সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / কলাম / কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি

কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি

Moung Ba Aung (Moung Ba)-:   মং বা অং (মং বা)   :-

শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি এখন পূর্বাপর অবস্থার কিয়দংশও বিদ্যমান নাই। নামমাত্র নামে রয়েছে কক্সবাজার শহরের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য লালদীঘি। লালদীঘিকে রাখাইনরা আদিকাল থেকে অদ্যাবধি ‘‘মাং তারা: কেং’’ নামে অভিহিত করে আসছে। ‘মাং’ রাখাইন শব্দের বাংলা অর্থ ‘রাজা’, ‘তারা:’ রাখাইন শব্দের বাংলা অর্থ ‘বিচার বা শালিসি’ আর ‘কেং’’ রাখাইন শব্দের বাংলা অর্থ ‘পুকুর’।

রাখাইন শাসনামলে এ দীঘিটি নির্মিত নয় বিধায় এতদাঞ্চলে ইংরেজ শাসনকালে কক্সবাজারের জনৈক ইরেজ এস.ডি.ও সাহেব-কে বোঝানো হয়েছে বলে জানা যায়। তবে কোন্ ইংরেজ এস.ডি.ও-কে রাখাইনরা ‘মাং’ নামে সম্বোধন করেছে বিষয়টি পরিস্কার নয়। ১৮৯৮ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলে কক্সবাজার মহকুমায় এস.ডি.ও হিসেবে ইংরেজ, নন-ইংরেজ মিলে মোট ৩৪ জন বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। L.T.K. Lucas ১৮৯৮ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, F.R Godgray ১৯০০ থেকে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, J.C Leighhew ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে কক্সবাজার মহকুমায় এস.ডি.ও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে, R.H Stephen, ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে P.Sen, ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে L.Burrows, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে S.D Davis, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে M.A.G. Ellison, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে A.W. Harris, ১৯২৩ থেকে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত E.A Ramapezzotti, ১৯৪২, ১৯৪৩, ১৯৪৪ ও ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে S.K Dehlavi, D.L Power, D.H.A Alexander I Capt. E.J Fletcher অনুরূপ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মৌলভী আবুল খাইর বি.এ ব্রিটিশ আমলে ৫ এপ্রিল’১৯৪৭ থেকে ১৩ আগষ্ট’১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আর পাকিস্তান আমলে ১৪ আগষ্ট, ১৯৪৭ থেকে ১১ জুলাই’১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কক্সবাজার মহকুমায় এস.ডি.ও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। লালদীঘি লাল নয় কেন? এ প্রশ্ন অনেক জনের। প্রত্যুত্তরে হাল্কাভাবে বলি যে, জনৈক ইংরেজ এস.ডি.ও সাহেবের গায়ের রং লালচে বর্ণের ছিল। তাঁর নির্দেশে মহেশখালী দু’পাড়ার রাখাইনরা মাথায় লাল ফিতা বেঁধে সপ্তাহব্যাপী লালদীঘি খনন আর খননকৃত দীঘির চর্তুপার্শ্বে কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগানো এসব মিলিয়ে লালদীঘি লাল বলা চলে।

