অনলাইন ডেস্ক :
পৃথিবীর নানান প্রান্তে ছড়িয়ে আছে অসাধারণ স্থাপত্য ও নিপুণ শিল্পকর্ম। পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্য যা মানুষকে মুগ্ধ করেছে এর নির্মাণশৈলী, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং এর ঐতিহ্যের দ্বারা। কোনোটা প্রাকৃতিক এবং কোনোটা কৃত্রিম ভাবে তৈরি। এটি সাধারণত পৃথিবীর মধ্যেই কোনো আশ্চর্য, সুন্দর বা অসাধারণ জিনিসের তালিকা। তবে তার আগে আমরা জেনে নিব সপ্তাশ্চর্যের যুগ কয়টি। সপ্তাশ্চর্য মুলত তিনটি যুগে বিভক্ত ছিল। সর্বশেষ ২০০৭ সালে এই আশ্চর্য জিনিসের নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয় পৃথিবীর ৭টি আশ্চর্য। যা সম্পর্কে অনেকেই অবগত রয়েছে আবার অনেকেই এটি সম্পর্কে জানেন না। এর মধ্যে ২০০টি স্থাপনার তালিকা থেকে পৃথিবীর নতুন সাতটি আশ্চর্য বেছে নেয় সুইস সংস্থা নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন। পৃথিবীর সাত আশ্চর্য হিসেবে বিখ্যাত এসব স্থাপনা নির্মাণের পেছনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। প্রায় প্রত্যেকটি আশ্চর্য স্থাপনার পিছনে রয়েছে একেকটি আকর্ষণীয় ইতিহাস। এসব স্থাপনা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আগ্রহের কমতি নেই। আজ তৃতীয় যুগ – বর্তমান যুগ সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রথম যুগ ছিল – প্রাচীণ যুগ
১। গিজার মহা পিরামিড
২। ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান
৩। আর্টেমিসের মন্দির
৪। অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি
৫। রোডস এর মূর্তি
৬। আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর
৭। হ্যালিকারণেসাসের সমাধি মন্দির
দ্বিতীয় যুগ – মধ্যযুগ
১। আগ্রার তাজমহল
২। আলেকজান্দ্রিয়ার ভূগর্ভস্থ সমাধি
৩। চীনের প্রাচীর
৪। ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জ
৫। রোমের বৃত্তাকার মঞ্চ
৬। নানকিনের চিনামাটির মিনার
৭। সেন্ট সোফিয়ার মসজিদ
তৃতীয় যুগ – বর্তমান যুগ
১। চীনের প্রাচীর
২। পেত্রা
৩। ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার
৪। মাচু পিচু
৫। চিচেন ইৎজা
৬। কলোসিয়াম
৭। তাজ মহল
পেত্রা (Petra)
পেত্রা’র সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
অবস্থিত — Ma’an Governorate
দেশ — জর্ডান
তৈরী হয়েছিল — আনুমানিক ৫ম শতাব্দী খ্রিস্ট পূর্বে.
