাতি করার পর সেখানে ভাগবাটোয়ারাসহ বিভিন্ন অপকর্মের প্ল্যান-প্রোগ্রামের সিডিউল তৈরি করে তারা। তাদের বাহিনীগুলোতে রয়েছে শতাধিক সন্ত্রাসী। তারা উল্লেখিত এলাকা ছাড়াও পুরো শহরে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। অন্যদিকে তাদের চাঁদাবাজীতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এমনকি ১০/১২ জন ব্যবসায়ী ইতোমধ্যেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে পালিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান সৌরভ, দিলু, রফিক, রকি ও হাসনাত এই বাহিনী প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে ছিনতাই ও জমি দখল করে। রুমালিয়ারছরা আঁলির জাহাল, এবিসি ঘোনা, সমিতি পাড়ায় এই সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয় না এমন কোন ব্যবসায়ী নেই।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ অক্টোবর কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছরা সমিতিবাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রকি ও হাসনাত বাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে শেখ আবদুল্লাহ (২৪) নামে এক পথচারীর মারা গেছে। সে দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার এলাকার অহিদুল আলমের ছেলে এবং পেশায় তিনি নির্মাণ শ্রমিক। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আরো অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।

জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছরার আলোচিত রকি গ্রুপের সদস্য ইসমাইলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী সমিতি বাজার এলাকায় আসে। ওই সময় শেখ আবদুল­াহ একটি চায়ের দোকানে আড্ডারত অবস্থায় ছিল। সমিতি বাজার এলাকায় পৌঁছেই রকি বাহিনীর সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় শেখ আব্দুল্লাহকে ধরে ফেলে তারা। এরপরই তাকে নিয়ে যায় স্থানীয় সিকদার মসজিদের পাশে। যেখানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে নিশ্চিত করে শেখ আবদুল্লাহর মৃত্যু। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরই তারা এলাকা ত্যাগ করে। রকি গ্রুপের ফাঁকা গুলি বর্ষণের সংবাদ পেয়ে ঘটনার কিছুক্ষণ পরই এলাকায় আসে হাসনাত গ্রুপের সদস্যরা। তারাও বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। তবে রকি গ্রুপের হাতে আটক শেখ আবদুল্ল­াহকে রক্ষা করতে পারেনি।

নিহত আবদুল্লাহর পিতা অহিদুল আলম হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর পুত্রকে রকি বাহিনীর সদস্যরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তাঁর ছেলে একজন রাজমিস্ত্রি দাবি করে তিনি বলেন, সে কোন সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিল না। হাসনাত গ্রুপের সাথে রকি গ্রুপ সদস্যদের সংঘর্ষে শেখ আবদুল্লাহ মারা গেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে সচেতন মহলের দাবী ওইসব সন্ত্রাসী বাহিনীকে দমানো না গেলে প্রতিনিয়ত ডাকাতি, ছিনতাই-চাঁদাবাজি-অপহরণ-দখলবাজিসহ প্রাণহানীর ঘটনা নিয়মিত বাড়তেই থাকবে। শিগগিরই এসব এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আটক করলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কিছুটা কমবে।

এব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফাইল আহমদ জানিয়েছেন, শহরে গুঁটি-কয়েজন দুর্বৃত্ত বেপরোয়া হয়ে চুরি-ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে। তাদের আটক করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশাকরি সন্ত্রাসীরা দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়বে।

একইদিন শহরের সৈকতপাড়ার কটেজ জোনে ওইসব সন্ত্রাসী গ্রুপের দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ নুর (৪২) নামে কটেজ ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হয়েছেন। ১৬ অক্টোবর শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে এ ঘটন ঘটে। আহত ব্যবসায়ী ওই এলাকার মৃত নজির হোসেনের ছেলে এবং সৈকত বিলাস কটেজ এর মালিক। তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে শহরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত মোহাম্মদ নুর জানান, ঘটনার সময় তিনি নিজ কটেজের সামনে দাঁড়িয়ে ম্যানেজারের সথে কথা বলছিলেন। এ সময় একদল স্বশস্ত্র লোক অতর্কিত এসে তার উপর আক্রমণ করে। এতে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ ঘটনায় আহতের বোন খালেদা আক্তার বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লে­খ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে শনিবার কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অপারেশন অফিসার এসআই কাইয়ুম উদ্দিন জানান, কটেজ জোনে এরকম একটি ঘটনার খবর শুনেছি। এবিষয়ে আহতের পক্ষে একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/