ঈদের ছুটিতে বেশিরভাগ মানুষ ঘরের টানে বাড়ি ফিরলেও কিছু কিছু মানুষ আছেন যাদের কাছে এই সময়টা শুধুই উপভোগের। এজন্য তারা ছুটে বেড়ান দেশ-বিদেশের বিনোদন মুখর বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র সাগরের কোল ঘেঁষা কক্সবাজারে যে এই পর্যটকরা আসবেন এটা জানা কথাই।
এবারের ঈদের টানা ছুটিতে দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটক এখন কক্সবাজারে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে সাগর সৈকতে পর্যটকদের যেন মহামিলন ঘটেছে। জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট, হোটেল, মোটেল ও কটেজসমূহে প্রায় ২ লাখেরও বেশি পর্যটক এখন অবস্থান করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।
এসব পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনের সব ইউনিট সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় নজরদারি বাড়িয়েছে। কোথাও যাতে কোনও অনিয়ম না হয় সেজন্য প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে সমুদ্র সৈকত লাবণীর পাশে পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটকদের অভিযোগ দ্রুত আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পুলিশ প্রশাসনের সাদা পোশাকধারী লোকজন পর্যটকদের সঙ্গে মিশে গিয়ে অপরাধী সনাক্ত করার কৌশল গ্রহণ করেছে। মোতায়েন করা হয়েছে মহিলা পুলিশও।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, দেশি-বিদেশি অগণিত পর্যটক ৩ শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস-রেস্ট হাউস, কটেজ ও আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। কোথাও এখন ঠাঁই নেই। ঈদের ছুটিতে সব গ্লানি মুছে বেড়ানোর পাশাপাশি একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসব দেশি-বিদেশি পর্যটক এখন কক্সবাজারে ভিড় জমিয়েছে। নারী-পুরুষ, শিশু, আবালবৃদ্ধবণিতা কেউ বাদ যায়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সপরিবারে, বন্ধু-বান্ধবসহ দলবদ্ধ পর্যটকদের পাশাপাশি নব দম্পত্তি, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন স্তরের দেশীয় পর্যটকদের আনাগোনা আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে। প্রতিনিয়তই অসংখ্য পর্যটক হোটেল রুম বুকিং দেওয়ার জন্য কল করছেন। কিন্তু, নতুন করে কাউকে হোটেল রুম বুকিং দেওয়া সম্ভবপর হচ্ছে না। সবাই এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য ছুটে আসছে।
তবে যে হারে পর্যটকের আগমন বেড়েছে, সে অনুপাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এ অভিযোগ আগত পর্যটকদের অধিকাংশরই। এক্সক্লোসিভ ট্যুরিস্ট জোন না থাকায় বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকেরা নিজেদেরকে কখনোই নিরাপদ ভাবতে পারছেন না। পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট মাথায় রেখে বিদেশি পর্যটকদের অনেক সময় সতর্কতার সঙ্গে ভ্রমণ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেকে নানা প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে নিজ দায়িত্বে ভ্রমণ করছেন। শুধু কক্সবাজার নয়, পর্যটকদের ভ্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, পাথুরে বীচ ইনানী, পাহাড়ী ঝর্ণাসমৃদ্ধ হিমছড়ি, পাহাড়ঘেরা দরিয়া নগর, ইতিহাসসমৃদ্ধ আদিনাথ মন্দির, রামুর রামকোর্ট, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ সাগর পাড়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ ও কটেজে। তবে পর্যটকদের বিশাল অংশ প্রতিনিয়ত চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে খাবার হোটেল, রিক্সাচালক, টমটম চালক, সমুদ্র সৈকতের ছাতা, ক্যামরা ওয়ালা, পর্যটন স্পট, হিমছড়ি পিকনিক স্পট, হিমছড়ি যাদুঘর আর সমুদ্র সৈকতের গলফ মাঠের পিকনিক স্পটের ইজারাদারের কাছে। সেসব জায়গায় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও প্রশাসন তা প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ইজারাদারের লোকজনের অনেক সময় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া আবাসিক হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। রিক্সা আর টমটম ছাড়াও বাস, মাইক্রোবাস, জীপ, সি ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে পর্যটকদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে শহরের ৩টি প্রবেশ পথ ও বিচের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ক্লোজ সার্কিট ক্যামরা বসানো হয়েছে। র্যাব, পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন যানবাহন, অটোরিক্সা, কার, মাইক্রো, বিভিন্নস্থাপনা ও সন্দেহজনক ব্যক্তিবর্গকে তল্লাশিও করছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, ঈদের ছুটিতে আসা প্রায় দেড় লাখেরও বেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ৩ স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে পারে। বিভিন্ন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিশও তত্পর রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের কর্তব্য।
-দেশেবিদেশেডটকম,ডেস্ক।
You must be logged in to post a comment.