মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম :
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন (ক্রিসমাস ডে) ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিনদিনের ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। কানায় কানায় পূর্ণ সাগর তীরে লাখো পর্যটক উচ্ছ্বাসে মেতে বেড়াচ্ছেন। সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি হিমছড়ি, দরিয়া নগর, পাটুয়ার টেক, ইনানী সৈকত, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, রামু বৌদ্ধ বিহারসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন পর্যটকদের ভিড়।
সাপ্তাহিক ছুটিরদিন শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে পর্যটকের ঢল নামে সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। কলাতলী পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট ও শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে প্রতিটি পয়েন্টে দলে দলে নামতে শুরু করেন ভ্রমণ পিপাসুরা। ধারণা করা হচ্ছে টানা এ ছুটিতে কক্সবাজারে ৫ লাখেরও অধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। লোকারণ্য সমুদ্রসৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সকাল থেকে পর্যটকদের সামাল দিতে গিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিচ কর্মী ও লাইফ গার্ডের কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। শহরের রাস্তাতেও ভিড় দেখা যায় পর্যটকের। এতে দেখা দেয় পরিবহন সংকট। কক্ষ ভাড়া না পেয়ে অনেক পর্যটক সমুদ্রসৈকত ও সড়কে পায়চারি করে সময় পার করছেন কেউ কেউ।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি পয়েন্টে সাদা পোশাকে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেক্স বসানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কর্মকর্তারাও কাজ করছে। সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষার্থে সর্তক অবস্থায় রয়েছে লাইফ গার্ড কর্মীরা।
পুলিশ প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে- পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সকলের প্রচেষ্টায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ শেষে যেন তারা বাড়ি ফিরতে পারেন। পর্যটকদের জন্য সব পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সাদা পোষাকেও পুলিশ কাজ করছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি পর্যটকদের ভিড় উখিয়ার ইনানী, হিমছড়ি, পাটুয়ার টেক টেকনাফসহ প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেও। সব জায়গায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট লাবণী পয়েন্ট সুগন্ধা পয়েন্ট ডলফিন মোড় হিমছড়ি, ইনানীও টেকনাফ সৈকতে লাখো পর্যটক যাতায়াত করছেন। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক আগে থেকে আগাম বুকিং হয়ে আছে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি হিমছড়ি, দরিয়া নগর, পাটুয়ার টেক, ইনানী সৈকত, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, রামু বৌদ্ধ বিহারসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন পর্যটকদের ভিড়। তাদের আগমনে দারুণ খুশি পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এদিকে লাখো পর্যটকের আগমনে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে। হোটেল, মোটেল ও কটেজও বুকিং হয়ে গেছে অনেক আগেই। হোটেল-মোটেলে যে পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা, তারচেয়ে লোকসমাগম অনেক বেশী। অনেক পর্যটক রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন। এসব হোটেল-রিসোর্টে প্রায় দু’লাখ মানুষের রাত যাপনের সুযোগ থাকলেও বাকি পর্যটকরা কোথায় রাত্রি যাপন করবেন তা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
নওগা থেকে এসেছেন জান্নাতুল মাওয়া। তিনি বলেন- ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে অন্যকোন স্থানের তুলনাই হয় না। সমুদ্রের নোনা জলে গা ভাসিয়ে অন্য রকম এক প্রশান্তি। এখানে মনের সকল দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকা যায়।’ অনেক দিনের ইচ্ছে, কক্সবাজার বেড়াতে আসব। অবশেষে ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে।’
রংপুর থেকে মুফিদুল আলম বলেন- কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে রীতিমতো তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সৈকতে নেমে অসাধারণ এক অনুভূতি, দীর্ঘ যাত্রাপথের সকল ক্লান্তি ভুলে গেছি।
এদিকে প্রচুর পর্যটক আগমনে ব্যস্ততা বেড়েছে সৈকতের ঘোড়াওয়ালা ও ফটোগ্রাফারদের। অনেকেই ঘোড়ার পিঠে উঠে ছবি তুলেই আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন। কেউ দ্রুতগতির জেডস্কি ও স্পিডবোট নিয়ে নীলজলের বিশাল সমুদ্রে পাড়ি জমাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের মতে, টানা ছুটিতে পর্যটক বেশি আসায় আয়ও বেড়েছে তাদের।
You must be logged in to post a comment.