সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / শরণার্থী সমাচার / টেকনাফ সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার ডুবি : নারী-শিশুসহ ১১টি লাশ উদ্ধার : নিখোঁজ-৩৪

টেকনাফ সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার ডুবি : নারী-শিশুসহ ১১টি লাশ উদ্ধার : নিখোঁজ-৩৪

 

গিয়াস উদ্দিন ভুলু; টেকনাফ :

মিয়ানমার রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের লাশের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কারণ অসহায় রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী ও সাগর পথে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবশে করে থাকে। গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনার সূত্র ধরে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ঢল বাড়তে থাকে।

মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে প্রায় ৭ লক্ষের অধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে। এদিকে রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করে মানবিক বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে এই সীমান্ত এলাকার আদম বাণিজ্যকারী দালাল চক্র। এই মানবপাচারকারী দালালদের একটাই উর্দ্দেশ্য তারা অসহায় রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া। তাই এই দালাল চক্রের সদস্যরা প্রতিনিয়ত রাতের অন্ধকারে স্থানীয় প্রসাশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে তাদের অপকর্ম ও আদম বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, শাহপরদ্বীপ উপকূলীয় সীমান্তে বেশ কয়েকজন অসাধু অর্থলোভী আদম বাণিজ্যকারী দালাল চক্র রয়েছে। তারা রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারগুলো গভীর সাগরে নিয়ে আসার পর তাদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়। তারপর সুযোগ বুঝে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারটি ডুবিয়ে দেয়। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে তাদের অপকর্মের কথা যেন কেউ জানতে না পারে। আর দালালদের অপকর্মের বলি হচ্ছে অসহায় রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা। দেড় মাসের মধ্য এই পর্যন্ত লাশ উদ্ধারের সংখ্যা প্রায় দুই শত। এর মধ্যে বেশীর ভাগ হচ্ছে নারী ও শিশু। এমতাবস্থায় ১৬ অক্টোবর সোমবার ভোর রাতে টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম পাড়া সীমান্তে সাগরে আরো একটি রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। দালাল চক্রের সেই দুর্ঘটনায় নারী পুরুষসহ ৭০ জন রোহিঙ্গা সাগরে ডুবে যায়। এরপর তাদের শোর চিৎকারে স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যরা এগিয়ে এসে ২১ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করে। তার পাশাপাশি সাগর উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয় ১২টি মরদেহ। এর মধ্যেও ৬ জন শিশু ৬ জন নারী। বেঁচে আসা রোহিঙ্গারা জানায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৩৪ জন রোহিঙ্গা। তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য আপ্রান সহযোগীতা করে যাচ্ছে স্থানীয় জনতা, কোষ্টর্গাড, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।

স্থানীয়দের সূত্রে আরো জানা যায়, সোমবার (১৬ অক্টোবর) ভোরের দিকে রোহিঙ্গা বোঝাই একটি ট্রলার শাহপরীর দ্বীপের অদূরে পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে পৌছলে অতিরিক্ত রোহিঙ্গা বহনের কারণে সাগরের ঢেউতে আছড়ে পড়ে নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় ৬ শিশু, ৬ নারীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয় ২১ রোহিঙ্গাকে। নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করেছে প্রাণে বেঁচে যাওয়া স্বজনরা।

ডুবে যাওয়া ট্রলারটি মিয়ানমারের বুচিদং গোদাম পাড়ার ৭০ জন নারী, শিশু ও পুরুষ ছিল। এই ট্রলারের মালিক ও আদম বাণিজ্যকারী দালাল শাহপরীর দ্বীপ ডাঙ্গর পাড়া আজগর মাঝি। তার নেতৃত্বেই একটি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। এ সিন্ডিকেটটি শত বাঁধা উপেক্ষা করে অর্থের লোভে রাতের আধারে ওপার থেকে রোহিঙ্গা নিয়ে আসছেন। রোহিঙ্গা পাচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনী ব্যবস্থার দাবী করছেন এলাকাবাসী।

প্রাঁণে বেচে যাওয়া মায়ানমার বুচিদং গোদাম পাড়ার হাবিবুর রহমানের ছেলে মোঃ রফিক জানান, সেই দেশটির সেনা ও মগদের নির্মম অত্যাচার এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ায় তারা গত ১৫ দিন আগে মিয়ানমারের নাইক্ষংদ্বীপে এসে অবস্থান নেয়। সাগরে নৌকা বা ট্রলার সংকট হওয়ায় এতদিন এপারে আসা হয়নি। আমরা এতদিন যাবত অর্ধাহারে অনাহারে কোন মতে দিন কাটিয়েছি। অনেক কষ্টের পর গত রবিবার রাতে একটি ট্রলার খুঁজে পায়। সেই ট্রলারে আমরা এক পাড়ার ৭০ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে চলে আসার পথে ভোর রাতের দিকে সাগরের ঢেউ আঘাতে ট্রলাটি ডুবে যায়। পরিবারের ৫ জনের মধ্যে ৩ জন জীবিত উদ্ধার হলেও দুই শিশু নিখোঁজ ছিল। তৎমধ্যে এক জন শিশুর লাশ পাওয়া গেছে বলে জানায়।

এ সময় কথা হয়, মায়ানমার বুচিদং গোদাম পাড়ার আবুল হোসনের ছেলে মোঃ সলিম, হাবিবুর রহমানের ছেলে হোসন আহাম্মদ ও হোসন আহাম্মদের স্ত্রী নূর নাহার। তারা জানান, সেদেশের বাহিনী ও মর্গের অত্যাচার থেকে প্রাণ রক্ষায় চলে আসতে গিয়ে কয়েকদিন পায়ে হেটে পাহাড় বেয়ে ওপারের নাইক্ষংদ্বীপে এসে অবস্থান নিয়। এদেশে কড়াকড়ির কারনে কোন নৌকা বা ট্রলার না পেয়ে পনের দিন মত সীমান্তে টাবুতে থাকতে হয়েছে। এর পর কোন মতে আসতে গিয়ে নেমে আসে মহা বিপদ।

তারা জানান, এ নৌকায় ৬৫ জন রোহিঙ্গা ছিল। আমরা ২১ জন নারী শিশু ও পুরুষ জীবিত উদ্ধার হয়েছি। এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনো ৩৪ জন রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ নিখোঁজ রয়েছে বলে জানায়।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইন উদ্দিন খান জানান, সোমবার সকালে বঙ্গোপসাগর উপকুলে নৌকা ডুবিতে ১২ রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে ৬ জন শিশু, ৬ জন নারী রয়েছে। উদ্ধার মৃতদেহ গুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা শেষে স্থানীয় ভাবে দাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

https://coxview.com/wp-content/uploads/2023/04/Thermometer-Hit-Hot.jpg

বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, রাতে বাড়বে গরম

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকাসহ দেশের কোনো বিভাগেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/