আয়তন — ২৬৪বর্গ কিলোমিটার
উচ্চতা — ৮১০মিটার বা ২৬৫৭ ফুট
কে বা কারা তৈরী করেছিলেন — সম্রাট নবাটিয়ান
তৈরীর কারণ — বাণিজ্য নগরীর জন্য
জর্ডানের ‘রোজ সিটি’ হিসেবে পরিচিত পেত্রা। চারপাশের গোলাপি মাটির খাড়া বাঁধের জন্যই এই ডাকনাম। এটি বর্তমানে জর্দানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি গ্রাম ‘ওয়াদি মুসা’র ঠিক পূর্বে ‘হুর’ পাহাড়ের পদতলে অবস্থিত। একসময় এই নগরীটি অত্যন্ত সুন্দর ও সুরক্ষিত একটি দুর্গ ছিল। পেত্রা নামটি একটি গ্রিক শব্দ ‘petros’ থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। যার অর্থ পাথর। পাথরের তৈরী বলে এমন নামকরণ করা হয়েছে। পেত্রা প্রায় ২৬৪ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে বিস্তৃত, উচ্চতা প্রায় ৮১০ মিটার। ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বব্দ পর্যন্ত এটি গাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী ছিলো। ৩৬৩ সালে ভূমিকম্পে এর দালানগুলো ধ্বংস হয়। মধ্যযুগে পেত্রার ধ্বংসাবশেষ ব্যাপক আলোচিত হয়।
পেত্রার মধ্যে একটি অর্ধগোলাকার নাট্যশালা রয়েছে, যেখানে ছিলো দেড় হাজার দর্শক একসাথে বসতে পারতো। এছাড়া এখানে ছিলো দেড় হাজার দর্শক ধারন ক্ষমতার একটি স্টেডিয়াম। দশ হাজার বর্গ ফুটের একটি বিচারালয়। এছাড়া এখানে লাইব্রেরী এবং সৈন্যদের ব্যারাক ও ছিলো। পেত্রা’র মূল আকর্ষন হল ‘খাজানাতে ফেরাউন’ মন্দির। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো একে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ ঘোষণা করে। এর চার বছর পর ১৯৮৯ সালে পেত্রা ন্যাশনাল ট্রাস্ট গঠন করা হয়। ২০০৭ সালে পেত্রাকে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে নতিভুক্ত করা হয়।
মাচু পিচু
মাচু পিচু’র সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
অবস্থিত — কাসকো অঞ্চল, উরুবাবা প্রদেশ, মাচুপিচু জেলা
দেশ — পেরু রিপাবলিক
তৈরী হয়েছিল — ১৪৫০-১৪৬০ সালে নির্মাণ শুরু হবে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে,
কে বা কারা তৈরী করেছিলেন — ইনকা সম্রাট পচকট্টি
তৈরীর কারণ — মাচু পিচু ছিল – ইনকা সভ্যতার একটি ধর্মীয় স্থান
দক্ষিণ আমেরিকার জন্য অন্যতম প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র ও পেরুর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান এটাই। এটি কোস্কো থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার উচ্চতার পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এটি দুই পাহাড়ের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ১৯১১ সালে ইনকা সভ্যতার নিদর্শন মাচু পিচুর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন এবং এটিকে বিশ্বের নজরে তুলে ধরেন। মার্কিন প্রত্নতত্ত্ববিদ হিরাম বিংহ্যাম। তিনি এর নাম দেন ইনকাদের হারানো শহর। মাচু পিচুর আশপাশের ৩২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ১৯৮১ সালে পেরুর সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা ঘোষণা করা হয়। পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকার ওপর সুরক্ষিত পর্বতচূড়ায় এটি অবস্থিত। তাই বিভিন্ন সময় এই স্থানে পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা যায়।
১৪৫০ সালে ইনকা সভ্যতার স্বর্ণযুগে মাচু পিচু নির্মিত হয়। ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য এই স্থান ছিল ইনকা সম্রাট পাচাকুতিকের অবকাশযাপন কেন্দ্র। তবে শহরের সব অধিবাসী গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি পরিত্যক্ত হয়। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা ৭ হাজার ৮৭৫ ফুট। ধ্রুপদী বাস্তুকলার নিদর্শন ও ইনকা সভ্যতার অনন্য স্বাক্ষর মাচু পিচুর ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ চালানো নিষিদ্ধ। মাচু পিচুকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ ঘোষণা করে এবং ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে নীতিভুক্ত করা হয়।
ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার
খ্রিস্ট রিডিমার স্ট্যাচু এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
অবস্থিত — করকোভাডো পর্বত, রিও ডি জেনিরো
দেশ — ব্রাজিল
তৈরী হয়েছিল — ১৯২২-৩১ খ্রিস্টাব্দে
উচ্চতা — ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট, বেদি সহ উচ্চতা ৩৮ মিটার বা ১২৫ ফুট,
কে বা কারা তৈরী করেছিলেন — ভাস্কর পল ল্যান্ডোভস্কি ডিজাইন করেছেন এবং অ্যালবার্ট কাকোটের সহযোগিতায় ইঞ্জিনিয়ার হিটার দা সিলভা কোস্টা নির্মিত। ভাস্কর ঘেরোগে লিওনিদা মুখ তৈরি করেছিলেন.
