মুকুল কান্তি দাশ; চকরিয়া :
চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে চকরিয়ার উপকূলীয় ৬ ইউনিয়নে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছে। গত ৭০ বছরেও এ রকম নির্বাচন অনুষ্টিত হয়নি বলে বিভিন্ন ভোটাররা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। পশ্চিম বড় ভেওলার বাসিন্দা ৮৬ বছর বয়সী কবির আহমদ বলেন, বৃটিশ আমলে আমার জন্ম। পাকিস্তান আমল থেকে আমি ভোট দিয়ে আসছি। এবারের মতো নিরপেক্ষ ভোট বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখিনি। ওই ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম দরবেশকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগ করতে এসে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুরুপভাবে বদরখালীর বৃদ্ধা ছায়রা খাতুন ও কোনখালীর চাকুরিজীবি আলী আকবরের বক্তব্য ও অভিন্ন। এমনকি বিকাল ৪টার পর ভোট প্রয়োগ শেষে পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নে বিএনপির মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হেফাজতুর রহমান টিপু নিজের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন আশাতীত নিরপেক্ষ ভোট হয়েছে। যেকোন ফলাফল আমি মেনে নেব।
শনিবার ৭মে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় চতুর্থ দফায় অনুষ্টিত উপকূলীয় ৬টি ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নির্বাচনের পূর্বে প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নানা শংকা থাকলেও ভোট হয়েছে অবাধ ও নজিরবিহীন শান্তিময় নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচনের দৃশ্য দেখে অনেকেই বলেন, সরকার চাইলে প্রশাসন নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে তার প্রমাণ চকরিয়ায় ৭ মে ৬ ইউনিয়নে ও ২৩ এপ্রিল ১২ ইউনিয়নে অনুষ্টিত নির্বাচন। এই নির্বাচন পুরো দেশের জন্য মড়েল হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করে স্থানীয় ভোটাররা জানায় এই রকম নির্বাচন হলে শুধু প্রশাসন নয় নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে।
অনিুষ্টিত নির্বাচনে কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে ভোটাররা দীর্ঘ লাইন ধরে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রয়োগ করেন। প্রতিটি কেন্দ্রে পুরুষের ছেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল নজর কাড়ার মতো। ৬ ইউনিয়নে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ভোট প্রয়োগ হয়েছে।
নির্বাচনের আগের দিন বক্তব্য দেয়া নির্বাচন সমন্বয়ক চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কক্সবাজার সদর সার্কেল) মো. মাসুদ আলম ভোট গ্রহণ শেষে বলেন, আমরা কথা দিয়েছিলাম জনগণকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ ভোট উপহার দেব। র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসারসহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সহায়তায় সে কথা রাখতে পেরেছি। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। এসময় ৬ ইউনিয়নের ৫৪টি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। অনুষ্টিত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ২জন, বিএনপির ২জন ও স্বতন্ত্র ২জন চেয়ারম্যান বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা কন্ট্রোল রুম সুত্র জানায়, বেসরকারীভাবে ৬ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে- পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী সিারজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা (প্রাপ্ত ভোট- ২১০৬), নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাহাবউদ্দিনের (প্রাপ্ত ভোট ১৯৭৭)।
কোণাখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনিত দিদারুল হক সিকদার (প্রাপ্ত ভোট-২৩৮৮) তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোক্তার হোসাইন (ভোট পেয়েছেন-২৩৩১)।
ঢেমুশিয়া ইউনিয়নে বিএনপি’র নুরুল আলম জিকু (প্রাপ্ত ভোট- ২৪৭৮) তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওমীলীগের রুস্তম আলী (প্রাপ্ত ভোট-২০৫৫)।
পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নে আনোয়ারুল আরিফ দুলাল (প্রাপ্ত ভোট- ৭৩৪০) তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওমীলীগে খলিল উল্লাহ চৌধুরী (প্রাপ্ত ভোট- ৩৮২৮)।
বিএমচর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর আলম (প্রাপ্ত ভোট- ৫২২৭) তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগের বদিউল আলম (প্রাপ্ত ভোট-৪০১২) বেসরকারীভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
বদরখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী খাইরুল বশরন(প্রাপ্ত ভোট-৪২১৩) তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র আ.ন.ম হেফাজ সিকদার (প্রাপ্ত ভোট-৪১৬৭)। ভোটের হিসেবে বদরখালী, কোণাখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা ও ঢেমুশিয়ায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়।
You must be logged in to post a comment.