সাম্প্রতিক....
Home / জাতীয় / কলরেট বাড়বেই, সিদ্ধান্তে অটল বিটিআরসি

কলরেট বাড়বেই, সিদ্ধান্তে অটল বিটিআরসি

বিটিআরসির প্রস্তাবিত ভয়েস কলের তালিকা

মোবাইল ফোনে সর্বনিম্ন কলরেট ১০ পয়সা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।গত সপ্তাহে বিটিআরসির এই প্রস্তাব টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তা পুনর্বিবেচনা করতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তবে ১৬ আগস্ট বুধবার বিটিআরসির নিয়মিত কমিশন বৈঠকে মোবাইল ফোনের কলরেট পরিবর্তনে আগের অবস্থানেই অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

বৈঠকে আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে একাধিক সূত্র প্রিয়.কমকে জানিয়েছে, কলরেট পরিবর্তনের যুক্তিতর্কে বলা হয়, অননেট-অফনেট কলের ব্যবধান কমিয়ে গ্রাহকদের ফোন কলের খরচ কমাতেই কলের নতুন হার নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলে এমএনপি সেবা চালু হলে বাজারে যেন অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়টিও মূল্যহার পুনর্র্নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, কলরেট পরিবর্তনের এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেশের সকল মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকেও মতামত নিয়েছে বিটিআরসি। তারা এ পরিবর্তনের বিষয়ে সহমত ব্যক্ত করেছে বলে জানানো হয়েছে। ফলে বিটিআরসি থেকে প্রস্তাবিত এই সিদ্ধান্তগুলো পুনরায় মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। বিটিআরসি আশা করছে এবার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাবে।

মোবাইল ফোনে সর্বনিম্ন কলরেট ১০ পয়সা বৃদ্ধির ফলে একই অপারেটরে কথা বলার খরচ বাড়বে। তবে অন্য অপারেটরের সাথে কথা বলার খরচ ১৫ পয়সা কমে যাবে। অননেট কলরেট মিনিটপ্রতি ন্যূনতম ৩৫ পয়সা ও অফনেট সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা করা হবে। বিটিআরসি বলছে, প্রস্তাবে সর্বোচ্চ কলচার্জ বিদ্যমান দুই টাকার স্থলে কমিয়ে ৬০ পয়সা করা হয়। এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে বড় অপারেটরদের মাসে সর্বোচ্চ ১১২ কোটি টাকা আয় বাড়লেও টেলিটকের মাসে পাঁচ কোটি টাকা করে আয় কমে যাবে।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোবাইল ফোনের কলরেট বর্তমানে রয়েছে অননেটে সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা ও অফনেটে সর্বনিম্ন ৬০ পয়সা। বর্তমানে প্যাকেজভেদে অননেট কলরেট গ্রামীণফোনে প্রতি ১০ সেকেন্ডে ২১ পয়সা থেকে ২৭ দশমিক ৫ পয়সা, রবির ৭ পয়সা থেকে ২২ পয়সা ও বাংলালিংকের ২২ পয়সা থেকে ২৭ পয়সা। মোবাইল ফোন অপারেটরদের অননেট কলরেট সবচেয়ে কম টেলিটকের। প্রতিষ্ঠানটির সর্বনিম্ন কলরেট মিনিটপ্রতি ৩০ পয়সা (৫ পয়সা প্রতি ১০ সেকেন্ডে) ও সর্বোচ্চ ৬০ পয়সা।

এদিকে অফনেট কলের ক্ষেত্রে প্যাকেজভেদে প্রতি ১০ সেকেন্ডে টেলিটক ১৫ পয়সা, গ্রামীণফোন ২১ পয়সা থেকে ২৭ দশমিক ৫ পয়সা, রবি ১১ পয়সা থেকে ২৩ পয়সা ও বাংলালিংক ১২ পয়সা থেকে ২৯ পয়সা করে চার্জ করছে। এর বাইরে নির্দিষ্টসংখ্যক (এফএনএফ) নম্বরে কল করার ক্ষেত্রে বিশেষ রেট রয়েছে।