তৈরীর কারণ — ব্রাজিলের পেড্রো শাসকের কন্যা রাজকুমারী ইসাবেলের স্মৃতিতে এই মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে.
ব্রাজিলের রিও ডি জানেইরো দক্ষিণ অংশে শহরে রয়েছে ১৩০ ফুট উঁচু যীশুখ্রিস্টের বিখ্যাত মূর্তি ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার। ১৩০ ফুট উঁচু যীশুখ্রিস্টের বিখ্যাত মূর্তি ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়েছে যীশু। তার এক হাত থেকে অন্য হাতের দূরত্ব দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার বা ৯২ ফুট। এর মোট ওজন ৬৩৫ মেট্রিক টন। কংক্রিট ও শ্বেতপাথর দিয়ে আলাদাভাবে বিভিন্ন অংশ তৈরি করে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে জোড়া দেওয়ার পর দাঁড়িয়েছে বিশালাকার এই মূর্তি। এর ভাস্কর ফ্রান্সের পল ল্যান্ডোস্কি। মূর্তিটির ওজন ৬৩৫ মেট্রিক টন। এজন্য খরচ হয় ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। ১৯২১ সালে ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারক্রাইস্ট দ্য রিডিমার তৈরীর কাজ শুরু করা হয়। এই মূর্তিটির প্রধান নির্মাতা ভাস্কর পল ল্যান্ডোস্কি। ১৯৩১ সালে এটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে ১১ অক্টোবর এর উদ্বোধন হয়। পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের শতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্দেশ্যে ৭ই জুলাই ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়।
রিও ডি জানেইরো তিজুকা ন্যাশনাল পার্কে করকোভাদো পাহাড়ের চূড়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই মূর্তি। ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার ব্রাজিলের ঐতিহাসিক জাতীয় ঐতিহ্য। ২০০২ সালে পর্যটকরা চাইলে পাহাড়ে যুক্ত করা ২২০ তলা পর্যন্ত লিফটে চড়ে ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারকে ওপর থেকে দেখতে পারে। যীশুখ্রিস্টের এই মূর্তি দেখতে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ পর্যটক ব্রাজিলে যায়।
গ্রেট ওয়াল অব চায়না
চীনের মহান প্রাচীরের সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
অবস্থিত — পূর্ব থেকে পশ্চিমে উত্তর চীন জুড়ে বিস্তৃত,
দেশ — চীন,
তৈরী হয়েছিল — খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এবং ১৬ শতাব্দীতে শেষ হয়েছিল.
