সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে হঠাত্ মারা পড়ছে কচ্ছপ

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে হঠাত্ মারা পড়ছে কচ্ছপ

Kaccapএম.ইব্রাহিম খলিল মামুন :

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে চলছে কচ্ছপের ডিম পাড়ার উত্সব। বালুচরে ডিম পাড়ার জন্য কক্সবাজার উপকূলে আসছে সামুদ্রিক কচ্ছপ। আবার ডিম থেকে বাচ্চা হয়ে শত শত কচ্ছপ সাগরে চলে যাচ্ছে। জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বদরমোকাম, শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়া, মনখালী, হিমছড়ি, প্যাচারদিয়া ও সোনাদিয়া দ্বীপের সৈকতে দেখা মিলছে মা কচ্ছপের। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে জেলেদের মধ্যে সচেতনতামুলক কাজ করে আসলেও জালে আটকা পড়ে কাছিমের মৃত্যুর হার কমছেনা।

জানা যায়, শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় মা কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসে। গত বছর এই সময় উপকূলে পুঁতে রাখা মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে শত শত মা কচ্ছপ মারা পড়েছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর প্রচারণার কারণে এ বছরের শুরুতে জেলেদের জালে আটকে কচ্ছপ মারা পড়া কমে গেলেও গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর হার হঠাত্ বেড়ে গেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, উপকূলের সোনাদিয়া থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত সাগর এলাকায় ডিম পাড়তে আসার সময় কেউ কচ্ছপকে মেরে না ফেলে তার জন্য স্থানীয় লোকজনের মাঝে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তর সচেতনতা সৃস্টি করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি গুরুত্বপুর্ণ এ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। তার পরও পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে আমরা বেসিক কাজটি করে যাচ্ছি।

জেলেরা জানান, উপকূলের সোনাদিয়া থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সাগর এলাকায় হরেক রকম কচ্ছপের বিচরণ দেখা যায়। আগে এসব কচ্ছপ জালে আটকা পড়লে জেলেরা লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলতেন। এখন জালে আটকা পড়লে কচ্ছপ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে কতিপয় জেলে গোপনে কিছু কিছু কচ্ছপ মেরে ফেলছে।

সামুদ্রিক প্রাণী গবেষণা সংস্থা মেরিন লাইফ অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ও কচ্ছপ বিশেষজ্ঞ জহিরুল ইসলাম জানান, দেশের ভৌগোলিক সীমায় বঙ্গোপসাগরে কচ্ছপ বিচরণ করে। পশ্চিমে সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ-পূর্বের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্র সৈকতের বালুচরে এরা ডিম পাড়তে আসে। শীতকাল থেকে বর্ষার শুরু পর্যন্ত কচ্ছপের ডিম পাড়ার সময়। স্থান ও প্রজাতিভেদে দিন-ক্ষণ পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এখন পর্যন্ত পাঁচ প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের উপস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অলিভ রিডলে, গ্রিন টারটল এবং হকসিবল— এই তিন প্রজাতির কচ্ছপ কক্সবাজার উপকূলে ডিম পাড়তে আসে।

কচ্ছপ রক্ষায় সচেতনতা বাড়ছে: সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নুরুল আমীন জানান, ‘গত নভেম্বর মাস থেকে কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসছে। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কচ্ছপ মারা অনেকটা কমে এসেছে।’

এদিকে সেন্ট মার্টিন ও সোনাদিয়াসহ কচ্ছপের বিচরণ এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় কচ্ছপ প্রজনন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সৈকত এলাকায় শব্দদূষণ, জেনারেটর চালানো ও যানবাহনের আনাগোনা বেড়ে গেলে মা কচ্ছপ উপকূলে ডিম পাড়তে আসবে না।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ কচ্ছপের জন্য সংরক্ষিত এলাকা। এই এলাকার পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী এ ব্যাপারে সহায়তা করছেন। কচ্ছপের ডিম চুরি বন্ধে সৈকতে পাহারা বসানো হয়েছে।

কচ্ছপ পাচার কমেছে: সাগরে জাল পুঁতে, বেহন্দি জাল বসিয়ে, বড়শি দিয়ে কচ্ছপ ধরে একটি চক্র। পাচার হয় কচ্ছপের খোল, চামড়া ও ডিম। এ ছাড়া অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে কচ্ছপ প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে। তবে বর্তমানে এই প্রবণতা কমেছে।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আমীর সুলতান ২০-৩০ বছর ধরে কচ্ছপের ডিম মিয়ানমারে বিক্রি করেছেন। গত বছর থেকে এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/01/BGB-Rafiq-24-1-23.jpeg

বিপুল পরিমাণ পপিক্ষেত ধ্বংস করল বিজিবি

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম; লামা-আলীকদম : পার্বত্য জেলা বান্দরবানে থানচি উপজেলা গহীণ অরণ্যে মাদক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/