সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / কলাম / গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

hosen-shorowardi

গণতন্ত্রের মানসপুত্র উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী ৫ ডিসেম্বর সোমবার। ১৯৬৩ সালের এই দিনে লেবাননের বৈরুতে এক হোটেল কক্ষে নিঃসঙ্গ অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সোমবার সকাল ৮টায় হাইকোর্ট সংলগ্ন মাজারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত কর্মসূচি পালন করবে। রোববার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পূণ্য স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার নেতৃত্বের অসাধারণ বলিষ্ঠতা, দৃঢ়তা ও গুণাবলী জাতিকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে আওয়ামী লীগসহ তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তার পরিবারের সদস্যরা উর্দুভাষী হলেও তিনি নিজ উদ্যোগে বাংলা ভাষা শেখেন। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর মায়ের অনুরোধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া আইন বিষয়েও পড়াশোনা করেন এবং বিসিএল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২১ সালে কলকাতায় ফিরে এসে আইন পেশায় নিয়োজিত হন।

১৯২০ সালে তিনি বেগম নেয়াজ ফাতেমাকে বিয়ে করেন। বেগম নেয়াজ ফাতেমা ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আবদুর রহিমের মেয়ে। রাজনৈতিক জীবনের প্রথমে তিনি চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টিতে যোগ দেন। ১৯২৩ এর বেঙ্গল প্যাক্ট স্বাক্ষরে তার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯২৭ সালে সোহরাওয়ার্দী পদত্যাগ করেন।

১৯২৮ সালে সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সম্মেলন অনুষ্ঠানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুসলমানদের মধ্যে তার ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেও ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগের নঙ্গে তিনি জড়িত হননি। ১৯৪৩ সালে শ্যামা-হক মন্ত্রিসভার পদত্যাগের পরে গঠিত খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রিসভার একজন প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। তিনি শ্রমমন্ত্রী, পৌর সরবরাহমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের বিজয়ে তিনি মূল ভূমিকা পালন করেন।

১৯৪৬ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে সমর্থন দেন। পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন এবং সহযোগিতা করেন। স্বাধীন ভারতবর্ষের ব্যাপারে কেবিনেট মিশন প্ল্যানের বিরুদ্ধে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৬ সালের আগস্ট ১৬ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দেন। বাংলায় সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে এই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।

মুসলমানদের জন্য আলাদা বাসভূমি পাকিস্তানের দাবিতে এই দিন মুসলমানরা বিক্ষোভ করলে কলকাতায় ব্যাপক হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়। তৎকালীন পূর্ব বাংলার নোয়াখালীতে এইদিন বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ চলে। সোওহরাওয়ার্দী এ সময় তার নীরব ভূমিকার জন্য হিন্দুদের কাছে ব্যাপক সমালোচিত হন।

১৯৪৭ সালে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যান। তবে পদত্যাগের পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানে না গিয়ে কলকাতায় থেকে যান। তিনি ৪৭ এর দেশভাগের সময়েও পাকিস্তানে চলে যাননি। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন ভারত সরকার তার ওপর ক্রমবর্ধমান করের বোঝা চাপালে তিনি ভারত ত্যাগ করে পাকিস্তান চলে যেতে বাধ্য হন।

১৯৪৭ সালের আগস্টে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরে মুসলিম লীগের রক্ষণশীল নেতারা খাজা নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে উঠেন। খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবার পর বেশ কয়েকবার সোহরাওয়ার্দীকে ‘ভারতীয় এজেন্ট’ এবং ‘পাকিস্তানের শত্রু’ হিসেবে অভিহিত করেন। সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য পদ থেকে অপসারিত করা হয়। তার অনুসারীরা অনেকে ১৯৪৮ সালের শুরুর দিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং ১৯৪৯ সালের জুনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে `পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ` প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে `মুসলিম` শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠালগ্নে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থাতেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিব। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি ছিলেন সোহরাওয়ার্দী।

১৯৫৩ সালে তিনি এ কে ফজলুল হক এবং মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে একত্রে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। যুক্তফ্রন্ট ২১ দফার একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া তিনি ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ থেকে ১১ অক্টোবর ১৯৫৭ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৬ সালে চৌধুরী মোহাম্মদ আলির পদত্যাগের পর তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৮ সালে ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন।

১৯৫৯ সালের আগস্ট থেকে ইলেক্টিভ বডি ডিসকুয়ালিফিকেশন অর্ডার অনুসারে পাকিস্তানের রাজনীতিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তানের নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অপরাধ দেখিয়ে ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে তাকে করাচি সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ করা হয়। ১৯ আগস্ট ১৯৬২ সালে তিনি মুক্তি পান।

১৯৬২ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) গঠন করেন। অসুস্থাজনিত কারণে তিনি ১৯৬৩ সালে দেশের বাইরে যান এবং লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থানকালে ১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। তবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু এখনো রহস্যমণ্ডিত হয়ে আছে।

সূত্র:risingbd.com,ডেস্ক।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/04/Thermometer-Hit-Hot.jpg

বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, রাতে বাড়বে গরম

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকাসহ দেশের কোনো বিভাগেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/