দৈঘ্য — ২১,১৯৬ কিঃমিঃ (১৩,১৭১ মাইল)
কে বা কারা তৈরী করেছিলেন — কিন রাজবংশ, মিং রাজবংশ,
তৈরীর কারণ — রেশম আক্রমণকারী এবং অন্যান্য উত্তর শত্রুদের এড়াতে
চীনের মহাপ্রাচীর ( The Great Wall Of China ), চীন। চীনের মহাপ্রাচীর গ্রেট ওয়াল অব চায়না। এটি হল বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে ১৬শ শতক পর্যন্ত চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষার জন্য এই প্রাচীরটি তৈরি করা হয়। অনেক রাজবংশ এই প্রাচীরটি নির্মাণে অংশগ্রহন করেছে এবং অনেক দূরবর্তী পাহাড়, মরুভূমিতে এই অনেকগুলি বিভাগে অবস্থিত। এর মোট দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার। এর দৈর্ঘ্য ২১,১৯৬ কিলোমিটার (২০১২ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি অধিদপ্তর দ্বারা ঘোষিত)। মিং রাজবংশের গ্রেট ওয়ালের দৈর্ঘ্য ৮৮৫১ কিলোমিটার এবং বেইজিংয়ের প্রায় ৫২৬ কিলোমিটার। এই প্রাচীরটির উচ্চতা প্রায় ৪ মিটার থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত (১৫ থেকে ৩০ ফুট) এবং চওড়া প্রায় ৯ মিটার এরও বেশি (৩২ ফুট)। এই প্রাচীরটিতে অনেকগুলি ওয়াচ টাওয়ার আছে যার মধ্যে ৭২৩টি বীকন টাওয়ার, ৭০৬২টি লুকানো টাওয়ার এবং ৩৩৫৭টি ওয়াল প্লাটফর্ম রয়েছে। যেখান থেকে সৈন্যরা শত্রু পক্ষের উপর নজরদারি করতো।
চীনের উত্তর সীমান্তকে মঙ্গোলীয়দের হাত থেকে রক্ষার জন্য খ্রিস্টপূর্ব ২২০-২০৬ সনে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। অনেকের ধারণা, ১০ লাখ শ্রমিক এতে কাজ করেছিল। তাদের মধ্যে ৩ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। সাধারণ মানুষ, শ্রমিক এবং সৈন্যরা এই নির্মাণে অংশোগ্রহণ করে। উপাদান হিসেবে ব্যাবহিত হয় মাটি, পাথর, কাঠ, ইট, বলি। মিং যুগেও এই প্রাচীরের অনেকাংশ নির্মাণ হয়। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো এই স্থাপনাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে। ২০০৭ সালে এই প্রাচীর বিশ্বের নতুন সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার পর্যটক ‘গ্রেট ওয়াল অব চায়না’ ঘুরে দেখে এবং পরিদর্শনের সময়, গ্রীষ্মকালে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত এবং শীতকালে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত।
কলোসিয়াম
কলোসিয়াম এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
অবস্থিত — রোমে
দেশ — ইতালি
তৈরী হয়েছিল – ৭০-৮০ খ্রিস্টাব্দে
কে বা কারা তৈরী করেছিলেন — সম্রাট ভেসপাসিয়ান, সম্রাট টিটুস
তৈরীর কারণ — সাধারণত গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিযোগিতা এবং জনসাধারণের উদ্দেশ্যে কোন প্রদর্শনীর জন্য
দ্য রোমান কলোসিয়াম (The Roman Colosseum) রোম, ইতালি। ইতালির রোম শহরে অবস্থিত একটি বৃহৎ ছাদবিহীন মঞ্চ। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা স্তম্ভগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এতে রয়েছে রোমান প্রকৌশলের চোখধাঁধানো নৈপুণ্য। এটি সাধারণত বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং কোনো প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
৭০ থেকে ৭২ খ্রিস্টাব্দের মাসে কোনো এক সময় এটি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। ৮০ খিস্টাব্দে সম্রাট তিতুসের রাজত্ব কালে এটি সম্পন্ন হয় কলোসিয়াম। এর মূল এলাকা ছয় একর। এর উচ্চতা ৪৮ মিটার, দৈর্ঘ্য ১৮৮মিটার এবং চওড়া ১৫৬ মিটার। আর প্রত্যেক তলায় ৮০টি করে তিনটি লেভেলে মোট ২৪০টি আর্চ আছে। এটি প্রস্তুত করা হয়েছে পাথর, কাঠ, মাটি, বলি ইট, ইত্যাদি দিয়ে। এখানে লোক ধারন ক্ষমতা প্রায় ৫০ হাজার। ইতিহাসবিদরা জানান, কলোসিয়ামে উদ্বোধনের সময় হাতি, গণ্ডার, সিংহ, ভাল্লুক, বুনো মহিষসহ ৯ হাজার প্রাণীকে হত্যা করা হয়। বছরে প্রায় ৪০ লাখ ভ্রমণপিপাসু কলোসিয়াম ভ্রমণে আসে।