কলরেট বৃদ্ধি করার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা গেছে, বিটিআরসির গত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত পরিচালিত গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রস্তাবিত কলরেট অনুমোদন পেলে মোবাইল কোম্পানিগুলোর আয় যথেষ্ট বাড়বে। জরিপে বেরিয়ে আসে, মোবাইল অপারেটরদের অননেট কলের সংখ্যা প্রতি মাসে ১৮৬৮ দশমিক ৯৪ কোটি মিনিট। এতে অর্থের পরিমাণ ৪৪৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা।

এই অননেট কলরেট প্রতি মিনিট ২৫ পয়সা থেকে ৩৫ পয়সা করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে প্রতি মাসে ১৮৬ কোটি টাকা। আর মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে গ্রামীণফোনের অফনেটে প্রতি মাসে ১৯ কোটি টাকা কমলেও অননেট থেকে আয় বাড়বে প্রতি মাসে ১১২ কোটি টাকা। রবির অফনেটে ২৬ কোটি টাকা আয় কমলেও অননেটে বাড়বে ৪৫ কোটি টাকা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে টেলিটক। তাদের অননেটে আয় যখন এক কোটি টাকা বাড়বে, অফনেটে আয় কমে যাবে পাঁচ কোটি টাকা।

কলরেট পরিবর্তনের নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ছোট অপারেটর থেকে বড় অপারেটরে কল করার খরচ কমবে। যেমন টেলিটক থেকে গ্রামীণফোনে কল করতে এখন ন্যূনতম খরচ ৬০ পয়সা। সেটি এখন কমে ৪৫ পয়সা হবে। এতে গ্রাহকসংখ্যায় পিছিয়ে থাকা অপারেটররা তুলনামূলক বেশি সুবিধা পাবে। যদিও অফ-নেট কল থেকে ছোট অপারেটরদের আয় কমে যাবে। কারণ, এ ধরনের কলের জন্য ২২ পয়সা খরচ বাদ দিয়ে বাকি ৩৮ পয়সা এখন তারা পায়। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে সে আয় কমে ২৩ পয়সা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল বিটিআরসির তৎকালীন পরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) লে. কর্নেল মো. রকিবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় কলরেট প্রতি মিনিট সর্বোচ্চ দুই টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এছাড়া অননেট বা নিজেদের নেটওয়ার্কের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রতি মিনিট ২৫ পয়সা ও অফনেট বা এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে প্রতি মিনিট সর্বনিম্ন ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

এক্ষেত্রে আন্ত সংযোগ চার্জ নির্ধারণ করে দেওয়া হয় প্রতি মিনিট ৪০ পয়সা। এর মধ্যে যে অপারেটরের কল তাদের ৪৫ শতাংশ, যে অপারেটরের কাছে কল যাবে তাদের ৪৫ শতাংশ এবং ইন্টারকানেকশন একচেঞ্জের ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এই ট্রারিফ প্ল্যান কার্যকর করতে বলা হয় ওই বছরের ১ মে থেকে।

জানা গেছে, বিটিআরসি ২০১০ সালের মার্চে ‘কস্ট মডেলিং, ইন্টারকানেকশন ফ্রেমওয়ার্ক অ্যান্ড ট্যারিফ পলিসি’ শীর্ষক প্রকল্প চালু করে। এর আওতায় নিয়মিত অপারেটরদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন তথ্য পর্যবেক্ষণ করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) প্রকল্পটিতে সহায়তা দিয়ে আসছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের কলরেট নতুন করে নির্ধারণের জন্য কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে আসছে বিটিআরসি।

২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট বিটিআরসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। বৈঠকে অপারেটরদের ওই বছরের ৩১ আগস্টের মধ্যে এ বিষয়ে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়। ওই সময় অফনেটের ন্যূনতম কলরেট ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪০ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় কমিশন। প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়নি। এরপর সম্প্রতি ৩৫ পয়সা রেটের প্রস্তাবটি পাঠানো হয়।

সূত্র:এম. মিজানুর রহমান সোহেল/priyo.com,ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

David Filo ( Birth Day ); ২০ এপ্রিল; ইতিহাসের এইদিনে; https://coxview.com/david-filo-birth-day/

২০ এপ্রিল; ইতিহাসের এইদিনে

ডেভিড রবার্ট ফিলো ইয়াহু’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ফেব্রুয়ারী 1994 সালে, তিনি জেরি ইয়াং এর সাথে সহ-তৈরি ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/