লালদীঘি অনেক আগে হারিয়েছে তার সুনাম-ঐতিহ্য (মান-সম্মান), এখন তার অস্তিত্ব (সম্ভ্রম) নিয়ে প্রতিনিয়ত জলবায়ু ও মানুষের সাথে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। লালদীঘি কথা বলতে পারে না, কিন্তু তার অন্তর্জ্বালা কেউ অনুধাবন করতে পারে? মজার বিষয় এর কোনটি কিন্তু তার কারণে সৃষ্ট নয়। পরিবেশ আর মানব কুলের কারণে কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি বর্তমান অবস্থা- এহেন অভিমত অনেক বিজ্ঞজনের। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় লালদীঘি শুকিয়ে গেছে এর পক্ষে শতভাগ যুক্তি বা অজুহাত দেখানোও ধোপে টিকে না। কেননা গোলদীঘিসহ অন্যান্য কয়েকটি দীঘিতে লালদীঘির ন্যায় বছরের কোন সময় পানি শূন্য হয় না। একদা লালদীঘিতে পানি পরিপূর্ণ থাকত। বর্ষার ভরা মৌসুমেও লালদীঘি বর্তমানে পানি পরিপূর্ণ হয় না। কৃত্রিমভাবে লালদীঘি খনন করেও এর পূর্বাপর অবস্থায় নিয়ে আনা যাবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। লালদীঘি মাঠে এখন শুষ্ক মৌসুম তথা বছরের অধিকাংশ সময়ে পানি থাকে না। শহরের উন্মুক্ত মাঠ এমনিতে বড্ড অভাব। খেলা পাগল আবাল বৃদ্ধ বণিতা খোলা মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল খেলবে এতে খেলোয়াড়দের কোনভাবে দোষ দেয়া যায় না।

coxsbazar laldighiসম্প্রতি শহরের এবি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আয়োজনে কক্সবাজার শহরের শুকিয়ে যাওয়া লালদীঘি’র সমতল ও প্রশস্ত মাঠে মাইকিং করে ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট আয়োজন করে রীতিমত শহরবাসীকে তাক লাগিয়েছে। এবি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরাই খেলোয়াড় ছিলেন। ক্রীড়ামোদী উত্সুক দর্শকরা বিনে পয়সা টুর্ণামেন্ট উপভোগ করেছে। (দৈনিক কক্সবাজার: ০৬ জুন, ২০১১ খ্রিঃ)। ভবিষ্যতে এর চেয়ে বৃহত্ পরিসরে লালদীঘিতে ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

একদা কক্সবাজার শহরের আদি বসিন্দা হলো রাখাইন জনগোষ্ঠী। লালদীঘি পুকুরের পূর্বে ও পশ্চিমে দুুটি রাখাইন মহল্লা ছিল। বর্তমান এন্ডারশন রোডের রাখাইন মহল্লার নাম খন-জা-সেজু। খন-জা-সেজু মহল্লার সীমানা ছিল বর্তমান বড় বাজার রোডের থোইন হ্লা প্রু কমপ্লেক্সের ডান পাশে স্থিত ব্রীজ থেকে এন্ডারশন রোডের ইউজানা সেন্টারে ডান পাশে স্থিত ব্রীজ পর্যন্ত। রাস্তার উভয় পাশে একসময় ৫০-৬০টি মত ছোট বড় বসতবাড়ি ছিল। জেলার অন্যতম নদী বাঁকখালী একেবারে মহল্লার পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রাক্তন এস.ডি.ও অফিসে কর্মচারী প্রয়াত মে অং এর বসতবাড়ি কক্সবাজার শহরের সর্ববৃহত্ ও মূল্যবান রেঙ্গুনী কাঠে কারুকার্য ভরা মনোমুগ্ধকর ছিল। বসতবাড়ির সামনে নানা প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছ, একটি পাতকূয়া, বিস্তর খেলার মাঠ ছিল। তাঁর নামে আর.এস, এম.আর.আর ও বি.এস জরিপে ০.৪০০০ একর জমি রেকর্ডভুক্ত ছিল। মে অং পেশকার প্রয়ানের অনেক বছর পর নব্বই দশকের শেষপাতে এসে মহামূল্যবান জমিটি বিক্রয় করে কনিষ্ঠ পুত্র ও নাতি-নাতনীসহ বয়োবৃদ্ধ তাঁর স্ত্রী চাই-তোওয়ে-তে (আকিয়াব) স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হন। মে অং পেশকার বসতবাড়ির সামনে আর একটি সম্ভ্রান্ত রাখাইন বসতবাড়ি ও পরিবার ছিল যেখানে আত্মীয়তা ও সেনাবাহিনীতে চাকুরীর সুবাদে অবসরপ্রাপ্ত লেঃকঃ মং ক্য উ (মেজর মং ক্য উ নামে অধিক পরিচিত) পাকিস্তান আমল থেকে এ বাড়িতে অবস্থান করতেন। প্রয়াত মং ক্য উ এর পৈত্রিক নিবাস রামু’র রাখাইন মহল্লায়। শেষ বয়সে তিনি বাড়িটি বিক্রি করে টেকনাফ উপজেলার চৌধুরীপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন। প্রয়াত মে মং সওদাগরের নামে কিছুদিন আগেও বি.এস জরীপে ০.৩২২৫ একর জমি খতিয়ানভুক্ত ছিল। বিক্রি জনিত কারণে উক্ত জমি থেকে বর্তমানে ০.০৫০০ একর জমি হ্রাস পেয়েছে। মোদ্দা কথা, খন-জা সেজু মহল্লার কয়েকটি পরিবার স্বচ্ছল ও সম্ভ্রান্ত ছিল এটা সহজে অনুমান করা যায়।