মধ্যযুগে বেশ কিছুবার ভূমিকম্পের ফলে এর বেশিরভাগ অংশ ধংস হয়ে যায়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এম্পিথিয়েটারের যা গ্রিনেস ওয়ার্ল্ড রেকড ধরে রেখেছে। এই এম্পিথিয়েটারের মূল আকর্ষণ ছিল গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধ এবং হিংস পশুর লড়াই। আর গ্রাউন লেভেলে এই কলোসিয়াম পরিদর্শনে। কলোসিয়ামকলোসিয়াম ২১৭ খ্রিষ্টাব্দে অগ্নিকাণ্ডে ভবনটির ক্ষতি হয়। এরপর ৪৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ও ১৩৪৯ খ্রিষ্টাব্দে দু’বার ভূমিকম্পে প্রায় ধ্বংস হতে বসে এই স্থাপনা। ষষ্ঠ শতকে এটি রূপান্তরিত হয় সমাধিক্ষেত্রে। দ্বাদশ শতকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক আবাসন হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয় ভবনটি। ত্রয়োদশ শতকে এটি হয়ে ওঠে দুর্গ। চারতলা বিশিষ্ট বৃত্তাকার ছাদবিহীন কলোসিয়ামের নির্মাণশৈলী বিস্মিত করে সবাইকে।
ইউনেস্কো ১৯৯০ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলের স্বীকৃতি দেয়। ২০০৭ সালে একে বিশ্বের সপ্তমশ্চর্যের মধ্যে একটি বলে নির্বাচিত করা হয়।
চিচেন ইৎজা
চিচেন ইৎজা এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
অর্থ — চিচেন ইৎজা শব্দের অর্থ ‘কুয়ায় যাওয়ার মুখ’
অবস্থিত — মেক্সিকোর ইউকাতান রাজ্যের তিনুম পৌরসভায় অবস্থিত
দেশ — মেক্সিকো
তৈরী হয়েছিল — আনুমানিক ৬০০AD – ৯০০ খ্রিস্টাব্দে
কে বা কারা তৈরী করেছিলেন — মায়া-টলটেক সভ্যতা
তৈরীর কারণ — চিচেন ইৎজা ছিল মায়া সভ্যতার প্রবিত্র মন্দির, মনে করা হয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য মায়ানরা এই মন্দির তৈরী করে ছিলেন.
চিচেন ইৎজা মেক্সিকোর উত্তরে ইউকাটান উপদ্বীপে অবস্থিত মায়া সভ্যতার একটি বড় শহর। এই শহরটির আয়োতন ছিল ১০০ বর্গ কিলোমিটার। মেক্সিকোতে পর্যটকদের সবচেয়ে প্রিয় দর্শনীয় স্থানের তালিকায় চিচেন ইৎজার নাম থাকে সবার ওপরে। চিচেন ইৎজার আক্ষরিক অর্থ হলো ‘ইৎজার কুয়োর মুখে’। সুপেয় জলের কূপগুলোর জন্যই প্রাচীন মেক্সিকানরা এখানে বসতি স্থাপন করে। এই শহরটিতে প্রায় ৫০,০০০ এরও বেশি মানুষ বাস করতো। এই স্থাপত্য দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো। এই পিরামিডটি মূলত সূর্য দেবতার মন্দির হিসেবে পরিচিত ছিল। এর চারদিকে আছে চমৎকার ৯১টা করে সিঁড়ির ধাপ রয়েছে এবং সব মিলিয়ে মোট ৩৬৫টি সিঁড়ির ধাপ আছে। অনুমান করা হয় প্রায় ১৪০০ বছর আগে ৬০০ সালে এটি নির্মাণ করা হয়।
শিখরে দেখা যায় চৌকো ঘর। বর্তমানে এটি মেক্সিকোর রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দেশটির ইতিহাস ও নৃতত্ত্ব ইনস্টিটিউট এর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। মেক্সিকোর ইউকাতান রাজ্যের তিনুম মিউনিসিপ্যালিটির অন্তর্ভুক্ত এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ১৯৮৮ সালে এটি ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ ঘোষণা করে ইউনেস্কো। ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চার্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চিচেন ইৎজা দেখতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক যায়।
তাজমহল
তাজমহল এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
অবস্থিত — উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরে
দেশ — ভারত
তৈরী হয়েছিল – ১৬৩২-১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে
উচ্চতা — সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৭১ মিটার বা ৫৬১ফুট
কে বা কারা তৈরী করেছিলেন — মুঘল সম্রাট শাহজাহান
তৈরীর কারণ — মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন.
