সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / প্রাকৃতিক ও পরিবেশ / ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন এবং কিভাবে

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন এবং কিভাবে

অনলাইন ডেস্ক :
ঘূর্ণিঝড়গুলোর উৎপত্তি এবং অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন নাম থেকে। যেমন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে ঘূর্ণিঝড়গুলোর উৎপত্তি তাদের ‘সাইক্লোন’ বলা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় ‘টাইফুন’। আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকার ঘূর্ণিঝড়গুলোকে বলা হয় ‘হারিকেন’।

ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয় সতর্কবার্তা সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, মিডিয়া রিপোর্ট এবং পরবর্তী গবেষণায় সুবিধার জন্য। তাই নাম যেন ছোট হয় এবং চট করে বোঝা যায়, কোনও সংস্কৃতিকে যেন আঘাত না করে। ঘূর্ণিঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাই নামের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হতে হবে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে সেটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক ভাবে কোনরকম বিতর্ক বা ক্ষোভ তৈরি না করে।

সিত্রাং নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। সিত্রাং শব্দের ভিয়েতনামি অর্থ যেমন পাতা তেমনি এটি থাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের পদবি। ২০২০ সালেই ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী, এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম সিত্রাং। আগামী ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘মান্দোস’। যা দিয়েছে সংযুক্ত সৌদি আরব এবং তার পরের ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে ইয়েমেন। নামটি হলো ‘মোচা’।

এসব নামকরণ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটি। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (World Meteorological Organization) এই আঞ্চলিক কমিটি তৈরি করে সমুদ্রের ওপর ভিত্তি করে। যেমন, উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণ করবে WMO-এর ৮টি সদস্য রাষ্ট্র : বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, থাইল্যাণ্ড এবং ওমান। এদের একত্রে ‘স্কেপে’ বলা হয়। বিশ্ব আবহাওয়ার সংস্থার এই প্যানেলে আট দেশের সাথে বর্তমানে আরো পাঁচ দেশ যুক্ত হয়েছে। দেশগুলো হলো- ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, কাতার।

একটি সুনির্দিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলে একই সময়ে একাধিক ঘূর্ণিঝড় হতে পারে এবং তা এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় টিকে থাকতে পারে। সমুদ্র উপকূলে সবাইকে সতর্ক করা, বিভিন্ন সংকেত এবং জলযানগুলোর জন্য ঝড়ের খবর খুব সহজভাবে আদান-প্রদান করা, ঘূর্ণিঝড় বিষয়ক সচেতনতা ছড়াতে এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্যই মূলত ঝড়ের নামকরণ করা হয়ে থাকে।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ইতিহাস শত শত বছরের পুরনো। নামকরণের প্রাচীন ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৫২৬ সালে ৪ অক্টোবর পুয়ের্তো রিকোয় একটি হারিকেন আঘাত হানে। সে সময়ে গির্জার সন্তদের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। সেইন্ট ফ্রান্সিসে ক্যাথলিকদের ভোজ দিবসের উদযাপনের সময় এই হারিকেন আঘাত হানে বলে ঝড়ের নাম রাখা হয় ‘সান ফ্রান্সিসকো’। ২০০০ সালে ওমানে এই প্যানেলের ২৭তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে প্রথমবারের মতো ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর উপকূলবর্তী দেশগুলোতে ঝড়ের নামকরণের প্রচলন শুরু হয়। সে সময় আটটি দেশ (বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড) মিলে মোট ৬৪টি নাম প্রস্তাব করে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের দেয়া ‘অনিল’ নামে প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতে আঘাত হানে। নামকরণ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে আঘাতহানা প্রথম ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ‘সিডর’। সিডর শব্দের অর্থ চোখ। এটি ছিল ওমানের দেওয়া নাম। অবশেষে থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম ‘আম্ফান’-এর মধ্য দিয়ে ২০০৪ সালের সেই তালিকার নাম শেষ হয়ে যায়। ফলে প্রয়োজন হয় নতুন কমিটি ও নতুন নামের। ২০২০ সালের এপ্রিলে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধিবেশনে যুক্ত হয় আরো পাঁচটি দেশ। দেশগুলো হলো ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। ফলে মোট সদস্য দাঁড়াল ১৩টি।

২০২০ সালে ১৩টি দেশ থেকে ১৩টি নামসহ মোট ১৬৯টি নাম সম্বলিত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর আগে ৮টি দেশ ৬৪টি নাম দিয়েছিল। ভারত থেকে দেয়া নামসমূহের মধ্যে রয়েছে মেঘ, গতি, আকাশ; বাংলাদেশ থেকে দেয়া অগ্নি, হেলেন ও ফণি এর আগে ব্যবহৃত হয়েছে এবং পাকিস্তান দিয়েছিল লায়লা, নারগিস ও বুলবুল। ভবিষ্যতে যেসব নাম ব্যবহৃত হবে, তার মধ্যে আছে ঘূর্ণি, প্রবাহ, ঝড় মুরাসু (ভারত থেকে); বিপর্যয় (বাংলাদেশ), আসিফ (সৌদি আরব), দিকসাম (ইয়েমেন), তুফান (ইরান) এবং শক্তি (শ্রীলঙ্কা)।

