টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেও দু’পক্ষের রশি টানাটানিতে নির্মিত হচ্ছে না কক্সবাজারের চকরিয়ার বরইতলী-হারবাং সংযোগ সড়কের মরাখাল সেতু। পাকা কালভার্ট বানের তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর ৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে। সরকার বন্যায় ক্ষতি হওয়া সড়কসহ মরাখালে সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডার দিলেও ঠিকাদারের গাফেলতির কারণে ওই সেতু নির্মাণ শুরু হয়নি। ফলে দু’পারের হাজারো মানুষ যাতায়াত করছে জরাজীর্ণ কাঠের তৈরী সাঁকো দিয়ে। এতে প্রতিদিনই জীবন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। অধিক দুর্ভোগ বাড়ে সপ্তাহে তিনদিন হাঁটবারে।
সরজমিন ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মরাখালের উপর যাতায়াতের মাধ্যম পাঁকা কালভার্টটি ২০০৯ সালে বানের তোড়ে ভেঙ্গে ভেসে যায়। এরপর জরুরী যাতায়াতের জন্য খালের উপর বসানো হয় কাঠের সাঁকো। ওই সাঁকোটিও জরাজীর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। এতে ইউনিয়নের হিন্দুপাড়া, খয়রাতীপাড়া, রসুলাবাদ, পাহাড়তলী, ডেইঙ্গাকাটা ও মহছনিয়াকাটার লাখো মানুষ যাতায়াতে রয়েছে জীবন ঝুঁকিতে।
স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ আবদুল জলিল বলেন, সপ্তাহের তিনদিন যথাক্রমে শুক্রবার, রবিবার ও বুধবার একতা বাজারে হাঁট বসে। ওই সময় নিকটস্থ ৬টি ছাড়াও আরো বেশ ক’টি গ্রামের লোকজন এই সাঁকো দিয়ে হাঁটে যায় সওদা করতে। দিনে যেমন তেমন কেনাকাটার পর রাতে বাড়ী ফেরার পথে অসংখ্য লোক ওই সাঁকোতে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এই সাঁকোর পরিবর্তে একটি ছোট সেতু নির্মাণ হলে লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত দুর্ভোগ থেকে মুুক্তি পাবে।
উত্তর বরইতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী খোরশিদা আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলের বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিনই সাঁকোটি দিয়ে পারাপার করে স্কুলে যেতে হয়। এই সময় আমাদের ভয় করে। অনেক শিশু সাঁকোর তক্তায় আটকে অথবা ছিদ্রে পা ঢুকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
সাঁকো লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা মেহেরুনেচ্ছা বলেন, বাড়িতে অবস্থান করলেও আমাকেসহ পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদের প্রায়শই সাঁকোতে ছুটে যেতে হয়। দুর্ঘটনার শিকার হওয়া শিশু ছাত্র-ছাত্রীসহ পথচারীদের সেবা শশ্রুষা করতে হয় নিত্যদিন।
এলজিইডি’র চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো.আমিন উল্লাহ বলেন, বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের দু’পাশে এক কিলোমিটার করে মোট দুই কিলোমিটার সড়কে মাটি ভরাট করার কথা ছিল দুই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে। তবে বরইতলীতে সামান্য ও হারবাংয়ে অধিক সমস্যা থাকলেও মাটি ভরাট না হওয়ায় ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ করতে পারছে না। চেয়ারম্যানদের বলেছি তড়িৎ মাটির কাজ শেষ করতে।এরপর সড়কসহ সেতুর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মাটি ভরাটের কোন শর্ত ছিল না। হারবাং ইউনিয়ন অংশে একটি পুকুর এলাকায় বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশংকায় সঠিক সময়ে কাজ শুরু হচ্ছে না।
এঘটনা জেনে চকরিয়া-পেকুয়ার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম সরজমিন ঘুরে দেখেন। ওই সময় হারবাং অংশে মাটি ভরাটের জন্য সংসদ সদস্য নিজেই এমপি’র কোটা থেকে বরাদ্দ দেয়ার ঘোষনা দেন। এছাড়া কোন বাধাবিপত্তি হলে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নিয়ে দেখভাল করবেন বললেও কাজ শুরু করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বরইতলী-হারবাং সংযোগ সড়কসহ ভরাখালের কালভার্টটি ভেঙ্গে যায়। খালের সেতু ও সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি। এতে সরকারের অনুমতিক্রমে প্রায় ছয়মাস পূর্বে দরপত্র আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সড়ক মেরামতসহ সেতু নির্মাণে অহেতুক বিলম্ব করায় স্থানীয় শিক্ষার্থীসহ লাখো মানুষ বিড়ম্বনার খপ্পর থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।
You must be logged in to post a comment.