প্রত্যেক রাখাইন বসতবাড়ির সামনে বা আশেপাশে তেতুঁল গাছ থাকার রেয়াজ ছিল। সাধারণত রাখাইন পাড়া বা মহল্লার কেউ মারা গেলে তরুণ রাখাইন ছেলেদের কক্সবাজার বিমান বন্দরের সামনে অবস্থিত কেন্দ্রীয় রাখাইন মহাশ্মশানে গিয়ে দায়িত্ব পালন করা এক ধরনের অলিখিত প্রথা ছিল। শ্মশান থেকে সরাসরি বাড়িতে প্রবেশাধিকার ছিল না। তাদেরকে অবশ্যই পুকুরে স্নান সেরে নিজ বসতবাড়িতে প্রবেশ করতে হতো। ক্ষেত্র বিশেষে কতিপয় নারীও পুকুরে স্নান সেরে বাড়িতে প্রবেশ করে। শ্মশান থেকে নিজস্ব বসত বাড়িতে প্রত্যাবর্তনকালে স্নান সারার জন্য লালদীঘি ছিল সবার প্রিয় দীঘি। রাখাইন ঘরের কোন ছেলে মেয়ের জন্মের পঞ্চম দিন ভোর হবার সাথে সাথে প্রসূতি ও নব জাতকের কাপড় চোপড়সহ গৃহে সমস্ত কাপড় নিকটস্থ পুকুরে সম্মিলিতভাবে পরিস্কার করার প্রথা এখনো বিদ্যমান আছে। রাখাইন সম্প্রদায় পুকুর ব্যবহারের আরো কয়েকটি সামাজিক প্রথা আছে। যেমন- রাখাইন বর্ষের শেষ দিনে গৃহস্থ সমস্ত কাপড় নিকটস্থ পুকুরে পরিস্কার করার নিয়ম ছিল। এছাড়া আনুষ্ঠানিক রাখাইন বিয়ের (Arrange marriage) পর নব দম্পতিকে একই প্লেটে সাতদিন আহার গ্রহণ করতে হয়। বিয়ের পরে পূর্ণিমা বা অমাবস্যা তিথির অতিক্রম জনিত কারণ কিংবা অন্য কোন কারণে সাত দিনের পরিবর্তে ক্ষেত্র বিশেষে পাঁচ-তিন বা একদিন পরেও আহারের উচ্ছিষ্টাংশ বাসর ঘরে রক্ষিত একটি পাত্রে (মঙ্গলপাত্রে) সঞ্চিত করে সূর্যোদয়ের পূর্বে পুকুরে ডুবিয়ে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। বর্তমানে যুগ বিবর্তনে ও ক্রমাগত পুকুরের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণে এসব প্রাচীন রাখাইন ঐতিহ্য হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। নব প্রজন্মের রাখাইনরা এসব ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে।