ছাড়াও আরও কিছু ঘূর্ণিঝড়ের নাম হচ্ছে- নার্গিস, সিডর, রেশমী, বিজলি, ফাইলিন, হেলেন, লহর, মাদী, নানাউক, হুদহুদ, নিলুফার, প্রিয়া, কোমেন, চপলা, মেঘ, ভালি, কায়নতদ, নাদা, ভরদাহ, সামা, অক্ষি, সাগর, বাজু, দায়ে, লুবান, তিতলি, দাস, ফেথাই, ফণী, বায়ু, হিকা, কায়ের, মহা, বুলবুল, সোবা ও আমপান। এই নামগুলো পূর্ব থেকেই নির্ণীত থাকে। ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণ করে WMO-এর আটটি সদস্য রাষ্ট্র। দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, থাইল্যাণ্ড এবং ওমান। এই আট রাষ্ট্রকে একত্রে ‘স্কেপে’ বলা হয়।

বঙ্গোপসাগর আর আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোকে আমরা আলাদা আলাদা নামে চিনে থাকি। অনেকেরই মনে তখন প্রশ্ন জাগে, এই অদ্ভুত নামকরণের কারণ কি? কাদের হাত আছে এর পেছনে? বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্র অববাহিকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া দফতর (আরএসএমসি) এবং ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ওয়ার্নিং সিস্টেমস (টিসিডব্লিউএস)- এর উপর। বিশ্বজুড়ে ৬টি আরএসএমসি এবং ৫টি টিসিডব্লিউএস রয়েছে।

আটলান্টিক মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে প্রথম নাম রাখার প্রথা চালু হয়। যেসব ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৯ মাইল ছাড়িয়ে যেত, তাদের বিশেষ সম্মান জানাতে নামকরণ করা হতো। ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৭৪ মাইল ছাড়িয়ে গেলে হারিকেন, সাইক্লোন বা টাইফুন হিসেবে ভাগ করা হতো। বর্তমান যুগে এই তিনটির একটি হলে তবেই কোনও ঝড়কে নামকরণের সম্মান প্রদান করা হয়।

আগে ঝড়গুলোকে নানা নম্বর দিয়ে সনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন হয়ে যেতো।

মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগে পূর্ব পাকিস্তানে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল জোরালো ঘূর্ণিঝড়। তারও কোনও নাম ছিল না। ভোলায় আছড়ে পড়েছিল, সেই জায়গার নামেই চেনে দুনিয়া। ১৯৯১ সালের ঘূর্নিঝড় নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলির মধ্যে একটি। ১৯৯৯ সালে ওড়িশা তছনছ করে দেয়া ঘূর্ণিঝড়কে লোকে চেনে পারাদ্বীপ সাইক্লোন নামে। কারণ, ওড়িশার এই বন্দর শহরেই আছড়ে পড়েছিল শক্তিশালী তুফান।

বঙ্গোপসাগর আর আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে। ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওমান, মায়ানমার ও থাইল্যান্ড- এই আট দেশ মিলে ৬৪টি নামের তালিকা তৈরি করা হয়। আঞ্চলিক এই আটটি দেশ একেকবারে আটটি করে ঝড়ের নাম প্রস্তাব করেছে। প্রথম দফায় মোট ৬৪টি নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আট দেশ মিলে ৬৪টি নামের তালিকা বানালেও ঘূর্ণিঝড় হওয়ার পর নাম ব্যবহারের দায়িত্ব ভারতের উপর। এখনও সেই ট্র্যাডিশন চলছে। নাম পাওয়া প্রথম ঘূর্ণিঝড় ‘অনিল’। নাম রেখেছিল বাংলাদেশ। আছড়ে পড়েছিল গুজরাটে। তারপর এই তালিকা থেকেই পর্যায়ক্রমে এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে।

ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বলা হয় টাইফুন। প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের ক্ষেত্রে নাম রাখার প্রথা অনেক আগে এসেছে। ১৯৫৩ সালে শুরু হয় হারিকেনের নাম দেওয়া। প্রথম দিকে মেয়েদের নাম বেশি দেয়া হতো। পরে ছেলেদের নাম প্রাধান্য পায়।

দক্ষিণ চিন সাগরের সৃষ্ট টাইফুনের নাম ঠিক করে ওই অঞ্চলের দেশগুলি। আমেরিকা ও তার প্রতিবেশি দেশগুলো মিলে ঠিক আটলান্টিকের হারিকেনের নাম। টাইফুন বা হারিকেন সাইক্লোনের চেয়ে বেশি সৃষ্টি হয়। তাই একই নাম ঘুরে-ফিরে আসে। আবার ক্যাটরিনা বা হাইয়ানের মতো ধ্বংসাত্মক হলে সেই নাম আর কখনো রাখা হয় না।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

David Filo ( Birth Day ); ২০ এপ্রিল; ইতিহাসের এইদিনে; https://coxview.com/david-filo-birth-day/

২০ এপ্রিল; ইতিহাসের এইদিনে

ডেভিড রবার্ট ফিলো ইয়াহু’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ফেব্রুয়ারী 1994 সালে, তিনি জেরি ইয়াং এর সাথে সহ-তৈরি ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/