নিজস্ব প্রতিনিধি; চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় পৃথক দুটি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার ডুলাহাজারায় গৃহকর্তা ও সাহারবিলে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ দুটি মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শনিবার সকাল ৮টায় গৃহবধূর ও ভোররাত ৩টায় গৃহকর্তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ডুলাহাজারায় মারা যাওয়া গৃহকর্তা মিরাজ উদ্দিন (২২) তিনি ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডস্থ রংমহল এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। সাহারবিল থেকে উদ্ধার হওয়া গৃহবধূ কুলছুমা জন্নাত (২১) মাইজঘোনার শাওনুল কবিরের স্ত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কুলছুমাকে নানাভাবে নির্যাতন করতো। ঝগড়া বিবাদ ছিল তাদের নিত্যদিনের ঘটনা। কয়েক দফা পিটুনির শিকার হয় কুলছুমা। ২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ৮টার দিকে শ্বশুর বাড়ি থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
শ্বশুরালয়ের লোকজন ঝগড়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঘরের ভিমের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস থেকে আত্মহত্যা করেছে কুলছুমা।
কুলছুমার মা নুরুন্নাহার কান্নজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার মেয়েকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন মারধরে মেরে ফেলেছে। গত শুক্রবার রাতে আমার মেয়ে আমাকে কল করে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকজন মোবাইল কেড়ে নেয়ায় তার সাথে আর কথা হয়নি।
অপরদিকে, ডুলাহাজারার মিরাজ উদ্দিন এক কন্যা সন্তানের জনক। ঘরে স্ত্রীও রয়েছে। কিন্তু নিকটবর্তী লামার ফাঁসিয়াখালী এলাকার এক তরুণীর সাথে পরকীয়া আসক্ত হয় সে। গত ছয়দিন পূর্বে ওই তরুণীকে নিয়ে চট্টগ্রামে যায়। খবর পেয়ে স্ত্রী তৈয়বা বেগম দেবর মিজান উদ্দিনকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে স্বামী ও ওই তরুনীকে নিয়ে আসেন। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মালুমঘাট স্টেশনে গাড়ি থেকে নামার পর তাদের মধ্যে বাগবিতান্ডা হয়। এসময় ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার চৌকিদারকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে তরুনীকে ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মজুমদারের জিম্মায় দেন। ওইদিন রাত দেড়াটর দিকে মিরাজকে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখেন চৌকিদাররা। কিন্তু অল্পক্ষণ পর তার সাড়া শব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে ওকি দিয়ে তাকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে।
ইউপি চেয়ারম্যান মো.নুরুল আমিনকে খবর দেয় চৌকিদাররা। পরে চেয়ারম্যান থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
মেম্বার ও চৌকিদারদের দাবি, মিরাজকে ইউপি কার্যালয়ে রাখার সময় শীত নিবারনে একটি কম্বল দেয়া হয়েছিল। ওই কম্বল ছিড়ে ফ্যানের সাথে ফাঁস খেয়ে আত্মহত্যা করেছে মিরাজ।
ইউপি চেয়ারম্যান মো.নুরুল আমিন বলেন, আমি পুলিশ আসার পর কার্যালয়ে যাই। ওইসময় মিরাজের মরদেহ ফ্লোরে শোয়া অবস্থায় দেখি।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, দুটি লাশই আমরা উদ্ধার করেছি। জেনেছি ডুলাহাজারার মিরাজ পরকীয়ায় আসক্ত হলে তাকে চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসার পর স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয়। স্ত্রীর কঠুবাক্য সইতে না পেরে আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, সাহারবিলের কুলছুমা স্বামীর যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করতে পারে। তিন বছর পূর্বে বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই ছিল। দুটি মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
এদিকে, ডুলাহাজারা ইউপি কার্যালয়ে মিরাজের মৃত্যুর খবর পেয়ে সরজমিন পরিদর্শন করেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন, চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো.মতিউল ইসলাম।
You must be logged in to post a comment.