খন-জা-সেজু’র মহল্লায় একটি চেরাংঘর ছিল যার অবস্থান ছিল বর্তমান ‘‘নিউ জহুর মার্কেট’’ এলাকায়। পাকিস্তান আমল থেকে চেরাংঘরটি বিলুপ্ত হয় মর্মে অনুসন্ধানে জানা যায়। যখন মহল্লাটি সরগরম ছিল তখন খন-জা-সেজু’র মহল্লার চেরাংঘরটিও সরগরম ছিল। যে কোন চেরাংঘরের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল মহল্লার বয়োবৃদ্ধ ও যুবরা (সাধারণতঃ অলস ও বেকার) অবসর সময়ে বসে আড্ডা দিত, ‘আ-ফেং-রে’/আপ্যেরে (রং বা লাল চা) পান করত, আনন্দ উত্সবাদিতে বয়সভিত্তিক দল বেঁধে গৃহনির্মিত মদ্য পান করে মজা উপভোগ করত। এছাড়াও এ মহল্লার কোন মেয়ের সাথে অন্য কোন মহল্লার ছেলের সাথে আনুষ্ঠানিক বিয়ের সময় বরপক্ষের লোকজন প্রথমে চেরাংঘরে অবস্থান করে সামাজিক রীতিনিতি সম্পাদন করত।

উল্লেখ্য, খন-জা-সেজু’র মহল্লার চেরাংঘরের মালিকানা কেবল এ এলাকার জনসাধারনের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল, অন্য কোন পাড়া/মহল্লার জনসাধারনের জন্য নয়। তবে এ ধরনের চেরাংঘর বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু স্বত্ব দাবি করা যায় না। যদি করি বা করাই তা দেশে প্রচলিত আইনেও আইনসিদ্ধ হয় না।

খন-জা-সেজু মহল্লার পশ্চিম পাশের ব্রীজ থেকে বর্তমান বদর মোকাম মসজিদের সামনে ব্রীজ পর্যন্ত আর একটি রাখাইন মহল্লা ছিল যার নাম ‘ম-র’। রাখাইন ভাষায় ‘ম’ শাব্দিক অর্থ মাথা সামান্য উঁচু করে দেখা আর ‘র’ শাব্দিক অর্থ মহল্লা। ‘ম-র’ আভিধানিক অর্থে খালের নিকটবর্তী যে পাড়া/ মহল্লাটি অন্যান্য এলাকার চেয়ে সামান্য উঁচু সে পাড়া/মহল্লাকে ‘ম-র’ বলে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডে একটি বৃহত্ রাখাইন পাড়ার নাম ‘ম-র’ যা দক্ষিণ রাখাইন পাড়া নামে পরিচিত। লালদীঘি এ মহল্লার পূর্ব দিকে ছিল। এ মহল্লায়ও একসময় ৫০-৬০টি মত ছোট বড় বসতবাড়ি ছিল। ১ম বিশ্বযুদ্ধ, ২য় বিশ্বযুদ্ধ, বিভিন্ন সময়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থানে অনেক রাখাইন পরিবার নামমাত্র মূল্যে বাপ দাদার ভিটে জমি বিক্রয় করে পার্শ্ববর্তী তত্কালীন বার্মায় স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়। যারা ছিল তারাও সংখ্যায় এত কম ছিল যে তাদের পক্ষে আর এ মহল্লায় অবস্থান করার মত পরিবেশ ছিল না। প্রবল প্রতিপত্তি, ভূমিগ্রাসীদের সাথে মামলা মোকদ্দমা জড়িয়ে তাদের পক্ষে ভিটেমাটি উদ্ধার করা দুরূহ ব্যাপার ছিল। তাদের এ দেশ (মাতৃভূমি) পরিত্যাগের কারণ গভীর অনুসন্ধানে জানা যায় যে, পাকিস্তান আমলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার অভাব, বাক স্বাধীনতা না থাকা, দু’বেলা আহার যোগাড় করার মত কোন কর্ম না থাকা, ছেলে-মেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ না থাকা ইত্যাদি অজুহাতে হাজার হাজার পরিবার, ক্ষেত্র বিশেষে পুরো গ্রাম/ মহল্লা বার্মায় (পিতৃভূমি)তে স্থানান্তরিত হয়েছে। এ ধরনের স্থানান্তরিত হওয়া পরিবারের মধ্যে ৫-১০% পরিবার ওখানকার পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে যাওয়ায় স্বচ্ছল জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়েছে। অবশিষ্ট ৯০% পরিবার ‘দিনে আনে দিনে খায়’ এ ধরনের অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়েছিল।

