সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / সাম্প্রতিক... / ঢলের ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত চকরিয়ায় ৩ শতাধিক কোটি টাকার ক্ষতি

ঢলের ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত চকরিয়ায় ৩ শতাধিক কোটি টাকার ক্ষতি

মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :

পাঁচদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ক্ষত-বিক্ষত এখন কক্সবাজারের চকরিয়া। টানা পাঁচদিনের প্লাবনে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার এমন কোন পাড়া-গাঁ নেই যেখানে ক্ষত নেই। পানি নামার সাথে সাথেই সবখানে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। বন্যা পরবর্তী প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরের রিপোর্ট মতে ৩’শতাধিক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বন্যায়। ঘর বিধ্বস্ত, সড়ক-বাঁধ ভেঙ্গে, মাছ ভেসে গিয়ে, ফসল নষ্ট হয়ে, শিক্ষা প্রতিষ্টানসহ বিভিন্ন খাতে এ ক্ষতি হয়।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, এবারের বন্যায় বিভিন্ন খাতে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে সহায়-সম্পদ সব মিলে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২১৭ কোটি ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৭’শ টাকা।

বিভিন্ন দপ্তরের হিসাব অনুয়ায়ী, ১৮টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ১৪৩টি বসত ঘর সম্পূর্ণ ও ২৫ হাজার ৭১৪টি ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ৫১০ হেক্টর জমির শষ্য খেত সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়ে চাষিরা আর্থিক লোকসান দিয়েছে ১ কোটি ২লাখ টাকার। ৪০ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। লবণাক্ত ও মিটা পানির ২হাজার ৬৯৩ দশমিক ৬৭ হেক্টর চিংড়ি ঘের, অন্যান্য মাছের খামার, পুকুর থেকে অন্তত ৯৬ কোটি ৪৮ লাথ ৬৩ হাজার ৫’শ টাকার মাছ ভেসে গেছে। তবে, মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হবে দাবি করে ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, শুধুমাত্র আমার ১০ একর বিশিষ্ট পুকুর থেকেই ৫০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মাছ ভেসে গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ২৮ লক্ষ টাকার। ২৮টি মসজিদ ও ১২টি মন্দির আংশিক নষ্ট হয়ে ২০লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে ১১৫ কিলোমিটার পাকা সড়কের মধ্যে ২৪ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও ২৩ দশমিক ৫’শ কিলোমিটার আংশিক ভেঙ্গে ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ব্রীক ও ফ্লাড সোলিং সড়ক সম্পূর্ণ ১৫ দশমিক ৭১ কিলোমিটার ও আংশিক ১৮ কিলোমিটার ভেঙ্গে আর্থিক ক্ষতি হয় ১৭ কোটি ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার।

কাঁচা সড়ক ৩০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও ৬৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার আংশিক ভেঙ্গে আর্থিক ক্ষতি হয় ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার। ব্রীজ- কালভার্টের ক্ষতির নিরুপণ এখনো করা সম্ভব হয়নি। নদী তীরে নির্মাণ করা বাঁধের মধ্যে .৪৫ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও ২ কিলোমিটার আংশিক ভেঙ্গে আর্থিক ক্ষতি হয় ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার।

শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোর মধ্যে ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি কলেজ ও ১০টি মাদ্রাসায় আংশিক নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতি হয় ২৫ লাখ টাকার।

পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ১’শ ৮২টি গভীর ও ১’শ ৪০টি অগভীর নলকূপ আংশিক নষ্ট হয়ে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারি টয়লেট নষ্ট ৪২৫৫টি সম্পূর্ণ ও ১৭০২১টি আংশিক নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতি হয় ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭ হাজার টাকা। জলাধার পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতি হয় ৫৭ কোটি ৩ লাখ টাকার। কমিউনিটি ক্লিনিকে ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী ও সচিব মাসউদ-মোরশেদ বলেন, পৌরসভার প্রতিটি সড়কেই কমবেশি ভেঙ্গেছে। ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্টানের। মাতামুহুরী নদীতে ভেসে গেছে অর্ধ শতাধিক কাঁচা-পাকা ঘর, পঁচে গেছে শস্য বীজতলা, শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশ ঢলের তোড়ে ভেসে যাওয়া ছাড়াও পৌরসভার মধ্যে সওজের সড়কে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুধুমাত্র পৌরসভায় সব মিলিয়ে শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে পৌরসভার ক্ষতি বিবরণ পাঠিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ঈদগাঁওর সংবাদকর্মী আবু হেনা সাগরের মাতা অসুস্থ : দোয়া কামনা 

  বার্তা পরিবেশক : কক্সবাজারে ঈদগাঁও উপজেলার সংবাদকর্মী এম আবুহেনা সাগরের মাতা অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামের ইবনে ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/