তাজমহল উত্তর প্রদেশের আগ্রায় যমুনা নদীর দক্ষীণ তীরে অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার পত্নী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মুমতাজ মহল নামে পরিচিত। সেই বেগম মমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। যার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিলো ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে এবং সম্পন্ন হয় ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে। এটির প্রধান নির্মাতা ছিলেন উস্তাদ আহমেদ লাহৌরি। এটি নির্মাণ কাজে প্রায় ২২ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল এবং খরচ হয়েছিল প্রায় ৩২ মিলিয়ন টাকা, যা বর্তমানে ৫২.৮ বিলিয়ন (২০১৫)।
মমতাজ মহলের প্রকৃত সমাধিতে ক্যালিগ্রাফিক শিলালিপি হিসেবে আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে। ১৪তম সন্তান জন্মদানের সময় ইন্তেকাল করেন মমতাজ মহল। দামী দামী রত্ন যেমন সাদা প্রবাল, অনিক্স, কর্নেলিয়া, নিলা, লাপিজ লাজুলি, সাদা মার্বেল দিয়ে বানানো তাজমহল পূর্ণিমার আলোয় মুক্তার মতো ঝলমল করে। তাজমহলে ঢোকার প্রধান ফটক বা দরজাও তৈরি হয়েছে মার্বেল পাথরে। তাজমহলের উচ্চতা ২১৩ ফুট। এর চারটি মিনারের প্রতিটির উচ্চতা ১৬২ দশমিক ৫ ফুট। নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর এবং ব্যবহৃত মালামাল ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এক হাজার হাতি দিয়ে আনা হয়। তাজমহল নির্মাণের জন্য নদীর পাড় থেকে ৩ একর জায়গা ১৬০ ফুট উঁচু করা হয়। তাজমহলের সামনের চত্বরে ৩ হাজার ২২৯ বর্গফুট জায়গায় ১৬টি ফুলের বাগান রয়েছে। তাজমহলের গম্বুজগুলো মনোমুগ্ধকর। মূল গম্বুজের দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট। সূর্যোদয়ের সময়ে গম্বুজের সাদা মার্বেল গোলাপি আভা ছড়ায়।
১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের সিপাহী বিপ্লবের সময় ইংরেজ সৈন্যরা তাজমহলের বিকৃতি সাধন করে। এই সময় সরকারী কর্মচারীরা বাটালি দিয়ে তাজমহলের দেয়াল থেকে মূল্যবান পাথর, বিশেষ করে দামী নীলকান্তমণি খুলে নেয়। ১৯৪২ সালে যুদ্ধের সময় হামলার আশঙ্কায়, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাজমহল রক্ষার জন্য এর উপর একটি ভারা তৈরি করেছিল। ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধের সময়ও বিমান চালকদের দৃষ্টিভ্রম ঘটানোর জন্য তাজমহলকে ভারা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। বায়ুদূষণকারী যানবাহন চলাচল সেখানে নিষিদ্ধ। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো তাজমহলকে বিশ্ব ঐতিয্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকা ভুক্তকরে এবং ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়।
You must be logged in to post a comment.