‘ম-র’ মহল্লায় দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন তেমন কয়েক পরিবারের সদস্যরা এখনো কক্সবাজার শহরে বিভিন্ন রাখাইন মহল্লায় বসবাসরত আছেন। তাদের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায় যে, ম-র মহল্লাটি একদা সুন্দর ও সাজানো গোছানো ছিল। মহল্লাটি কক্সবাজার শহরের সর্ব পশ্চিমে রাখাইন মহল্লা ছিল। একটি রাখাইন পাড়া/ মহল্লায় যা যা উপাদান থাকার প্রয়োজন ছিল সবই ছিল এ মহল্লায়। একটি রাখাইন পাড়া বা মহল্লায় কয়েকটি প্রধান উপাদান হচ্ছে- ১. উপাসনালয় তথা বৌদ্ধ বিাহর ও সংলগ্ন সীমা বিহার, প্যাগোডা, ২. চেরাংঘর/আড্ডাখানা (‘জা-রেত্)’, ৩. সুবিধাজনক স্থানে পথিকদের জন্য পানি পানের ব্যবস্থা রাখা (‘রা-খুং-জাং’), ৪. পুকুর (‘কেং বং’) ও ৫. বৃক্ষে অবস্থারনত পাড়া/ মহল্লার দেব-দেবী (‘রসাং-পাং’)। ধর্মীয় উত্সবাদির মধ্যে রথোত্সবটি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে এ মহল্লার লোকেরা উদ্যাপন করত। এর পশ্চিমে বাঁকখালী নদী ও পূর্বে লালদীঘি ছিল মহল্লার জনসাধারনের অতি প্রিয়। ম-র মহল্লায় প্রায় শেষপাদে কস্তুরীঘাট ছিল যেখানে আশি দশক পর্যন্ত বড় বড় মালবাহী জাহাজ এ ঘাটে ভিড়ত। এ ঘাট দিয়ে সর্বজনসাধারণ সাম্পান, ছোট ছোট নৌকা দিয়ে নয়াপাড়া, খরুস্কুল, চৌফলদন্ডী, মহেশখালীসহ ইত্যাদি দ্বীপে প্রতিদিন জীবন বাজি রেখে পারাপার হত। ম-র মহল্লায় কিছু সংখ্যক রাখাইন কস্তুরাঘাটসহ এর আশে পাশে সুবিধাজনক স্থান থেকে প্রতিদিন নানা প্রজাতির মত্স্য, কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিছু সৌখিন মানুষও এ ঘাট থেকে মাছ শিকার করত। লালদীঘিতেও বড়শি দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য আশি দশক পর্যন্ত শহরের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। সন্ধ্যা বেলায় কস্তুরাঘাটে বসে হাওয়া খাওয়ার জন্য স্থানটি মনোরম ও অপূর্ব ছিল। ঐতিহ্যবাহী লালদীঘিতে কক্সবাজার পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে ইজারাদাররা রুই, কাতাল, মৃগেল, তেলাপিয়াসহ নানা প্রজাতির মিঠা পানির মাছ চাষোত্তর ছোট ছোট নৌকায় চড়ে ছোট বড় জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করত।

