সাম্প্রতিক....
Home / প্রচ্ছদ / কলাম / দ্রুত ও স্থায়ী অবসান হোক রোহিঙ্গা সমস্যার

দ্রুত ও স্থায়ী অবসান হোক রোহিঙ্গা সমস্যার


-: তাওহীদুল ইসলাম নূরী :-

২৫ আগষ্ট ২০১৯, রোহিঙ্গা সমস্যার দুই বছর পূর্তি হল। একে তো আমাদের ছোট্ট দেশ, তার উপর ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গার বসতি যুক্ত হল। ১৯৮০ সালে আসা রোহিঙ্গারা আদৌ ফিরেনি। লোক দেখানো কিছুকে ফেরৎ নেয়া হলেও ‘পাঁচ লক্ষ মত মিশে গেছে বাংলাদেশীদের সাথে’ এমন ধারণা রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। যতই প্রত্যাবাসন চুক্তি হোক না কেন, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই, ২০১৭ সালে যারা পালিয়ে এসেছে তারা কবে ফিরবে সেটা আজও অজানা।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের সীমাহীন অত্যাচারে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে ঠিকন। কিন্তু, এখানে ওরা শুধু নিজেরা নিজেরা নয় কথায় কথায় ঠুনকো ব্যাপারে আশ্রয়দাতা হওয়ার পরেও সংঘর্ষে জড়াচ্ছে বাংলাদেশীদের সাথে। ২২ আগষ্ট রাতে সরকার দলীয় একটি অঙ্গ সংগঠনের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন নেতাকে পাহাড়ে নিয়ে হত্যার ঘটনা থেকে রোহিঙ্গারা যে কতটা বেপরোয়া হয়ে গেছে তা সহজে অনুমেয়। দিনের পর দিন ক্রমবর্ধমান হারে রক্তারক্তি, খুন, ডাকাতি, চোরাচালান, ধর্ষণ, মাদক পাচারসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে তারা। কক্সবাজারের প্রশাসনের মতে বাংলাদেশীদের খুন ছাড়াও তাদের নিজেদের হাতে নিজেদের মধ্যেও খুনের ঘটনা ঘটেছে গত দুই বছরের বিভিন্ন সময়ে। যেখানে খুনের পরিমাণও রেকর্ড সংখ্যক এবং বিভিন্ন অপকর্মের কারণে প্রায় হাজার খানেক মামলা হয়েছে এদের বিরুদ্ধে।

নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সংস্থা, সংবাদ মাধ্যম এবং ব্যক্তির তথ্য মতে শুধুমাত্র আইন শৃঙ্খলা নয় প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ কক্সবাজারের সমকালীন পরিবেশের সর্বত্র বিরুপ প্রভাব পড়ছে এই রোহিঙ্গাদের কারণে। কক্সবাজারের স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো তো আছেই, জাতীয় সংবাদপত্রগুলোতে চোখ বুলাতেও প্রায় প্রতিদিনই আমরা রোহিঙ্গাদের এমম সংবাদ দেখতে পাই। শুধুমাত্র গত দুই বছরে বন ও পাহাড় কেটে রোহিঙ্গারা নিজেদের বসতি গড়ে তোলায় কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সৃজিত আর প্রাকৃতিক বন এই দুই রকম বনের ধ্বংস হয়েছে ৬২০০ একর বন।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় এই রোহিঙ্গাদের কারণে সৃজিত বন, প্রাকৃতিক বন এবং জীববৈচিত্র্যের সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। যা অর্থের মূল্যে হিসাব করলে প্রায় ১৮৬৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়। পাহাড় কেটে ওদের জন্য কিছু দিন পর পর কখনো ক্যাম্প ইনচার্জ, কখনো পুলিশ ক্যাম্প কিংবা বিভিন্ন সংস্থার অফিসের জন্য অবকাঠামো তৈরী হচ্ছে। যা বন ও পরিবেশের জন্য ব্যাপক হুমকিস্বরুপ। অন্যদিকে, অতিদ্রুত যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির অর্থায়নে তিনতলা বিশিষ্ট ২০ টি সাইক্লোন শেল্টার, ৬০টি গভীর নলকূপ, পানি সংরক্ষণাগার ও সঞ্চালন লাইন, ৬টি সাব স্টেশনসহ ৫০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, পর্যাপ্ত রাস্তা ঘাট, সেতু ও কালভার্ট ও অনান্য অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার বিশেষ করে উখিয়া

-টেকনাফের বনভূমি ও বনজ সম্পদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে ।

আমরা তাই এই রোহিঙ্গা সমস্যার অতিদ্রুত এবং স্থায়ী সমাধান চাই। লোক দেখানোর জন্য নয়, মিয়ানমার সরকারের উপর বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সকল দেশ ও জাতিসংঘসহ আলোচিত সংগঠনগুলো থেকে জোর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নানান প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আসা সকল রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা হোক।

জয় হোক মানবতার।

লেখকঃ
তাওহীদুল ইসলাম নূরী,
আইন বিভাগ (অধ্যয়নরত), আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
শাহারবিল সদর, চকরিয়া, কক্সবাজার।

Share

Leave a Reply

Advertisement

x

Check Also

ডিজিটাল সাক্ষ্যের আইনগত ভিত্তি এবং প্রচলিত আইনের বিধানসমূহ

-: শরিফুল ইসলাম সেলিম :- বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানের দ্রুত উৎকর্ষসাধনের ফলে মানুষের জীবনের বড় অংশ ...

https://coxview.com/coxview-com-footar-14-12-2023/