বান্দরবানে মঙ্গলবার থেকে “ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ” বা প্রবারণা পুর্নিমা ধর্মীয় উৎসবে মেতেছে পাহাড়ে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা। অনেকেএই উৎসবকে “ওয়াহ” বলে থাকেন।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষব্রত (উপবাস) থাকার পর ধর্মীয় গুরুদের সম্মানে এ বিশেষ উৎসবের আয়োজন। মার্মাদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বড়ুয়া, চাকমা, তংচংঙ্গারাও এ উৎসবে যোগ দেয়। “ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ” বা প্রবারণা পুর্নিমাতে এলাকায় ভিন্ন আনন্দের সৃষ্টি হয় এখানে। উৎসবকে কেন্দ্র করে বান্দরবানের সকল উপজেলায় আয়োজন করা হয়েছে নানান অনুষ্ঠান।
বুধবার বান্দরবানে প্রবারণা পূর্ণিমায় প্রথম দিনের আয়োজনে ছোয়াইং দান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
এসময় আরো ছিলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, বান্দরবান জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, বান্দরবান সিভিল সার্জন অনুপ দেওয়ান প্রমূখ।
আজ ২৮ অক্টোবর বুধবার “ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ” উৎসবের প্রধান আকর্ষণ নানা রঙ্গের ফানুস বাতির ঝলকানিতে রঙ্গিন হয়ে উঠে রাতের আকাশ।
তাছাড়া রয়েছে মার্মা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশেষ প্রার্থণা, তরুণ তরুণীদের বর্ণাঢ্য রথ যাত্রাসহ বিভিন্ন আর্কষণীয় অনুষ্ঠান। উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে চলছে আনন্দের বন্যা ও সাজ সাজ রব। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি আজকের নানান আয়োজনে উপস্থিত থেকে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সকলের সাথে।
এই ফানুস চীনা কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়, পরে সলতে দিয়ে তৈল সহকারে তা উড়ানো হয়। এতে বিভিন্ন রং, বর্ণ এবং সাইজের ফানুস তৈরি হয়। ফানুস উড়ানো দেখাও পূণ্যের কাজ।
এ সময় সূত্রপাত ও কীর্তন হয়, যুবকেরা নৃত্য করেন। ফানুস উড়ানোর দিকটা ধর্মীয়।
গৌতম বুদ্ধের চুলামণি চৈত্যকে বন্দনার জন্যই ফানুস উড়ানো হয়। ফানুস বাতি উড়ানোর প্রতিযোগিতা সকলকে আকৃষ্ট করে। বিশাল আকৃতির ফানুস বাতি আকাশে উড়ানোর দৃশ্য দেখার জন্য বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের লোক এমনকি বহু বিদেশি পর্যটকও ভীড় জমায়।
আজ সন্ধ্যায় রথে জ্বালানো হবে হাজার হাজার মোমবাতি। এ জন্য স্থানীয় ক্যাং ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্নিল সাজে। শিশু কিশোর ও তরুণ তরুনীরা নতুন পোষাক পরিধান করে এই দিনগুলো পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবে বন্ধুদের সঙ্গে। উপজেলার বিভিন্ন উপজেলার কেয়াংগুলোতে পৃথকভাবে এ উৎসব পালন করা হবে।
সকাল থেকে বিহার ভান্তের মাঝে ছোয়াইং দানসহ ধর্ম দেশনাসহ দায়ক দায়িকা, তরুণ তরুণীরা হাজার হাজার বাতি নদীতে ভাসিয়ে প্রদীপ পুজা করবেন। বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত উপাসক উপাসিকাকে ঢোল বাজনা বাজিয়ে গোসলের আয়োজন করবেন। পরে ভান্তেগণ দায়ক দায়িকার উদ্দেশ্যে ধর্ম দেশনা ও পঞ্চশীল দিবেন। ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ মার্মা শব্দ, এর অর্থ উপবাসের সমাপ্তি।
You must be logged in to post a comment.