খন-জা-সেজু ও ম-র মহল্লার লোকেরা লালদীঘিতে প্রতিনিয়ত কাপড় চোপড় পরিস্কার করত, গোসল সারত। লালদীঘিতে সে সময় সারা বছরই পানি পরিপূর্ণ থাকত। এক সময় লালদীঘির আয়তন বর্তমান লালদীঘির চেয়েও বিশাল ছিল। দিঘীর চর্তুদিকে নানা প্রজাতির বড় বড় ফলজ ও বনজ গাছ ছিল। এলাকার ছেলে-মেয়েরা এসব গাছ থেকে লাফিয়ে (Diving) দিঘীতে মনের আনন্দে মজা করত আর নিত্যদিনের গোসল সাড়ত। লালদীঘি পানি শূন্য হবে এমনটি কোনদিন তারা কল্পনাও করেনি। বিষয়টি তাদেরকে এখন পীড়া দিচ্ছে। খন-জা-সেজু এলাকার (এন্ডারশন) প্রয়াত মেমং সওদাগরের সহধর্মিণী মিসেস আ মা এ লেখককে জানান, ‘‘বৃটিশ আমলে এসব কয়েকটি মহল্লায় বড় পরিসরে কোন দীঘি ছিল না। বর্তমান হোটেল পালংকির স্থানে একটি হিন্দু পরিবারের পুকুর ছিল। বিলকিস হোটেল রাখাইনদেরই পুকুর ছিল। স্বরস্বতীর হিন্দু মন্দির লাগোয়া ও বামপাশে স্থিত পুকুরটি প্রায় ২০০০ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভার আবর্জনা ফেলানোর স্থান ছিল। মন্দির কমিটি রেজুলেশন করে পুকুরটি ভরাট করে বর্তমানে এস.আলম-সৌদিয়া এসি গাড়ির কাউন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মহেশখালী পৌর এলাকার বড় রাখাইন পাড়া ও দক্ষিণ রাখাইন পাড়ার রাখাইনদের মধ্যে তাদের স্ব স্ব এলাকার প্রাধান্য ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নিয়ে প্রতিনিয়ত নানা ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত থাকত বা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত। প্রাত্যাহিক জীবনে বিবাদ মাত্রার পরিমাণ একদা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, কক্সবাজারে অবস্থানরত জনৈক ইংরেজ এস.ডি.ও সাহেবকে ঘটনার সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিল। মহেশখালী এলাকার সমাজপতিরা তাদের এলাকার র-জা: নামে পরিচিত ছিল। র-জা:-রা যেখানে বিবাদে লিপ্ত ছিল এস.ডি.ও সাহেবকে নাক না গলে উপায় ছিল না। একদিন উভয় পক্ষের লোকজন নিয়ে এস.ডি.ও সাহেব তাঁর সরকারি দপ্তরে শালিসিতে বসেন। এ ধরনের এক শালিস বৈঠকে বা বিচারে রায় হয় যে, উভয় পাড়ার প্রায় ৫০ জন করে মোট ১০০ জন সক্ষম পুরুষকে বর্তমান লালদীঘিতে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় এক সপ্তাহ খনন করতে হবে। তখনকার সময়ে এস.ডি.ও সাহেবের ক্ষমতা অসীম ও বিশাল ছিল। হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। রায় মতে সবাইকে খনন করতে বাধ্য হয়েছিল। সপ্তাহব্যাপী খননকৃত বিশাল আকৃতির সুগভীর পুকুরটি বর্তমান লালদীঘি। এ ইতিহাসটি মহেশখালীর অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ রাখাইন জানেন। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে বিব্রত বোধ করেন। ইতিহাস কোনদিন চাপা থাকে না। সত্য ইতিহাস একদিন না একদিন কারোর মাধ্যমে প্রকাশ হবে এটি চিরন্তন সত্য (Universal Truth) ও বাস্তব।

