অনলাইন ডেস্ক :
নারীদের জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধি এবং জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। জরায়ুমুখ ক্যান্সার ১৫-৪৫ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
জরায়ুমুখে যে কোষ বা আবরণটি থাকে সেটি পুরোপুরি পরিপক্ক হতে মেয়েটিকে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত যেতে হয়। ওই অপরিপূর্ণ বয়সে বিভিন্ন জনের সাথে যৌন মিলনে মিলিত হলে এবং তার প্রথম বাচ্চাটি তাড়াতাড়ি নিলে এই অপরিপক্ক জরায়ুমুখটিতে বিভিন্ন সময়ে আঘাতে ইনফেকশন হয়।
অনিয়মিত রক্তস্রাব, ঋতু বন্ধের এক বছর পরও রক্তস্রাব, যৌন সঙ্গমের পর রক্তস্রাব, যোনিপথে অধিক পরিমাণ বাদামি বা রক্তমাখা স্রাবের আধিক্য ও খুবই দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব। পানির মতো হয়ে এই স্রাব নি:সরিত হয়। মনে রাখতে হবে, এসব লক্ষণের কোনোটাই ক্যানসার নিশ্চিতকরণের চিহ্ন নয়, তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন দেখে চিকিৎসকরা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, রোগটা কোন ধরনের এবং কোন অবস্থায় রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে- যখন কোনো মেয়ে দেখে তার সহবাসের পর রক্ত যাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে মূলত জরায়ুমুখে ক্যানসারের লক্ষণ। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে পিল (জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি) খাওয়ার কারণেও জরায়ুমুখে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ। বয়স্কদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেখা যায় আবার হঠাৎ করে রক্ত যাচ্ছে। তার মানে এই নয় যে সেটা ক্যানসারের লক্ষণ।
অনেক সময় প্যাড বা কাপড় পড়তে হয় এই সাদা স্রাব রোধ করার জন্য। আর এই লক্ষণগুলোকে অনেকেই পিরিয়ডের মেয়েলী সমস্যা বলে ভুল করে থাকেন। এমন ভুল যেন না হয়, সেজন্য লক্ষণগুলো মনে রাখা জরুরি।
এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে- এটা জরায়ুমুখে ক্যানসারের কারণে এমন হলো নাকি অন্য কোন ইনফেকশনের কারণে এ সমস্যা হয়েছে।
জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতি হলো: সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টারগেটেড থেরাপি। ক্যানসারের আগের স্তরের শুরুতেই যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা যায়। ক্যানসারের আগের স্তরে জরায়ুমুখের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের চিকিৎসা করা হয় ক্রাইওথেরাপির মাধ্যমে। এ সময় প্রচণ্ড ঠান্ডা প্রয়োগ করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইলেকট্রোকোওয়াগুলেশন বা বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমেও প্রচণ্ড উত্তাপ সৃষ্টি করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করা যায়। চিকিৎসার এ প্রক্রিয়ায় রোগীর সন্তান ধারণক্ষমতা অটুট থাকে। এছাড়া ক্যানসার যখন উৎপত্তিস্থলে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন সার্জারি চিকিৎসা বেছে নেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এ চিকিৎসায় রোগীর সম্পূর্ণ জরায়ু অপসারণ করা হয়। এ পদ্ধতিকে হিস্টারেক্টমি বলা হয়। কখনো কখনো যোনিপথের উপরের অংশ এবং কাছের কোষকলা এবং লসিকাগ্রন্থি অপসারণ করা হয়, যাতে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষ দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে না পড়ে। তাছাড়া রেডিয়েশন থেরাপি বা বিকিরণের মাধ্যমে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের ধ্বংস বা ক্ষতিসাধন করা। অনেক সময় এ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় টিউমারের প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে বা ব্যথা কমানোর জন্য। যখন ক্যানসার আক্রান্ত সব কোষ সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা যায় না, তখন সার্জারির পরে আবার রেডিয়েশন দেওয়া হয়। সার্জারি বা রেডিয়েশন থেরাপির পর রোগীকে নির্দিষ্ট সময় পরপর পরীক্ষা করাতে হয়। যৌনমিলন থেকে কিছুদিন অবশ্যই বিরত থাকতে হয়। সব নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে মেনে চললে চিকিৎসার দু-তিন মাসের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
You must be logged in to post a comment.