শহরের এন্ডারশন রোডের বর্তমান স্থায়ী বাসিন্দা ও কক্সবাজারের বিশিষ্ট আইনজীবী-কলামিষ্ট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় গত ৬ জুন-২০১১ খ্রিঃ তারিখে ‘অতিথি’ নামক কলামে ‘‘লালদীঘিতে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট : অশনী সংকেত’’ শিরোনামে লেখেন, ‘‘পাকিস্তান আমলে স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে লালদীঘিতে নিয়মিত সাঁতার প্রতিযোগিতা হত। প্রায় সময় টেকপাড়ার বদিউল আলম মাষ্টার সাহেব সাঁতার প্রতিযোগিতা পরিচালনা করতেন। কক্সবাজর পৌরসভার সাবেক কমিশনার বাহারছড়ার নুর আহমদ মিয়ার ছেলে মরহুম ইকবাল তরুণ বয়সে অনেকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালের দিকে পৌরসভার নেতারা পৌরসভার আয় বাড়ানোর অজুহাতে লালদিঘী আংশিক ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন আমি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসাবে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করি এবং বলেছিলাম যে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফায়ার ব্রিগেড কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি না নিয়ে পুকুর বা দীঘি ভরাট করা যাবে না। বিষয়টি ফায়ার ব্রিগেড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হোক এবং লালদীঘি ভরাট নিষিদ্ধ করে প্রস্তাব পাশ করা হোক। আমার যতটুকু মনে পড়ে সভায় উপস্থিত বিএনপি নেতা মরহুম একরামুল হুদা চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরী আমার প্রস্তাব সমর্থন করলে উপস্থিত সবার সমর্থনে সেই প্রস্তাব পাশ হয়। এ যাত্রায় লালদীঘি রক্ষা পায়। আর একবার লালদীঘির পূর্ব পাড়ের দক্ষিণ কোণায় যেখানে এখন পিলারের উপর কক্সবাজারের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদটি হয়েছে সেখানে কিছু ব্যবসায়ী পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়েছেন দাবী করে ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করার চেষ্টা করলে মরহুম ফিরোজ আহমদ চৌধুরী এডভোকেট মামলা দায়ের করে দেওয়ানী আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা জারী করলে সেই যাত্রাও লালদীঘি রক্ষা পায়। কিন্তু এখন প্রকৃতির কারণে বছরে চার/পাঁচ মাস ঐতিহ্যবাহী লালদীঘিতে পানি থাকে না। লালদীঘি এলাকার হাজার হাজার লোক গোসল ইত্যাদি কাজে শত শত বছর ধরে ব্যবহার করছে। এখন এলাকায় যদি, আল্লাহ না করুক, কোথাও বাড়ীঘর, দোকান বা মার্কেটে আগুন লাগে তখন আগুন নিভানোর জন্য পানি কোথায় পাবে তা নিয়ে এলাকাবাসী আতংক।’’

প্রত্যেক জিনিসেরই সৃষ্টি ও ধ্বংসের কাহিনী রয়েছে। সোজা ভাষায় বলা যায় সৃষ্টি হলে ধ্বংস হবেই- হবে। এটি অবধারিত। আমরা কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি পুকুরের সৃষ্টির রহস্য সামান্য জেনেছি। কিন্তু ধ্বংসের কথা আমরা কি শুনতে প্রস্তুত? নিশ্চয় নয়। গুণিজন এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সাহেবের আশংকা অমূলক নয়। ১৯৯৫ সালে তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়ে পদাধিকার বলে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সদস্য হওয়ায় এবং একজন সচেতন ব্যক্তি হওয়ায় সভায় প্রতিবাদের কারণে লালদীঘি রক্ষা পেয়েছিল। তিনি কক্সবাজারবাসীর কাছে ধন্যবাদ প্রাপ্য। সে সময়ে তিনি নিশ্চুপ থাকলে ভূমি লোলুপ লোকদের বদান্যতায় এতদিনে লালদীঘি ভরাট হয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়ে যেত। স্থানীয় মুসল্লীদের নামাজের সুবিধার্থে ২০০১ সালে লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে (সিনেমা সড়ক) ‘লালদীঘি জামে মসজিদ’টি স্থাপিত হয়। বাঁশ, কাঠ ও ঢেউটিন দিয়ে অস্থায়ীভাবে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। এ মসজিদ নির্মাণোত্তর জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটি ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির কয়েকটি সভায় নির্মাণের পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি মত ও অভিমত ব্যক্ত হয়েছিল।

মরহুম এডভোকেট ফিরোজ আহমদ চৌধুরী এর সুযোগ্য কনিষ্ঠ পুত্র লালদীঘির পূর্বপাড়ে এডভোকেট ফিরোজ আহমদ চৌধুরী সড়কের পাশে জনাব আলহাজ আলী হাসান চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ ‘‘বায়তুর রহমান জামে মসজিদ’’ নির্মাণ শেষে ২০০১ সালে পশ্চিমপাড়ে স্থাপিত মসজিদটি অন্যত্র সরানো হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।

শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘির সোনালী সময়ে এর পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে ইট কংক্রিট দ্বারা নির্মিত চারটি শক্ত ঘাট ছিল। প্রধান সড়ক লাগোয়া দক্ষিণ পাড়ের ঘাটটি নব্বই দশকে ভেংগে সাইডওয়াল দিয়ে দীঘির প্রায় ২০ ফুট মাটি ভরাট কেন করা হয়েছে তা জনসাধারণের নিকট সুস্পষ্ট নয়। অথচ ঘাটতি প্রধান সড়ক লাগোয়া বিধায় শহরের কোন এলাকায় অগ্নিকান্ড ঘটলে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি অতি সহজে এ ঘাট থেকে পানি আহরণ করতে সুবিধা ছিল। উত্তর পাড়ের ঘাটটি কক্সবাজার পৌরসভার প্রাক্তন কমিশনার নুরুল হক (মাঝু) এর ব্যক্তিমালিকানাধীন ঘরের সামনে অবস্থিত। নব্বই দশক পর্যন্ত উক্ত বসতবাড়ির লোকজন ঘাটের উপরিভাগ থেকে লালদীঘি ব্যবহার করার দৃশ্য প্রধান সড়ক থেকে অবলোকন করা যায়। পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের ঘাটদ্বয় সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে দেখা যায় যে, লালদীঘির মধ্যভাগ থেকে ঘাটের উপরি অংশের উচ্চতা ১২-১৫ ফুট পর্যন্ত হবে। এত উচ্চতা বিশিষ্ট পুকুরে ভরা বর্ষার মৌসুমেও ৩-৪ ফুট পানি লালদীঘি ধরে রাখতে পারবে কিনা কিংবা বর্ষার শেষ পর্যন্ত জমাট পানি মজুদ থাকবে কিনা বলা মুশকিল। ২-৩ ফুট মাটি খুঁড়তে যেখানে অনায়াসে ভূ-গর্ভস্থ থেকে পানি মাটির উপরে বের হয়ে আসে, সেখানে ব্রিটিশ আমলে ১৫ ফুট মাটি খনন করতে রাখাইনদেরকে উঠন্ত পানি নিয়ে কত ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল তা সহজে অনুধাবন করা যায়। মাটি খনন করলে ভূ-গর্ভস্থ থেকে পানি বের হওয়ার জন্য অনেক গর্ত বা পথ থাকে ঐসব পানি গর্ত বা পথ যদি ময়লা আবর্জনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় বা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে আরো ৫-১০ ফুট খনন করেও লালদীঘিতে পানি জমিয়ে রাখা যাবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

শ্রদ্ধেয় এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সাহেবের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, লালদীঘির পূর্বপাড়ে মসজিদটি নিঃসন্দেহে কক্সবাজার শহরের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক মসজিদ। এ মসজিদ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের স্বার্থে হলেও লালদীঘিকে রক্ষা করা করা অত্যন্ত জরুরী। আসুন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি’র হারিয়ে যাওয়া সুনাম-ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব সম্মিলিতভাবে রক্ষা করি।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

দ্রুত ও স্থায়ী অবসান হোক রোহিঙ্গা সমস্যার

-: তাওহীদুল ইসলাম নূরী :- ২৫ আগষ্ট ২০১৯, রোহিঙ্গা সমস্যার দুই বছর পূর্তি হল। একে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/